Mahfuzur Rahman Manik
'গ্রেড' নয়, আপনিই বড়

Life-Valuable'ইউ আর নট ইউর মার্কস!' শিরোনামে বিবিসি ট্রেন্ডিংয়ে ৩০ মের প্রতিবেদনটি ভারতের কৌতুক অভিনেতা বীর দাসের একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত। ইউটিউবে তার 'অন ইউর মার্কস' নামের ভিডিওটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। আসলে ভিডিওটি তিনি এমন সময়ে প্রকাশ করেন যখন ভারতে একটি পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। যেখানে দেখানো হয়েছে, পরীক্ষার ফল তেমন কিছু নয়। বীর দাস বরং তিন মিনিটের ভিডিওতে জীবনের অনেক কিছু দেখিয়েছেন। স্বপ্ন, মা-বাবা, মানুষ, যুদ্ধ, ভালোবাসা ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে ভিডিওটি আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। সম্প্রতি আমাদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এ পরীক্ষায় অনেকে জিপিএ ৫ পায়নি বলে কষ্ট পেয়েছে। আবার ১৩ ভাগ শিক্ষার্থী যাদের বলা হচ্ছে 'অকৃতকার্য', তাদের মনও ভালো থাকার কথা নয়। আর ফল নিয়ে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে খবর সবার মন খারাপ করে দেয় তা হলো, জিপিএ ৫ না পেয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা। যদিও তা ব্যতিক্রম ঘটনা।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমরা সবাই ভালো ফলের পেছনে দৌড়াচ্ছি। জিপিএ ৫, গোল্ডেন ৫ যে সবার চাই। অভিভাবক তার সন্তানের জন্য চান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীর জন্যও তা-ই চান। শিক্ষার্থীদের সে মতেই দৌড়াতে হয়। এ প্রতিযোগিতায় দৌড়াতে গিয়ে হয়তো অনেক সময় নিজেকেই ভুলে যায়। তখন মনে হয় এ প্লাস ছাড়া জীবন তুচ্ছ। সেখানে এফ গ্রেডের কথা আর কী-ইবা বলার আছে!
অথচ জীবন তো কেবল একটা ভালো গ্রেড নয়। পরীক্ষার ফল জীবনের একটা সাধারণ অনুষঙ্গ মাত্র। এর চেয়ে বরং ভালো অনুষঙ্গ প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনকে সজীব রাখে। ভোরের সি্নগ্ধ বাতাসের অনুভূতি ব্যক্ত করার মতো নয়। নদীর পাড়ের শীতল হাওয়া হৃদয়কে আলোড়িত না করে পারে না। বৃষ্টিতে ভেজার লোভ কয়জন সামলাতে পারে? শীতের রোদের সতেজতার অনুভব অসাধারণ। শিশুর নির্মল হাসিতে যে কারও বেদনা হারিয়ে যাবে। আর মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, বাবার সোহাগের কাছে দুনিয়ার কোনো কিছুর তুলনা করা চলে না। এসবের চেয়েও পরীক্ষার 'গ্রেড' বড় হয় কী করে!
doors-of-success-are-welcomeভালো গ্রেড না পেয়েও অনেকে ভালো করছে। পরীক্ষায় ফেল করা সফল মানুষের উদাহরণ হয়তো আপনার চোখের সামনেই রয়েছে ভূরি ভূরি। সেখানে জিপিএ ৫ তো দূরের বিষয়। এটা হয়তো অস্বীকার করা যাবে না, জীবনের জন্যই সবার শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। সেখানে আসলে শেখাটাই বড় কথা। কখনোই গ্রেড হওয়া উচিত নয়। অনেকে হয়তো চেষ্টা করেন, ভালোও করেন। আবার অনেকের চেষ্টা করেও হয় না। তাই বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আরেকজন কত ভালো করল, তার তুলনা করা কিংবা তার মতো হতে যাওয়া আসলে বোকামি। তা আপনার কষ্ট বরং বাড়াবে। প্রত্যেকের নিজস্বতা থাকা প্রয়োজন। কার জীবনে কখন সফলতা আসবে কেউ জানে না। আর এসএসসি-এইচএসসির ফল তো অনেক ছোট বিষয়; জীবনের শুরুর সময় বলা যায়। এমনকি ভালো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে না পারলে, কিংবা চাকরিতে দ্রুত সফলতা না পেলেও হাল ছেড়ে দেওয়ার মানে হয় না।
আর আমাদের পরিমাপের সবচেয়ে বড় ও স্বীকৃত মাধ্যম যে পরীক্ষা। ছোটবেলা থেকেই পরীক্ষার মাধ্যমে যে মেধা নির্ণয় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ে যে পরীক্ষা রয়েছে, তা নিয়েও কম বিতর্ক নেই। যদিও জীবনের কাছে এটা ক্ষুদ্র বিষয়। আসলে জীবন যে এর চেয়েও বড়। অনেক বড়।

ট্যাগঃ , , , , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।