আজ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবসের আগের দিন সোমবার শুধু সমকালেই হত্যা, আত্মহত্যাসহ নারীর প্রতি সহিংসতার সাতটি খবর ও খবরের ফলোআপ প্রকাশ হয়। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে স্ত্রীর আত্মহত্যা কিংবা গৃহবধূকে হত্যাচেষ্টায় গ্রেফতার_ সহিংসতার দিক থেকে প্রত্যেকটাই ভয়াবহ। এসব অনুধাবনের চেষ্টা আসলে বৃথা। একজন মানুষ কীভাবে আরেকজনকে নির্যাতন করতে পারে, এমন নির্যাতনে যা শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে? অন্যায়ভাবে নারীর ওপর এসব নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কেউই এসব না চাইলেও ঘটছে। কালকের একটি পত্রিকায় সাতটি খবর পাওয়া গেছে। আজও হয়তো আমাদের গুনতে বসতে হবে_ কয়টা নির্যাতন হলো। হোক না আজকের দিনটাই এই সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস। যারা এসব করছে, তারা কতটা মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চলেছে, তা তাদের না জানার কথা নয়।
পুরুষ কথায় কথায় নারীর গায়ে হাত তুলছে, তথাকথিত প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিকাকে এসিড মারছে, স্বামী স্ত্রীকে গলা কেটে মেরে ফেলতে চাইছে; যেখানে নারী এসব সহ্য করে যাচ্ছেন। হয়তো কেউ কেউ সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। এমন নির্মম কাজ করেও দিব্যি আইনের ফাঁক গলিয়ে কোনো কোনো পুরুষ বেরিয়ে আসছে। সেখানে আমাদের স্বপ্ন দেখতেও কষ্ট হয়। নির্যাতিত মা-বোনদের প্রবোধ দেওয়ার ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
ভাবতেও কষ্ট হয়_ নারী আজ আমাদের উন্নয়নের গর্বিত অংশীদার। যাদের শ্রমে-ঘামে তৈরি পোশাক খাত আমাদের প্রধান রফতানি শিল্প। যে নারী ঘরে-বাইরে, দেশ-বিদেশে সমানভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রেখে চলেছেন, সে নারীই আজ নির্যাতিত। এখানে বয়সের কোনো ভেদরেখা নেই। গত সেপ্টেম্বরে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে সবাই জেনেছে, বিশ্বে প্রতি ১০ জনে একজন মেয়ে ১৯ বছর বয়স অতিক্রম করার আগেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। আর দক্ষিণ এশিয়ায় কিশোরী নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। এখানে প্রায় প্রতি দু'জনের একজন তথা ৪৭ শতাংশ বিবাহিত কিশোরী স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নির্যাতিত হয় এবং নির্যাতনের হারের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
এর বিরুদ্ধে যে আমাদের জেগে ওঠা দরকার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নারীর সম্মান-মর্যাদার কথা বিশ্বজনীন। তাদের সম্মান-মর্যাদা নিশ্চিতে একটা সামাজিক আন্দোলন যেমন দরকার, তেমনি কিশোর-তরুণ-তরুণীদের বিশেষ প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। যেখানে সমাজ তার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সেখানে প্রত্যেকের আত্মরক্ষার ব্যবস্থা তাকেই করতে হবে। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর শিক্ষাটা আরও জরুরি।
হতাশার মধ্যেও আমরা স্বপ্ন দেখি_ অবস্থার পরিবর্তন হবে। এসব আন্তর্জাতিক দিবসের মাধ্যমে, সংবাদমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণায় মানুষের মাঝে সচেতনতা আসবে। পুরুষ তার সঙ্গীকে ভালোবাসতে শিখবে। সেটা সমাজের জন্য যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি মানবতার জন্যও।