Mahfuzur Rahman Manik
পাসওয়ার্ড-সুরক্ষিত জগৎ
নভেম্বর 12, 2014

Passwordইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষের এখন বাস্তব ও ভার্চুয়াল দুটি জগৎ। বাস্তবে মানুষ সুরক্ষার জন্য ঘর বানায়, তালা লাগায়; নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্র নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করে। আর ভার্চুয়াল জগৎ বা অনলাইনে নিরাপত্তার মাধ্যম পাসওয়ার্ড। এখানে ফেসবুক-মেইল, অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ সাইট বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ওয়েবসাইটে নিজস্ব ভুবনে প্রবেশ করতে গেলেই এই পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রয়োজন হয় ইউজারনেমের। অবশ্য ইউজারনেম যে কেউ জানতে পারে; তবে কয়েকটি অক্ষর বা শব্দের সমষ্টি পাসওয়ার্ড কিন্তু ব্যক্তি ছাড়া আর কারও জানার সুযোগ নেই। এগুলোই আপনাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে, এর সুরক্ষার দায়িত্বও আপনার। ৫ নভেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের টেকনোলজিতে প্রকাশিত 'অগমেন্টিং ইউর পাসওয়ার্ড-প্রটেক্টেড ওয়ার্ল্ড' শিরোনামের প্রতিবেদনটি এই পাসওয়ার্ড সুরক্ষার কথাই বলছে।
প্রিয়জনের সঙ্গে ফেসবুকে আদান-প্রদান করা ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য যাতে ফাঁস না হয়ে যায় কিংবা মেইলে থাকা জনগুরুত্বপূর্ণ নথি যেন হাতছাড়া না হয়, তার নিশ্চয়তার জন্য পাসওয়ার্ড সুরক্ষার প্রয়োজন। আপনার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট কিংবা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা পাসওয়ার্ডই দিচ্ছে। এমনকি আগে ব্যাংকে চেক দিয়ে টাকা উঠাতে লাইনে দাঁড়ানোর পরিবর্তে আজকে যে এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা উঠাচ্ছেন তাও কিন্তু পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেট। এই পাসওয়ার্ড ও কার্ড অন্যের হাতে চলে যাওয়ার মানে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হাল আমলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের টাকাও মোবাইলে পাসওয়ার্ডের মাধ্যমেই সুরক্ষিত রাখা হয়। পাসওয়ার্ড যখন ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্টদের বাইরে চলে যায় প্রযুক্তির ভাষায় আমরা তাকে বলছি 'হ্যাক' হওয়া। 'হ্যাক' হলে ব্যক্তির আর তার অ্যাকাউন্ট বা ওয়েবসাইটের ওপর কর্তৃত্ব থাকে না। এটাকে বাস্তব জগতের 'ডাকাতি'র মতো বলা যায়। আর কারও পাসওয়ার্ড অন্যে জেনে গিয়ে ব্যক্তির অগোচরে ব্যবহার করলে তা চুরি। নিরাপত্তাজনিত এই দুই সমস্যা যেমন সমাজে দেখা যায়, তেমনি ভার্চুয়াল জগতেও কম নয়।
মানুষ যেখানে তার নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি পেয়েছে সেখানেই তার সুরক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আগে মানুষ মাটির ঘর করত, এখন সবাই ঝুঁকছেন সামর্থ্যানুযায়ী পাকা দালানে, এটা তার নিরাপত্তার জন্যই। একই সঙ্গে ভার্চুয়াল জগতেও পাসওয়ার্ডের বাইরে নিরাপত্তার জন্য আর কিছু করা যায় কিনা, তা নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। সে খবরও দিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটি। শরীরের কোনো অংশ যেমন ব্যক্তির গলার স্বর, আঙুলের ছাপ, অবয়ব বা চোখের ইশারার মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় কিনা সে কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই পদ্ধতিকে বলছে বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি সিস্টেম। আইফোনের সাম্প্রতিক সংস্করণে আঙুলের স্পর্শের সাহায্যে লক খোলা তারই প্রাথমিক ধাপ। তবে প্রতিবেদনটি বলছে, পাসওয়ার্ডের বিষয়টা কিন্তু এখনও সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া অসম্ভব।
মানুষ অবশ্য সবকিছুতে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত। নতুন যা-ই আসুক তা সবাই গ্রহণ করছে। প্রযুক্তি মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্যই নিরলস কাজ করছে। আজকে ইন্টারনেটে মানুষের বিশাল জগৎ হয়ে গেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাস্তব জগতের মতো এখানের সুরক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে ব্যক্তির যে কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এজন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়া এবং সময়ে সময়ে তা পরিবর্তনও জরুরি।
নামে ভার্চুয়াল হলেও আসলে এ তো আলাদা কোনো জগৎ নয়, বাস্তব জীবনেরই এক অপরিহার্য অংশ।

 

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।