Mahfuzur Rahman Manik
আমলাতন্ত্রের জট খুলতে...
সেপ্টেম্বর 15, 2014

Facebookফেসবুক ব্যবহারে নানা বিড়ম্বনার বিষয়টি ব্যবহারকারী মাত্রই জানেন। বাসায় ফেসবুক ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি, অফিসে নিষেধাজ্ঞা, অভিভাবক-বসের নজরদারি, শিক্ষকদের খবরদারি ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন প্রতিনিয়ত হতে হয় অনেককে। এরপরও নানা ফাঁকফোকরে দিব্যি ফেসবুক ব্যবহার করেন সবাই। ফেসবুকের মজা যে বুঝেছে তাকে সত্যি এ থেকে নিবৃত্ত করা কঠিন! স্ট্যাটাস দেওয়ার পর কিংবা ছবি শেয়ারের পর একটা একটা লাইক গোনা, কমেন্টের জবাব দেওয়ার অনুভূতি বোঝানোর মতো নয়। পরিচিতজনের খবর ছবিসহ পাওয়ার এত সহজ উপায় যে আর নেই। নিজেকে তুলে ধরার, মত প্রকাশের, অন্যের সঙ্গে অনায়াস যোগাযোগের মাধ্যমটি ফেসবুক ছাড়া আর কী? মোবাইলে ইন্টারনেট সহজতর হওয়ার পর আমাদের দেশে ফেসবুক বেশি ছড়িয়েছে। এখানে বয়সের ভেদবিচার নেই। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের ফেসবুক আইডিও ইদানীং দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকের এই জোয়ারেও যখন অনেককে তা ব্যবহারে ঝামেলা পোহাতে হয় ঠিক সে সময়ই একটা খবর অন্তত 'স্বস্তি'র বিষয় হতে পারে। সম্প্রতি আমাদের সচিবদের ফেসবুকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সচিব সভা থেকে বলা হয়, নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি সচিবদের ফেসবুক গ্রুপে প্রশাসনিক বিভিন্ন সমস্যা ও তা সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন সচিবরা। এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রশাসনের সব কর্মকর্তাকে ফেসবুকে অন্তর্ভুক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে প্রশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এ নির্দেশ আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখতে চাই। কাজের ক্ষেত্রের দিক থেকে এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অন্য মন্ত্রণালয় আন্তঃসম্পর্কিত। ফেসবুকে সচিবরা সক্রিয় হলে এবং অভ্যন্তরীণভাবে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ থাকলে বোঝাপড়ার মাধ্যমে যে কোনো কাজ সহজে করা সম্ভব। অন্তত 'আমলাতান্ত্রিক জটিলতা' বলে যে কথা প্রচলিত আছে তার কিছুটা হলেও অবসান এর মাধ্যমে হতে পারে। তবে কেবল প্রশাসনিক কাজের সমস্যা সমাধানই নয়, বাস্তবে জনগণ যেন যথাসময়ে সেবা পায় তাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায় একই ব্যক্তিকে একটি কাজের জন্য আন্তঃসম্পর্কিত নানা মন্ত্রণালয়ে দৌড়াতে হয়। একেক মন্ত্রণালয় দীর্ঘ সময় ফাইল আটকে রাখে। এই ফাইলজট থেকে মুক্তিসহ এরকম নানা সমস্যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানও ফেসবুক গ্রুপে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে হলে মানুষ এর সুফল পাবে।
Digital-Bangladeshতবে বলা বাহুল্য যে, ফেসবুকের ব্যবহারে খুব সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। নিরাপত্তার বিষয় যতটা মাথায় রাখতে হবে তার চেয়ে বড় বিষয় হলো সময়। ফেসবুক যে অনেকটা নেশার মতো! অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকে সময় দেন; কাজের চেয়ে অকাজেই সময় নষ্ট হয় কারও কারও। এজন্য অধিকাংশ করপোরেট হাউসসহ অনেক অফিসেই ফেসবুক ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে এটা ঠিক, ফেসুবক আসক্তদের অধিকাংশই বলা চলে তরুণ-তরুণী। আমাদের দেশে সচিব পর্যায়ের এবং এ বয়সের অনেকের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট নাও থাকতে পারে। এ নির্দেশের মাধ্যমে তারা ফেসবুকে সক্রিয় হবেন, একই সঙ্গে তাদের দ্বারা এ নির্দেশনা যথাযথভাবে কার্যকর হবে বলেই আশা করা যায়। তবে এটাও বলা দরকার, প্রশাসনিক কাজে ফেসবুকের পাশাপাশি ই-মেইলেও সক্রিয়তা প্রয়োজন। সরকারি মন্ত্রণালয় ও অফিসের ওয়েবসাইটে কর্মকর্তাদের ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া আছে। সেখানে কেউ মেইল করে যাতে তার সমস্যা সমাধান করতে পারে তাও দেখা দরকার।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।