বৈশাখ দরজায় কড়া নাড়ছে। বাংলা নববর্ষবরণ করতে চলছে জোর প্রস্তুতি। সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যেই নানা আয়োজন দেখছি আমরা। এ যে বাঙালির প্রাণের উৎসব। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে মানুষ যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে মেতে ওঠে তা দেখার মতো।
প্রতিটি উৎসব, আনন্দের উপলক্ষ মানুষ তার প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চায়। একত্রে কাটাতে চায়। প্রিয় মানুষ, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব দূরে থাকলেও তাদের নিমন্ত্রণ করেন। নিমন্ত্রণের সাধারণ ও প্রচলিত মাধ্যমটা বলা চলে কার্ড। বিয়ের কার্ড, ঈদকার্ড, নববর্ষের কার্ডসহ নানা উৎসবে নানা রকম কার্ড উপহার দেয় একে অপরকে। এ কার্ড আগে প্রধানত হাতে হাতে পাঠানো হতো। এখনও সে প্রচলন আছে, তবে ইন্টারনেটের বদৌলতে ফেসবুক কিংবা মেইলেই অনেকে তা পাঠিয়ে থাকেন। যে যেভাবেই দিক সবাই চান তার কার্ডটা সুন্দর হোক। দেখেই যাতে প্রাপক সেটা পছন্দ করেন। কার্ড দোকান থেকে কিনলে নানা যাচাই-বাছাই করে মনোনীত করেন। আবার ইন্টারনেটের হাজারো ডিজাইন থেকে পছন্দেরটা বের করেন।
সাধারণ মানুষ হতে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত প্রত্যেকেই এমন দিনে নববর্ষের কার্ড বিতরণ করেন। এসব কার্ড কোত্থেকে আসে, কারা এত সুন্দর ডিজাইন করেন, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। তবে সম্প্রতি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্ডের খবর জানা গেল। ২ এপ্রিল জাতীয় প্রতিবন্ধী ও বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে কথা বলছেন, 'প্রতিবছর আমি ঈদ বা নববর্ষের যেসব কার্ড উপহার হিসেবে দেই, সেগুলো প্রতিবন্ধী শিশুদের আঁকা।' প্রধানমন্ত্রীর এ কথা বলার মূল বিষয় অবশ্য শুভেচ্ছা কার্ড নয় বরং প্রতিবন্ধী কিংবা অটিস্টিক শিশু। তিনি বলছেন, 'মনে রাখতে হবে প্রতিবন্ধী শিশুদের মেধা রয়েছে। তা বিকশিত করার সুযোগ দিতে হবে।'
এ সুযোগ দিতে আমরা কতটা প্রস্তুত যেখানে আমাদের প্রবণতা হলো সামান্য কারণেই অন্যকে বাদ দিয়ে দেই। 'সে তো এটা পারেনি, সুতরাং তাকে দিয়ে কিছু হবে না।' যেখানে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেই আমাদের এ রকম মনোভাব, সেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতিবন্ধীদের কথা বলাই বাহুল্য। আসলে প্রত্যেক মানুষই প্রতিভাবান। একেকজনের একেক দিকে মেধা থাকে। তা খাটানোর যথাযথ সুযোগ দিতে পারলে কেবল ব্যক্তিই লাভবান হবে না, দেশও উপকৃত হবে। প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা তাদের সে সুযোগ করে দিতে পারছি না। সমাজই তাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ তারা মেধা খাটানোর সুযোগ পেলে কেবল শুভেচ্ছা কার্ড কেন, আরও নানা ধরনের সৃজনশীল কাজ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহ দেওয়া হলো, অন্যরাও উদ্যোগ গ্রহণ করতে আগ্রহী হবেন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কার্ড করা হয়। এ বছর থেকে প্রতিবন্ধীদের আঁকা তিন ধরনের ছবি কার্ড হিসেবে ছাপানোর ঘোষণাও তিনি দিয়েছেন।
এবারের বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে যখন প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডের খবর জানা গেল, তখন আমাদের কার্ডের খবরও তো জানা যেতে পারে। প্রতিবন্ধী না হোক অন্য কোনো বিশেষ প্রতিভাবানদের সন্ধানও হয়তো আমরা পেয়ে যাব। যাদের তুলির আঁচড় আমাদের আনন্দময় উৎসবকে আরেকটু উপভোগ্য করে।
- ছবি- প্রধানমন্ত্রীর ১৪২১ বঙ্গাব্দের শুভেচ্ছা কার্ডের একাংশ