প্রতিদিনই সংসদে আমাদের সাংসদরা কোনো না কোনো চমক দেখাচ্ছেন। আসলে তারা কমই ধৈর্যশীল। সাধারণত সংসদে হাঙ্গামা দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। আমরা অত্যন্ত বিরক্তিকরভাবে দেখলাম মান্যবর ব্যক্তিরা উচ্চ চিৎকারের পাল্লা দিচ্ছেন। অতঃপর মহান সংসদকে কলঙ্কিত করছেন। এর মাধ্যমে করদাতাদের কত টাকা যে জলে গেছে তা বলাই বাহুল্য।
আমরা দেখলাম অর্থহীন শত্রুতার জেরে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বন্দ্বের ফলে কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিলেরও দফারফা হয়ে যায়! আমরা এও দেখলাম, ক্ষুদ্র স্বার্থের ওপরে উঠে জনগণের জন্য কোনো কিছু করা তাদের পক্ষে কত কঠিন। অথচ এই মানুষদের প্রতিনিধিত্বই তারা করছেন। নির্বাচনের সময় ভোটের জন্য তারা এই জনগণের কাছেই যান। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভুল শোধরাতে সাংসদদের চেতনা নেই কিংবা অন্তত এই মুহূর্তে সংসদ চালানোর জন্য তারা আসলে কমই মনোযোগী। কিন্তু এসব বিষয় গ্রহণ করতে মানুষ প্রস্তুত নয়। সাম্প্রতিক ঘটনায় যেখানে লোকসভায় কংগ্রেসের একজন অল্প্রব্দপ্রদেশের সাংসদ তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিলটি সংসদে আনেন, তখন মরিচের গুঁড়া স্প্রে করা হয়, যেটি অসাবধানতাবশত মনে হয় নিজের ওপরই প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, তেলেগু দেশম পার্টির একজন সাংসদ উন্মাদের মতো মাইক ভেঙেছেন এবং তেলেঙ্গানা বিলটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে তেলেঙ্গানা বিষয়টি বড় আবেগের। কিন্তু সংসদ তো বিতর্ক ও আলোচনার একটি জায়গা; অশোভন সহিংস কলহ প্রদর্শনের জায়গা নয়।
আমাদের সাংসদরা যে ধরনের আচরণ প্রদর্শন করেছেন, তাতে মনে হয় সেসব মানুষের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র সম্মান কিংবা বিবেচনা নেই, যারা তাদের ভোট দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ স্থানে পাঠিয়েছেন। যদি তাদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য থাকে, সেটা সংসদে উত্থাপন করতে পারেন।
তাদের অধিকাংশই সংসদে কী নিয়ে আসছেন তার হোমওয়ার্ক করে আসেন না। তার পরিবর্তে তারা সেখানে অশোভন চিৎকার-চেঁচামেচি আর সহিংস আচরণ করছেন। এসব অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন তুলছেন_ এ রকম প্রতিনিধি আমাদের আদৌ প্রয়োজন কি!
আমাদের গণতন্ত্রের জন্য এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমাদের সর্বোচ্চ সংসদ দ্বারা যদি গণতন্ত্র চর্চা না হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমরা একটা অরাজকতার মধ্যে পড়তে যাচ্ছি।
যদিও ১৬ জন সাংসদের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে, তারপরও গণতন্ত্রের জন্য প্রত্যেক সাংসদকে ভূমিকা পালন করতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে যারা সংসদের কাজ ব্যাহত করবেন তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।
এটা কখনোই হতে পারে না, প্রত্যেকে সংসদের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন অথচ তার বিনিময়ে জনগণকে অপ্রত্যাশিত কুরুচিপূর্ণ উন্মাদনা প্রদর্শন ছাড়া আর কিছুই দেবেন না। আমরা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য গর্ব করি। বস্তুত বহু জাতির ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ ভারতের গণতন্ত্রকে প্রায়ই উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু এ ঘটনায় আমরা একটি গুরুতর বিপদের সম্মুখীন।
- ছবি- এএফপি, রয়টার্স