Mahfuzur Rahman Manik
তারিখ মনে রাখবেন!
এপ্রিল 18, 2013

Calendar

আজ কয় তারিখ, জিজ্ঞেস করলে অধিকাংশই হয়তো জবাব দেবেন ১৮ তারিখ। বাস্তবেও ১৮ তারিখ। সেটা ইংরেজি মাস এপ্রিলের ১৮। তাহলে বাংলা কত? উত্তর দিতে অনেকেই হয়তো বৈশাখের শরণাপন্ন হবেন। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ গেল বলে সহজেই বলে ফেলবেন ৫ বৈশাখ। বলা চলে, এই বৈশাখটা ঘিরেই বাংলা বছর নিয়ে আমাদের উন্মাদনা। পহেলা বৈশাখ আসার আগ থেকেই যেমন তাকে বরণ করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়; তেমনি দিনটি গেলেও কয়েক দিন তার আমেজ থেকে যায়। এ বৈশাখ যত পুরাতন হবে, বাংলা তারিখটা বের করা যে তত কঠিন হবে_ তা বলাই বাহুল্য। কৃষক, যারা শস্য রোপণ কিংবা ফসল তোলার সময়টা বাংলা হিসাবেই করেন কিংবা সচেতনভাবে যারা বাংলা বছর গণনা করেন তাদের কথা ভিন্ন।
পহেলা বৈশাখে যেমন কাউকে জিজ্ঞেস করা ছাড়াই ইংরেজির আগে বাংলা স্বগতোক্তির মতো চলে আসবে, তা অন্য দিনগুলোতে চিন্তা করা কঠিন। দৈনন্দিন জীবনে সব কাজ ইংরেজি বর্ষ বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরিচালিত হয় বলে স্বাভাবিকভাবেই তারিখ গণনার ক্ষেত্রেও ইংরেজিই প্রথমে আসবে। এমনকি যে বৈশাখের কথা বলা হচ্ছে, সে হিসাবটাও ইংরেজি ১৪ এপ্রিল ধরেই মনে রাখা হয়। তবে বর্ষ গণনায় ইংরেজির পরেই বাংলার সঙ্গে আরবির প্রভাবও লক্ষণীয়। যেহেতু আরবি মাস অনুযায়ীই মুসলমানরা রোজা, ঈদ, কোরবানি ইত্যাদি পালন করে থাকেন এবং এ সময়গুলোতে টানা কয়েকদিন বন্ধও থাকে।
তবে ষড়ঋতুর যে বাংলাদেশ সে ছয়টি ঋতু কিন্তু বাংলা মাসকে কেন্দ্র করেই গণনা হচ্ছে। কৃষকের কথা বলা হয়েছে, এছাড়া ব্যবসায়ীর হালখাতাও বাংলা বর্ষ গণনায় হচ্ছে। এগুলো হয়তো আশার আলো। এর বাইরে বৈশাখ ছাড়া ব্যাপকভাবে বাংলা দিন গণনার আর তেমন কোনো উপলক্ষ চোখে পড়ার মতো নয়। ফলে ঐতিহ্যবাহী বাংলা সন ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির মধ্যেই হয়তো সীমাবদ্ধ থাকবে। দৈনন্দিন জীবনে গণনার বিষয় না হলেও বাংলা বর্ষ হয়তো উৎসব হিসেবেই পালিত হবে। এটা অবশ্য এখনি শহরের জন্য সত্য। তবে ঋতুবৈচিত্র্য যত বেশি থাকবে, গ্রামের মানুষের কাছে সঙ্গে সঙ্গে বাংলা মাসটাও বেশি আপন থাকবে। গ্রীষ্মের মৌসুমি ফল, বর্ষার হাঁটুজল, শরতের কাশফুল, হেমন্তের নবান্ন উৎসব, শীতের পিঠা-পুলি আর হাড়কাঁপা শীত যেন গ্রামেই সম্ভব। গ্রামের মানুষ এসবের মাধ্যমে বাংলার ঠিক দিনটা বলতে না পারলেও মাস কিংবা ঋতু ভুলবে না নিশ্চয়ই।
বাঙালি হিসেবে এটা কারও কারও কাছে দুঃখের কারণ হতে পারে। বাংলা দিন-তারিখ আমাদের মনে রাখা উচিত_ কেউ কেউ তা বলতেও পারেন। সে ব্যবস্থা আছে কি! অনেকে বাংলা অর্থবছরের কথা বলেন। তা চালু হলেও হয়তো মনে রাখার একটা ব্যবস্থা হতো। সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
অবশ্য আমরা চাইলেও যে বাংলা তারিখ মনে রাখতে পারি না, তা নয়। এজন্য গ্রামের কৃষকের কথা থাক। থাক ব্যবসায়ীদের হালখাতা কিংবা নবান্ন বা বৈশাখের উৎসবও। দৈনন্দিন জীবনে বাংলা গণনার প্রয়োজন না হলেও, প্রতিদিনের সংবাদপত্রে ইংরেজির সঙ্গে যে বাংলা তারিখটাও লেখা থাকে, তা দেখেও কি আমরা বাংলা তারিখটা মনে রাখতে পারি না?

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।