Mahfuzur Rahman Manik
জেগে থাকার বার্তা
ফেব্রুয়ারী 22, 2013

Bangladesh

মানুষকে জাগানোর চেষ্টা করেছেন সবাই; কেউ গান দিয়ে, কেউ কবিতা দিয়ে, কেউ সিনেমা বানিয়ে, কেউবা লিখে, বক্তৃতা দিয়ে। যে যেভাবে পারছেন তার জায়গা থেকেই জাগানোর চেষ্টা করেছেন। নজরুল গেয়েছেন, 'জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত...' কিংবা রবীন্দ্রনাথের 'নব আনন্দে জাগো আজি নবরবিকিরণে'। জাগো বাঙালি জাগো তো শোনা যায় অহরহই। অনাদিকাল থেকে মহাপুরুষরাও জাগানোর কাজই করে গেছেন। যদিও মানুষ খুব সহজে জাগে না। তবে জাগলে আবার কোনো শক্তিই তাকে দমাতে পারে না। ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহে সময়ে সময়ে জেগে উঠেছে মানুষ। একাত্তরের জাগরণ দেখেছে এই দেশ। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, 'আমাদের দাবায়া রাখতে পারবা না।' সত্যিই তখনকার মানুষকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। সেই জাগরণের মাধ্যমে বিজয় এসেছে। আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।
গণজাগরণ তখনই হয়, যখন মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। যখন মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন রাস্তায় বের হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। স্বাধীনতার পরও আমাদের গণজাগরণ হয়েছে। নানা দাবিতে রাস্তায় নেমেছে মানুষ। আর এই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ নজির শাহবাগের গণজাগরণ। যেটি ১৭ দিন পরও চলছে। যার ঢেউ দেশের শহর, বন্দর, গ্রাম ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গেছে। লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট বলছে, বাংলাদেশে দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশ শাহবাগের এই গণজাগরণ। মানুষ জেগেছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে। রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে প্রকম্পিত শাহবাগের আকাশ-বাতাস। বাংলার মাটিতে কোনো রাজাকারের ঠাঁই হবে না_ বলছে তারা।
প্রজন্মের আন্দোলন কী বার্তা দিচ্ছে_ এ বিষয়ে সমকালের পাঠকরা সোমবার টেলিফোনে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কিংবা রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশের কথা তো বলেছেনই, একই সঙ্গে আরও নানা বিষয় তাদের কথায় উঠে এসেছে। সবচেয়ে ভালো যে বিষয়টির কথা এসেছে সেটা হলো, এ আন্দোলন একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন তারুণ্য যেভাবে জেগেছে, রাজাকারের বিচার তো হবেই; ভবিষ্যতেও একটা দীর্ঘ সময় ধরে এর একটা প্রভাব থাকবে। সবাই বলছেন, এদের বিচারের মাধ্যমে দেশ কলঙ্কমুক্ত হওয়ার পরও জেগে থাকবে তরুণরা। কেবল তরুণরাই নয়, এই যে লাখো জনতার জাগরণ হয়েছে, তারাও জেগে থাকবে। সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে এরা আজকের মতো সোচ্চার হবে।
শাহবাগের অন্দোলনে মানুষ যেভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছে, অংশ নিয়েছে; এরা অগামীতেও অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে অসবে। অন্তত দলমতের ঊধর্ে্ব উঠে এ অন্দোলন সে বার্তাই দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ আর কোনো দলকে তোয়াক্কা করবে না। ক্ষমতাসীনদের ভয়ে ঘরে বসে থাকবে না। বরং প্রয়োজন হলে দেশের স্বার্থে সবাই আবার হাজির হবে আন্দোলনের মাঠে।
এই বার্তা কিন্তু ছোট কোনো বিষয় নয়। এ বার্তা অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক হানাহানির বিরুদ্ধে। সুস্থ দেশ গড়ার পক্ষে। দেশে কোনো অন্যায় হলে সেটার বিচার সরকারকে করতেই হবে। অন্যায় যিনি বা যারাই করুক। সরকার তার বিচার করেছে কিনা, সেটাই জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কেবল শাহবাগ নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য শাহবাগ তৈরি হয়েছে। এগুলো জেগে উঠবে একযোগে। অন্যায়কারীরা সাবধান; জেগে আছে জনতা, জেগে থাকবে প্রজন্ম চত্বর।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।