Mahfuzur Rahman Manik
ব্রিটিশ 'শাসন' ব্রিটেন 'শাসন'
জুলাই 1, 2017
ব্রিটেনের নির্বাচনে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত ২৭ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬১২ সালে ভারতে প্রথম বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজদের আগমন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ ও ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে এখানে তাদের কলোনি শাসন কায়েম হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান-ভারত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এখানে সে শাসনের অবসান হয়। কেবল ভারতীয় উপমহাদেশই নয়, ষোড়শ থেকে আঠারশ শতকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কলোনি ব্রিটিশ উপনিবেশ। বর্তমানে বিশ্বে ৫২টি দেশ কমনওয়েলথভুক্ত। এ দেশগুলোর অধিকাংশই ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। ১৯৪৫ সাল থেকে ধীরে ধীরে ব্রিটেন কলোনি শাসন থেকে বের হতে থাকে। এর ফলেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান-ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। আর দক্ষিণ রোডেশিয়া ছিল ব্রিটেনের সর্বশেষ উপনিবেশ, যা ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়ে হিসেবে স্বাধীন হয়। ৮ জুন অনুষ্ঠিত হয় ব্রিটেনের মধ্যবর্তী নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত ২৭ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের তিনজন আর পাকিস্তান ও ভারতের নির্বাচিত হয় ১২ জন করে। ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের ৬৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে এ সংখ্যাটি একেবারে মামুলি নয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এক সময় ব্রিটিশরা আমাদের শাসন করত আর এখন আমরা সেখানে গিয়ে তাদের শাসনকার্যের অংশ হয়ে উঠেছি। এটা অবশ্য একদিনে হয়ে ওঠেনি। হয়তো ব্রিটেনের সঙ্গে 'ঐতিহাসিক' সম্পর্কের কারণে সেখানে যাতায়াত সহজ হয়েছে। এ উপমহাদেশ থেকে অনেকে গিয়ে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছে। অনেকে তাদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ও সক্রিয় হয়েছে। সেখানকার সমাজ ও মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। মানুষ তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও রুপা হক কেবল এবারই ব্রিটেনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হননি, ২০১৫ সালেও এ 'তিন কন্যা' ব্রিটেনের মানুষের মন জয় করে হাউস অব কমন্সে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে। লন্ডনের হ্যাম্পসেটড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার বড় মেয়ে টিউলিপ। লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন পাবনার মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের কিংসটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক রুপা হক। এ ছাড়া লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন সিলেটের মেয়ে রুশনারা আলী। এটা অবশ্য ঠিক- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা এ

পলাশীর যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে ইংরেজরা ভারতীয় উপমহাদেশে কলোনি শাসন কায়েম করে

উপমহাদেশেরই নয় হয়তো অন্যান্য দেশের বংশোদ্ভূতরাও ব্রিটেনের সংসদ সদস্য হয়েছেন, যারা এক সময় ব্রিটেনেরই উপনিবেশ ছিল। তবে তাদের চিন্তা-চেতনায় নিশ্চয়ই ব্রিটেনের উন্নয়ন, সেখানকার মানুষের সেবাই প্রধান। এক সময় ব্রিটেনের অধীনে ছিল বলে সে আক্রোশ তাদের থাকার কথা নয়। ব্রিটেনের পরিবেশও উন্মুক্ত হয়েছে। অন্যান্য দেশের মানুষ তাদের যোগ্যতাবলে সেখানে থাকতে পারছে, কাজ করতে পারছে। সর্বোপরি রাজনীতিও করতে পারছে। যদিও আমাদের দেশে সে সুযোগ নেই। অন্য দেশের কোনো নাগরিক ৩০-৪০ বছর বাংলাদেশে বসবাস করলেও তার ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার নেই। যা হোক, ব্রিটিশদের সময়ে স্বাভাবিকভাবেই ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে মানুষ আন্দোলন করেছে। ব্রিটিশদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে এখানে হয়েছে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন ও সশস্ত্র সংগ্রাম। এখন সেই ব্রিটিশ সংসদেই ব্রিটেন শাসনের অংশ হয়ে উঠছি আমরা! সে সময় আর এ সময়। ইতিহাস তার নিজ গতিতেই পাল্টায়।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।