Mahfuzur Rahman Manik
ভোক্তার আস্থা
মার্চ 16, 2017
ভালো পণ্য পাওয়া ভোক্তার অধিকার

আমরা প্রত্যেকেই প্রতিনিয়ত নানাভাবে ভোক্তা। খাওয়ার জন্য খাদ্যপণ্য কিনতে হয়, চিকিৎসার জন্য ওষুধ লাগে। ব্যবহারের জন্য মোবাইল, কসমেটিক পণ্য থেকে শুরু করে সংসারের প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রয়োজন হয়। এসব দ্রব্য কেনার ক্ষেত্রে ভোক্তা হিসেবে ভালোটা পাওয়াই প্রত্যেকের অধিকার। কারণ ওইসব পণ্যের যথাযথ মূল্য পরিশোধ করেই তা ভোক্তার হস্তগত হয়। কিন্তু পণ্যটি ভেজাল হলে, মেয়াদোত্তীর্ণ হলে, ওজনে কম হলে কিংবা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হলে তাতে ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। ভোক্তা কাঙ্ক্ষিত পণ্য না পেলে, খাবারের ক্ষেত্রে কিংবা ওষুধের ক্ষেত্রে কোনো ভেজাল থাকলে পরিণামে অসুস্থ হওয়াসহ মৃত্যুর ঝুঁকি থাকাও অস্বাভাবিক নয়। ভোক্তার অধিকারের গুরুত্ব এখানেই।
এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখেই বিশ্বব্যাপী ১৫ মার্চ ভোক্তা অধিকার দিবস পালিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য 'বিল্ডিং অ্যা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড কনজুমার ক্যান ট্রাস্ট' (ভোক্তার আস্থার ডিজিটাল বিশ্ব গড়া)। বলা বাহুল্য, বিশ্ব যখন তথ্যপ্রযুক্তিকে সঙ্গে করে এগিয়ে চলেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাই এবারের প্রতিপাদ্য। এ সময়ে মোবাইল ছাড়া মানুষ বলা চলে অচল; অনেক কাজ কম্পিউটার ইন্টারনেটে করা হয়। এমনকি ওজনের ক্ষেত্রেও এখন ডিজিটাল মেশিনের প্রাধান্য। কনজিউমারস ইন্টারন্যাশনাল ডট ওআরজি লিখেছে, ১৯৯৫ সালে যেখানে ১ শতাংশ মানুষ অনলাইনে ছিল, এখন সেখানে ৪০ শতাংশ মানুষের রাজত্ব। ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। এমনকি যারা অনলাইন সেবা পাচ্ছেন না তাদেরও অনলাইনের আওতায় আনার কথা বলছে সাইটটি। কারণ ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করতে তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ তথ্য নিশ্চিত করতে সেবাদানকারী কোম্পানি যেমন তাদের পণ্যসহ সার্বিক তথ্য অনলাইনে সরবরাহ করবে, একই সঙ্গে অনলাইন যোগাযোগে তা ভোক্তার পাওয়াও সহজ হবে। তাছাড়া ভোক্তা কোনোভাবে প্রতারিত হলে কিংবা কোনো বিষয়ে জানার ক্ষেত্রে অনলাইন যাতে নেয়ামক ভূমিকা পালন করে। এখন যেমন মোবাইলেই অনেক সেবা পাওয়া যায়, মোবাইলটি স্মার্ট ফোন হলে এবং একই সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে বলা চলে সবই ভোক্তার হাতে। অনলাইনে যাতে ভোক্তা প্রয়োজনীয় সেবাটি পায়। সেবা গ্রহণ করে ভোক্তার যাতে আস্থা আসে সে বিষয়টিই এখানে বিবেচ্য। যথাযথ সেবা না পেলে ভোক্তার আস্থা আসবে না, এটাই স্বাভাবিক।
আমাদের দেশেও তথ্যপ্রযুক্তি ও অনলাইন সেবা সম্প্রসারিত হচ্ছে। অনলাইন শপিং, অনলাইন স্বাস্থ্যসেবাসহ অনেক কিছুই অনলাইনে আসছে। কিন্তু এসব মানুষের যথাযথ আস্থা অর্জন করতে পারছে না। একই সঙ্গে অনলাইনের বাইরেও নানা ব্যাপারে ভোক্তার আস্থাহীনতা লক্ষণীয়। খাদ্যে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল, প্রসাধনী পণ্যে ভেজালের কথা আমরা প্রায়ই শুনি। ডিজিটাল মাপ আর অ্যানালগ মাপের ক্ষেত্রেও অনেকের মনে সন্দেহ রয়ে গেছে। তবে মাপের ক্ষেত্রে বলা দরকার, সরকার কেবলই 'স্ট্যান্ডার্ডস ওজন ও পরিমাপ আইন ২০১৭'-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। মাপের ঝামেলা এর মধ্য দিয়ে মিটবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমাদের মান নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) রয়েছে, এমনকি ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে আইন রয়েছে, কমিটি রয়েছে। মাঝে মধ্যে তাদের তদারকিতে ভেজাল ধরাও পড়ছে। এর মাধ্যমে পণ্যে ভেজাল কমবে বলে বিশ্বাস। অসাধুরা যাতে কোনোভাবেই ফাঁকফোকর না পায়, তার জন্য নিয়মিত ব্যবস্থা প্রয়োজন। ভোক্তা যাতে দামের ক্ষেত্রেও প্রতারিত না হন। আর এসবের মাধ্যমে ভোক্তার আস্থা অর্জনই দিবসটির সাফল্য।

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।