Mahfuzur Rahman Manik
হালের গরু দর্শন
জানুয়ারী 3, 2017
hal-dour
পাকুন্দিয়ায় হাল দৌড় প্রতিযোগিতা

হাল আমলে হালচাষের গরুর দেখা মেলা ভার। জমিতে লাঙল কিংবা মই গরু দিয়ে টানা হালচাষ নতুন প্রজন্মের অনেকের হয়তো দেখারও সৌভাগ্য হয়নি। গরু দিয়ে হালচাষের পরিবর্তে এখন এসেছে মেশিন- ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ইত্যাদি। এ সময়ে এসে যখন সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম_ 'বিলুপ্তির পথে গরু দিয়ে হালচাষ'। ঠিক সে সময়ে এসে রোববারের সমকালের প্রতিবেদন, 'পাকুন্দিয়ায় হাল দৌড় প্রতিযোগিতা'। প্রতিবেদনটি বলছে, শনিবার কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হালচাষ প্রতিযোগিতা হয়েছে। স্থানীয় একটি ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২ জোড়া গরু অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় প্রতি জোড়া হালের গরুকে পেছনে মইসহ দৌড়ে পাড়ি দিতে হবে অন্তত ৭শ' গজ জমি, যে জোড়া সবচেয়ে কম সময়ে এ পথ পাড়ি দেবে, সেই বিজয়ী হবে। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই বলা চলে অনেক দিন পর সংবাদমাধ্যমে হালচাষের গরুর সাক্ষাৎ। গ্রামে আগে এ গরুই ছিল জমিতে হাল দেওয়ার প্রধান অবলম্বন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হালচাষ করা হতো। কৃষকরাও সেভাবে গরু পালন করত, হালের জন্য আলাদা গরু থাকত। অনেকে হালচাষকে পেশা হিসেবেও বেছে নিত, নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। ধীরে ধীরে দৃশ্যপট বদলায়। গরুর পাশাপাশি আসে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার। অবশেষে মেশিনচালিত এগুলোই প্রাধান্য লাভ করে। একেবারে কমে আসে হালচাষ। এখন কোথাও কোথাও থাকলেও অনেক এলাকায় গরু দিয়ে হালচাষের দৃশ্য দেখা যায় না বললেই চলে। পেশাগতভাবে যারা হালচাষ করত তারা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। সময়ের পরিবর্তনে অনেক কিছুই বদলে গেছে। প্রযুক্তির নয়া উদ্ভাবনে পুরনো অনেক পদ্ধতিই ঝরে পড়েছে। তবে এটা ঠিক, গরু দিয়ে হালচাষের মাধ্যমে কেবল চাষের কাজই হয় না, জমির উর্বরতায়ও ভূমিকা রাখে। হাল দেওয়ার সময় গরুর গোবর জমিতে পড়ে, যা জৈব সার হিসেবে কাজ করে, এতে জমির ফলনও ভালো হয়। এমনকি অনেকক্ষেত্রে দামের দিক থেকেও গরু দিয়ে হালচাষ সস্তা। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী হাল দৌড় প্রতিযোগিতা কেবল এলাকার হাজারো দর্শনার্থীকে বিনোদিতই করেনি, একই সঙ্গে গ্রামবাংলায় কৃষিকাজে গরু দিয়ে হালচাষ যে একসময় দাপুটে ছিল, তাও বলছে। জানা যায়, প্রতি বছরই সেখানে এ ধরনের ব্যতিক্রমী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে এটাও অনুমিত যে, সেখানে গরু দিয়ে হালচাষ এখনও হারিয়ে যায়নি। এ ধরনের প্রতিযোগিতাও হয়তো বিষয়টি ধরে রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে। প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করেছে_ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কৃষিতে নতুন নতুন অনেক কিছুই উদ্ভাবন হচ্ছে। সেগুলোর মাধ্যমে কৃষক উপকৃতও হচ্ছেন বটে। গরু দিয়ে হালচাষে কৃষকের কষ্টের ব্যাপার রয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা সময়, ট্রাক্টরে দ্রুত জমি চাষ করা যায়। তবে এটা ঠিক, হালের গরুর অবদান অনস্বীকার্য। যুগ যুগ ধরে কৃষক এর মাধ্যমেই ফসল উৎপাদন করেছেন। তাতে নিজেরা যেমন উপকৃত হয়েছে, তেমনি দেশেরও উপকার হয়েছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা টিকে থাকতে পারেনি। তারপরও পাকুন্দিয়ায় এ রকম প্রতিযোগিতা হচ্ছে কিংবা কোথাও কোথাও রয়েছে তা নিশ্চয়ই ভালো বিষয়।

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।