Mahfuzur Rahman Manik
ডেঙ্গু ভয়ঙ্কর
অক্টোবর 31, 2022

এডিস মশাবাহিত ভাইরাসে সৃষ্ট ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ যে সময়ে কমার কথা, সে সময়ে বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে এসেও এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সাড়ে আটশ রোগীর হাসপাতালে ভর্তি এবং পাঁচজনের মৃত্যুর পরিসংখ্যান ভয়াবহতারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ সাড়ে সাতশ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ১২ অক্টোবর ৮ জনের মৃত্যু হয়, যা মৃত্যুর সংখ্যায় এ বছর এক দিনে সর্বোচ্চ। বর্ষা মৌসুমের সঙ্গে ডেঙ্গুর সম্পর্ক থাকার কারণ, জমে থাকা পানিতেই প্রধানত এডিস মশার প্রজনন বেশি হয়। এবার কিছুটা দেরিতে বর্ষা আসায় ডেঙ্গুর সময়ও প্রলম্বিত হচ্ছে। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখানেও স্পষ্ট। অক্টোবরের ১৬ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজারের বেশি এবং মারা গেছেন ৩৯ জন। সোমবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, এবার ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এই অক্টোবরে। হাসপাতালে ভর্তির বাইরে ডেঙ্গুতে আরও কত মানুষ আক্রান্ত, সে পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই।
তবে ডেঙ্গুর এই বাড়-বাড়ন্ত প্রকোপ শুধু জলবায়ু পরিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু মারাত্মক রূপ ধারণ করেছিল। ওই বছর লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এর পর থেকে প্রায় প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর কমবেশি প্রকোপ দেখা যায়। এবার হঠাৎ আক্রান্ত ও মৃত্যুসংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। এর মাধ্যমে এটা স্পষ্ট- এডিস মশা প্রতিরোধে যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল; সেভাবে নেওয়া হয়নি। মশক নিধন নিয়মিত কর্মসূচি হলেও একে নির্দিষ্ট সময়েই শুধু জোরদার করা হয়। বিশেষ করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আর মৃত্যুর খবর যেভাবে প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা পাচ্ছি; একইভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি পদক্ষেপের খবর প্রতিনিয়ত প্রকাশ হওয়া দরকার। তাতে আমরা বুঝতে পারব, সত্যি কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গুর হটস্পট চিহ্নিত করে এর ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার বিষয়টিও স্পষ্ট। যেখান থেকে ডেঙ্গু রোগী বেশি আসে, সেখানে বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে মশক নিধন করতে হয়, যাতে এক রোগী থেকে অন্য জনের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার তাগিদ দিলেও বাস্তবে মানা হয় সামান্যই। স্থানীয় প্রশাসন যে মশার ওষুধ ছিটায়, তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বারবার। প্রশাসন তৎপর হলে নাগরিকরাও ব্যক্তিগত সাবধানতা ও সতর্কতার বিষয়ে সচেষ্ট হন। বলাবাহুল্য, যে কোনো সংকট নিরসনে নাগরিক দায়িত্ববোধ গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এটি আরও জরুরি। এডিস মশা যাতে নাগাল না পায় সে জন্য ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা চাই। বাসা-বাড়িতে আবদ্ধ পানিতে মশা যাতে বংশবিস্তার করতে না পারে, সে জন্য ফুলের টব, এসি, ফ্রিজের নিচেসহ সম্ভাব্য সব জায়গা পরিস্কার রাখা প্রয়োজন। মশানাশক ওষুধ বাসা-বাড়ির ভেতরে ও আশপাশে নিয়মিত ছিটানোর বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ব্যাপক ভিত্তিতে অভিযান চালানো যেতে পারে। মশা থেকে সুরক্ষায় যথাসম্ভব ফুল হাতা জামা পরাসহ সারা শরীর ঢাকার ব্যবস্থা করা চাই।
ডেঙ্গুর চলমান সংকট আরও দুই সপ্তাহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ফলে এ সময়ে নাগরিক ও প্রশাসন উভয়ের পক্ষ থেকে সুরক্ষা তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিদিন আটশ রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া স্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতি নয়। এভাবে চলতে থাকলে হাসপাতালগুলোতে রোগী জায়গা দেওয়া কঠিন হবে। ডেঙ্গুতে চিকিৎসক, শিক্ষক এমনকি শিশুরাও মারা যাচ্ছে। মশা ক্ষুদ্র আকারের বলে এ নিয়ে হেলাফেলার সুযোগ নেই। ক্ষুদ্র মশা কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে- এ বছর ৯৬ জনের মৃত্যুই তার প্রমাণ। তাদের মৃত্যুতে সামষ্টিক অবহেলা কীভাবে অস্বীকার করা যাবে?

সমকালে প্রকাশিত ১৮ অক্টোবর ২০২২

ট্যাগঃ ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।