Mahfuzur Rahman Manik
চোখ রাঙাচ্ছে করোনা
এপ্রিল 6, 2020

কেবল সংবাদকর্মীই নন, এ মুহূর্তে দেশের সব সচেতন নাগরিকই বোধ করি প্রতিদিন করোনা সংক্রান্ত সরকারের প্রেস ব্রিফিংয়ের জন্য অপেক্ষা করেন। দেশে করোনা পরিস্থিতি বুঝতে এটা জরুরিও বটে। এতদিনের ব্রিফিং যা-ই হোক, রোববারের ব্রিফিংয়ে নিশ্চয়ই অনেকে নড়েচড়ে বসেছেন। একদিনে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৮ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হওয়ায় অনেক হিসাব-নিকাশও নিশ্চয়ই পাল্টে যাবে। দেশে করোনা পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাবে, তা অনেকেই অনুমান করেছিলেন। দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর আমরা দেখছি, দিন দিন বাড়ছে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। রোববার ২৮তম দিনে এক লাফে এত করোনা পজিটিভ খবর আমাদের বৈশ্বিক পরিসংখ্যানের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। করোনা যদি বাংলাদেশে একই রূপ ধারণ করে তাতে বলতে হবে, এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছি আমরা। বিশ্বের যেসব দেশে এ ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়েছে, সেখানে প্রথম মাসের লক্ষণে বোঝাই যায়নি পরবর্তী মাসে ঠিক কী অপেক্ষা করছে। সর্বাধিক করোনা আক্রান্ত রোগী যে আমেরিকায়, সেখানে প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হন ২০ জানুয়ারি। মার্চের প্রথম দিন পর্যন্ত সেখানে ৭৪ জন রোগী শনাক্ত হয়। এর এক মাস পর এসে প্রায় দুই লাখ রোগী আক্রান্ত হয়। এখন সেখানে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। করোনায় সর্বাধিক মৃত্যু ১৫ হাজারের বেশি যে ইতালিতে, সেখানে জানুয়ারি মাসের শেষ দিনে দু'জনের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মাস খানেক পর শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১শ' জনে। আর সেখানে ৩১ মার্চ করোনা পজিটিভ মানুষের সংখ্যা বেড়ে লক্ষাধিক হয়ে যায়। স্পেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের অবস্থাও তথৈবচ।

এদের প্রত্যেকটি দেশেই করোনা মহামারি আকার ধারণ করেছে এবং মৃতের সংখ্যা কোনো দেশেই হাজারের নিচে নয়। এ দেশগুলোতে করোনার আসল রূপ প্রথম শনাক্তের এক মাস পর দৃশ্যমান হতে থাকে এবং মহামারি পর্যন্ত গড়াতে দুই মাস সময় নেয়। সেদিক থেকে দেখলে বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্তের পর এখন এক মাসও পেরোয়নি। সম্প্রতি দেশে টেস্ট সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, প্রায় প্রতিদিনই বেশি পরিমাণে রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হলো মৃত্যুর হার। করোনাভাইরাসে মৃত্যুহারে বৈশ্বিক হিসাবে বাংলাদেশ ওপরের দিকে অবস্থান করছে। আমাদের করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। সেটা কতদূর যাবে, এখনও জানি না। এমনকি দেশে করোনার লক্ষণ নিয়ে যে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে, তার খবর সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত আসছে। টেস্ট না করার কারণে হয়তো আমরা নিশ্চিত নই যে, তাদের করোনা হয়েছে কিনা।

সামনের দিনগুলো আমাদের আরও সতর্ক হওয়ার সময়। আমরা আগ থেকেই সতর্ক হয়েছি, এটা সত্য। তারপরও যেভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া, সাধারণ ছুটি দিয়ে সারাদেশ সরকার 'লকডাউন' করে সবাইকে ঘরে অবস্থানের কথা বলেছে, সেভাবে কিন্তু আমরা অনেকেই ঘরে থাকছি না। অথচ নিজেকে, পরিবারকে ও সর্বোপরি দেশবাসীকে বাঁচাতে এ মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য। আমরা যত বেশি ঘরে থাকব, করোনা তত কম ছড়াবে। অনেকেই দেখা যাচ্ছে ত্রাণ দিতে ও নিতে ব্যাপকভাবে বাইরে বেরোচ্ছেন এবং একে কেন্দ্র করে একে অপরের সংস্পর্শে আসছেন, সেটাও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। আমরা জানি, এখনও করোনাভাইরাসের ওষুধ-প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি। সে পর্যন্ত সব সতর্কতা মেনে চলাই এর ওষুধ-প্রতিষেধক। করোনাভাইরাস যে চরিত্র নিয়ে এসেছে তাকে প্রতিরোধ করা কিংবা ছড়ানো উভয়ই আমাদের আচরণের ওপর নির্ভর করছে। সুতরাং বাঁচতে হলে প্রতিরোধের পথ বেছে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। করোনা যেভাবে চোখ রাঙাচ্ছে, তার বিকল্পও যে নেই।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।