Mahfuzur Rahman Manik
শাওনের স্মারক
সেপ্টেম্বর 3, 2018

শারীরিকভাবে যারা নানা ধরনের অক্ষমতার শিকার, তাদের অনেকেই প্রতিবন্ধকতা জয় করে নানাভাবে সমাজে অবদান রাখছেন। অনেকক্ষেত্রেই তারা ভালো করছেন। আমরা দেখেছি, পা দিয়ে লিখে কীভাবে শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পাচ্ছে; দু'চোখ হারিয়েও স্বউদ্যোগে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান দিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান করছে; পা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে অদম্য মানুষ দাপিয়ে বেড়ায় মানুষের জন্য; খেলাধুলায় অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধীর দক্ষতা বিস্ময়কর। খেলার দিক থেকে আমাদের দেশে বর্তমানে ক্রিকেট অত্যন্ত জনপ্রিয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থান শক্তিশালী। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আইসিসির র‌্যাংকিংয়ে আমাদের অবস্থান ৭। এমনকি আমাদের প্রতিবন্ধীরাও ক্রিকেটে ভালো খেলছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা দেশে গিয়ে তারা সে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে। এমনি এক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটার মো. শাওন সিকদারের খবর দিয়েছে শুক্রবারের সমকাল। যদিও খবরে তিনি এসেছেন অন্যভাবে। 'প্রতিবন্ধী দলের ক্রিকেটার চালাচ্ছেন ইজিবাইক' শিরোনামের খবরে পিরোজপুরে ইজিবাইক চালানো অবস্থায় শাওনের ছবিও প্রকাশ হয়েছে। শাওন জাতীয় প্রতিবন্ধী দলের কৃতী ব্যাটসম্যান ও উইকেটকিপার। প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের নিয়ে মেধা অন্বেষণে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। এই গত জুলাইয়েই ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাই ন্যাশন টি২০ সিরিজও খেলেন তিনি। ৮ জুলাই সেখানে শুরু হওয়া সিরিজে শাওন ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচ খেলে ১২৯ রান করেন। এ সিরিজে শাওন একটি ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং ম্যান অব দ্য সিরিজ হন।

জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেটে শাওনের প্রতিভা সবার কাছে স্পষ্ট। তার পরও দারিদ্র্যের কারণে তাকে চালাতে হচ্ছে ইজিবাইক! এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনো পেশাই ছোট নয়। ইজিবাইক চালানোতেও দোষের কিছু নেই। কিন্তু ক্রিকেটে শাওনের যে প্রতিভা রয়েছে, তিনি যদি তাতেই মনোযোগ দিতে পারেন এবং নিয়মিত অনুশীলন করতে পারেন, তবে নিশ্চয়ই স্বনামধন্য খেলোয়াড় হয়ে উঠবে, দেশ-বিদেশে খেলে জাতির জন্য সাফল্য বয়ে আনবে শাওন।

শাওন সিকদার পিরোজপুর সদরের শারিকতলা-ডুমরীতলা ইউনিয়নের কুমরিমারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মৎস্যজীবী বাবুল সিকদার ও গৃহিণী নাসিমা বেগমের বড় ছেলে। বড় সন্তান হিসেবে দরিদ্র পরিবারের হাল ধরতে অর্থ সংস্থানে ইজিবাইক চালাচ্ছেন তিনি। অর্থের অভাবে ক্রিকেটসামগ্রী কিনে এলাকায় এসে শাওন অনুশীলন করতে পারছেন না। স্বাভাবিকভাবেই তিনি খবর হয়েছেন পত্রিকায়।

শাওনের প্রতিবন্ধিতা পায়ে। তারপরও দৃঢ়পদে তিনি ব্যাটিং করেন। ইজিবাইকে চালকের আসনের ছবি ছাড়াও দুই হাতে তার দুটি স্বীকৃতি স্মারকের ছবিও প্রকাশ করেছে সমকাল। শাওনের এ পুরস্কার নিশ্চয়ই এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তারাও ক্রিকেটের জন্য নিবেদিত। প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেটে আসার আসল কারণ যদিও সমাজের মূলধারার মানুষের মাঝে আসা, তাদেরকেও যাতে নির্বাসিত হয়ে জীবন কাটাতে না হয়, সেই অনুপ্রেরণা তৈরি। তারপরও তাদের অবস্থার দিকে নজর দেওয়া দরকার। বিশেষ করে যখন তারা একটি দেশের জাতীয় দলে খেলেন। অনেক দেশই হয়তো তার প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের সে রকম সুযোগ-সুবিধা দেয়। তাছাড়া প্রতিবন্ধী হিসেবেই একজন মানুষকে বাঁচার জন্য, সামাজিকভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে এগিয়ে আসা উচিত। সেখানে শাওনের মতো জাতীয় খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানো কতটা জরুরি, বলার অপেক্ষা রাখে না।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।