বাংলাদেশে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর উল্লেখযোগ্য অংশ নেপালের। নেপালের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বলা চলে, আমাদের মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়াশোনা করছেন। নেপালের দ্য হিমালয়ান টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদন অনুসারে, নেপাল থেকে প্রতি বছর তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এমবিবিএস ও বিডিএস পড়তে বাংলাদেশে আসেন। পত্রিকাটির হিসাবে ২০১৬ সালে বিদেশে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া ৪৭৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩২৮ জনই এসেছেন বাংলাদেশে। সে হিসাবে ওরা বলছেন, দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া নেপালের ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থীর পছন্দ বাংলাদেশ। এডুকেট নেপাল ডট কম ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদন দূতাবাস সূত্রে বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সাত হাজার নেপালি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বাংলাদেশ কেন পছন্দ, তার কারণ বলেছেন এক নেপালিয়ান অধ্যাপক। একদিকে কম দূরত্বে অবস্থিত বাংলাদেশ, রয়েছে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, পড়ার মাধ্যম ইংরেজি, তার চেয়ে বড় বিষয়- ভিসার জটিলতা নেই। তিনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলেছেন, দুই দেশের রোগের ধরনও প্রায় একই রকম। এর সঙ্গে আমরা পরিবেশকেও যুক্ত করতে পারি। ঠিক যে বিষয়ে মন্তব্যের জেরে পদত্যাগ করতে হয় নেপালের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রীকে।
২০ জুলাই এক অনুষ্ঠানে নেপালের মন্ত্রী শের বাহাদুর তামাং বলেছিলেন, 'মেডিকেলের ওপর যারা বাংলাদেশে লেখাপড়া করতে যায়, সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য তাদেরকে সেখানে নিজেদের বিক্রি করতে হয়।' ছাত্রীদের নিয়ে এমন অশালীন মন্তব্যের জবাব সংশ্নিষ্টরাই দিয়েছেন। ফলে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ও ঢাকা উভয় স্থানে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রতিবাদ জানান ঢাকায় পড়তে আসা নেপালের ছাত্রীরাও। প্রতিবাদের মুখে তিনি তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। এরপরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা অব্যাহত থাকে। অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, তিনি প্রথমে পদত্যাগ করতে চাননি। কিন্তু পরে তার দল ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের ভেতরেই তার ওপর প্রচণ্ড রকমের চাপ তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ কারণেই শেষ পযন্ত তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। পদত্যাগী সেই মন্ত্রীর জেলও দাবি করছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত নেপালের শিক্ষার্থীরা।
আসলে নেপালের ওই মন্ত্রী এক ভয়ঙ্কর মন্তব্য করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি একদিকে যেমন নেপাল থেকে আসা ছাত্রীদের চরিত্রের ওপর কালিমা লেপন করেছেন, তাদের প্রাপ্ত ডিগ্রিকে ছোট করেছেন; ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সংশ্নিষ্টদের ওপর অন্যায়ভাবে দোষারোপ করেছেন। আমাদের পড়ার পরিবেশ ও ছাত্রীদের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
আসলে তার এ মন্তব্য যে মনগড়া ও মিথ্যা, সে কারণেই এমন জোরালো প্রতিবাদ হয়েছে। তার পদত্যাগ ছাড়া বিকল্প ছিল না। কারণ, দেশের এমন এক দায়িত্বশীল ব্যক্তি সে মন্তব্য করেছেন। একজন মন্ত্রী চাইলেই তো যা-তা বলতে পারেন না।
আমরা জানি, বিদেশি শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে এখানে পড়াশোনা করছেন। বাংলাদেশ থেকে যারা সার্টিফিকেট নিয়ে যাচ্ছেন, তারা কষ্ট করে পড়াশোনা করেই তা অর্জন করছেন। এ ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমে নেপালের শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়াও আমরা দেখেছি। বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে সম্প্রতি নেপাল-ফেরত এক ছাত্রী বিবিসিকে বলেছেন, 'তিনি কি কখনও বাংলাদেশে পড়তে যাওয়া নারী শিক্ষার্থীদের কাছে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিলেন? আমরা সেখানে কত কষ্ট করে লেখাপড়া করি, তার তিনি কিছুই জানেন না। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই তিনি এ কথা বলেছেন। কঠোর পরিশ্রম করেই আমি আমার সার্টিফিকেট পেয়েছি।
আসলে এটাই বাস্তবতা এবং এটাই নেপালি সব ছাত্রী ও শিক্ষার্থীর বক্তব্য। এর জন্য বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের প্রতিবাদ করতে হয়নি। আমাদের হয়ে ওদের সন্তানরাই তা করেছে। যার জেরে মন্ত্রীর পদত্যাগ। এভাবেই ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।