Mahfuzur Rahman Manik
অদম্য
পা দিয়ে লিখে জিপিএ ফাইভ

এসএসসির ফল বেরোলো রোববার (৬ মে ২০১৮)। এ নিয়ে সোমবারের সংবাদপত্র যতটা সরব ছিল, মঙ্গলবার ততটা দেখা যায়নি। সম্পাদকীয়, একাদশ শ্রেণির ভর্তি ও অন্যান্য সংবাদ প্রকাশ হলেও আগের মতো অদম্য মেধাবীদের নিয়ে তেমন খবর চোখে পড়েনি। নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে যারা জীবনের অন্যতম পর্যায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, ভালো ফল করে, তাদের গল্প সংবাদপত্রে আগে কয়েক দিন ধরে প্রকাশ হতো। এখন তা কমে গেছে। তার পরও অনেকের খবর আসছে, অনলাইনে নানা মাধ্যমেও আমরা তাদের গল্প জানছি। পা দিয়ে লিখে জিপিএ ৫, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা জয় করে উত্তীর্ণ, দারিদ্র্য জয় করে ভালো ফল, মা-ছেলে একসঙ্গে পাস- এমন শারীরিক, আর্থিক ও বয়সের প্রতিবন্ধকতা জয় করে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর আমাদের প্রেরণা জোগায়।

অদম্য মেধাবীরা শত প্রতিবন্ধকতা জয় করে যখন একটা ধাপ অগ্রসর হয়, যখন তাদের উত্তীর্ণ হওয়ার সংবাদে আমরা আশান্বিত হই, তখনই হয়তো তারা কিংবা তাদের অভিভাবকরা শঙ্কিত হন তাদের পরবর্তী পড়াশোনার কথা ভেবে। মাধ্যমিক পেরোনোর পর স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি ও পড়াশোনার চিন্তা থাকে সবার মধ্যে। অভিভাবকের দারিদ্র্য, নিজের শারীরিক সীমাবদ্ধতা ইত্যাদির মধ্যে সংগ্রাম করে যখন কেউ পাস করে, তখন পরবর্তী পড়াশোনা নিয়ে কেউ কেউ অনিশ্চয়তায় থাকে। তাদের গল্পগুলো সংবাদমাধ্যমে এলে হয়তো কেউ এগিয়ে আসেন। কারও পড়াশোনার দায়িত্ব নেন কিংবা পড়াশোনা এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করেন।

এভাবে পড়াশোনা করে অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত। যুগ যুগ ধরে এটাই চলে আসছে। সমাজে সহৃদয় মানুষ যেমন আছেন, একই সঙ্গে নানা প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসছে। কয়েকটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর দরিদ্র-মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে নেন অনেকে। এভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দিন দিন শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। শিক্ষার বাইরে যাতে কেউ না থাকে সে জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগ। শিক্ষা ও শিক্ষাহীনতার পার্থক্য মানুষ বুঝছে। ফলে আমরা দেখছি, শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণও অনেক বেড়েছে। দরিদ্র কিংবা স্বল্পশিক্ষিত অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন।

এটা ঠিক যে, প্রতি বছর যে সংখ্যক শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও যারা উত্তীর্ণ হয়, তাদের সবার কথা সংবাদমাধ্যমে আসে না। সংবাদমাধ্যম চাইলেও হয়তো অনেকে বাইরে থেকে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা রয়েছে। ভূমিকা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের, যারা তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। যথার্থই যাদের প্রয়োজন তাদের কাছে যেন সহায়তা পৌঁছে। যেমন কোনো ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তির বিজ্ঞপ্তি দিলে সেটা সংশ্নিষ্ট শিক্ষার্থীর নজরে যাতে আসে, সেটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে পারে। কিংবা ব্যাংকগুলোও সেভাবে প্রচার করতে পারে।

সবকিছুর ঊর্ধ্বে অদম্য মনোবল। মানুষের আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই তা প্রয়োজন। যে মনোবল একবার আপনাকে এগিয়ে নিয়েছে, যে মনোবলে আপনি মাধ্যমিকের চৌকাঠ পেরিয়েছেন, তা অটুট থাকলে পরবর্তী পড়াশোনাও সহজ হয়ে যায়। বড় বড় মানুষের গল্প এমনই। পা দিয়ে লিখে যে ছেলেটি পঞ্চম শ্রেণির সমাপনীতে সর্বোচ্চ গ্রেড পেল, এবারের এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেল; তার অদম্য মনোবল আর এই ফলের প্রেরণা নিশ্চয়ই তাকে এগিয়ে নেবে। আর সমাজের সামর্থ্যবান হিসেবে এদের এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করলে আমাদেরও ভালো লাগবে।

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।