Mahfuzur Rahman Manik
খালি সিট, ভরা রাস্তা
এপ্রিল 9, 2018

কৌতুক হিসেবে হয়তো অনেকেই জানেন- বাবা-ছেলে বাসে উঠেছে, সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ বাসের মধ্যে এক লোক পাগলামি শুরু করল। ছেলে জিজ্ঞেস করছে, বাবা লোকটা কী করছে? বাবা বলছেন, লোকটা পাগল, ওর মাথায় সিট আছে। ছেলে বলল, তাহলে আমি ওই সিটেই বসব। হায় অবুঝ ছেলে হয়তো জানে না, এ যে সে সিট নয়!

ঢাকা শহরে একটি বাসে যখন সিট নেই, দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে যাচ্ছে যাত্রী, তখন হয়তো পাশেই চলছে খালি প্রাইভেটকার। তাতে অবশ্য কারও অসুবিধা নেই; কিন্তু সমস্যা যানজট। এটা কেবল ঢাকার চিত্রই নয়। অন্য শহরেও আমরা দেখছি। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ট্রাফিক সমস্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ব্রুস স্ক্যালার। তার প্রতিবেদনের শিরোনাম দিয়েছেন- এম্পটি সিটস, ফুল স্ট্রিটস অর্থাৎ খালি সিট, ভরা রাস্তা। গত শনিবার এ গবেষণার খবর দিয়েছে বিবিসি। 'হাউ দ্য ইন্টারনেট ইজ ক্লগিং আপ সিটি স্ট্রিটস' বা 'ইন্টারনেট কীভাবে রাস্তা ভারাক্রান্ত করছে' শিরোনামের খবরে তার বিস্তারিত রয়েছে। ম্যানহাটনের ট্রাফিক জ্যামের অন্যতম কারণ ইন্টারনেট। এখানে ইন্টারনেটের ভূমিকা কোথায়? সেটাও অবোধগম্য নয়। ম্যানহাটনে ইন্টারনেট অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিংয়ের পরিমাণ চার বছরে বেড়েছে ৮১ ভাগ। পুরো নিউইয়র্ক সিটিতে এখন রাইড শেয়ারিং চালকের সংখ্যা প্রায় ৬৮ হাজার। স্বাভাবিকভাবেই এটি পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলছে। তার চেয়ে বড় বিষয় যেটি গবেষণায় উঠে এসেছে, রাইড শেয়ারিংয়ের গাড়িগুলো ৪৫ ভাগ সময়ই রাস্তায় ভাড়া পাওয়ার আশায় ঘোরে। এতে অযথাই ব্যস্ত রাস্তা আরও ভারাক্রান্ত হয়। তাতে যানজট লাগাও অস্বাভাবিক নয়।

ঢাকার রাস্তায়ও এখন জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং। উবার, পাঠাও, সহজ রাইডসহ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ডেকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সহজেই মানুষ যেতে পারছে। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় উবার ঢাকায় চালু হয় ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর। এরপর কয়েকটি দেশি প্রতিষ্ঠান এ সেবা দিচ্ছে। এ রকম সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- উবার, পাঠাও, স্যাম, হ্যালো, মুভ, চলো, ইজিয়ার, গাড়িভাড়া, আমার বাইক, ট্যাক্সিওয়ালা, সহজ রাইডস, বাহন, আমার রাইড, ঢাকা রাইডার্স, ঢাকা মটো, বিডিক্যাবস, লেটস গো প্যাসেঞ্জার। সম্প্রতি চালু হয়েছে 'ও ভাই' অ্যাপ। এর মাধ্যমে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস ভাড়া করার সুযোগ থাকছে। ঢাকার বাইরে অন্যান্য শহরেও এগুলো চালু হচ্ছে।

ঢাকায় গণপরিবহনের বাইরে যারা সিএনজি বা ট্যাক্সিতে যাতায়াত করেন, অনেক সময়ই তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রাইড শেয়ারিং অ্যাপ এসে সে ভোগান্তি কমাচ্ছে নিঃসন্দেহে। আরেকটু কম খরচে ও দ্রুত যাওয়া সম্ভব এসব রাইডের মোটরসাইকেলে। তার চেয়ে বড় কথা, আপনি একেবারে বাসার সামনে থেকেই যেতে পারছেন; ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার কাছে হাজির হচ্ছে পরিবহন।

এসব সুবিধা নিঃসন্দেহে জীবনে নতুন মাত্রা আনছে। তবে ম্যানহাটনের মতো ঢাকার রাস্তায়ও যে এসব যানবাহনের ভূমিকা রয়েছে, তা বলাই যায়। এমনিতেই জ্যামের নগরী ঢাকা, তার ওপর এসব রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কিছুটা হলেও দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। যদিও বড় শহরগুলোর তুলনায় এখানে রাইড শেয়ারিংয়ের পরিবহন কম। তারপরও তা দেখার বিষয়। এখানেই নীতিমালার বিষয় আসবে। তবে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গণপরিবহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে, সিএনজি-অটোরিকশা যখন নাগালের বাইরে, যখন আপনার দ্রুত কাজে যেতে হচ্ছে, তখনই এগুলোর গুরুত্ব বোঝা যায়।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।