মূল : সেনিলা মোহাম্মদ
পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের বেপরোয়া স্বীকৃতি যে কোনো আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ট্রাম্পের আনাড়ি ইচ্ছার বাস্তবায়নের আরেক প্রমাণ। বিশ্বের কোনো দেশই পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের জোরপূর্বক দখল ও সম্প্রসারণকে সমর্থন দেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত এক জটিল সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। এ সিদ্ধান্তে কেবল আন্তর্জাতিক আইনই লঙ্ঘন হয়নি, বরং এটি সম্পূর্ণরূপে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও বহিঃপ্রকাশ; ইসরায়েলের দখল ও অবৈধ সম্প্রসারণ নীতির ফলে এমনিতেই ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য ভূমি হাতছাড়া। পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের অবৈধ সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নীতিমালাসহ আন্তর্জাতিক ঐক্য রয়েছে। এই স্বীকৃতি দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নীতিরই বরখেলাফ করল, কারণ জেনেভা কনভেনশনে কোনো অবৈধ দখলে স্বীকৃতি ও সহযোগিতা না করার কথা বলা হয়েছে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ রকম সিদ্ধান্ত নতুন নয়। এর আগে বিল ক্লিনটন ও জর্জ ডব্লিউ বুশ উভয়েই এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমনকি ১৯৯৫ সালে মার্কিন কংগ্রেসে জেরুজালেম অ্যাক্ট পাস হয়, যেখানে ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে জেরুজালেমকে 'ইসরায়েলের অবিভক্ত' রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির কথা বলা হয়। ক্লিনটন ও বুশ উভয় প্রেসিডেন্ট চেষ্টা করলেও নিরাপত্তার কারণে তখন কার্যকর হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস পরিবর্তনের শপথ নেন। ট্রাম্প তার সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন বটে।
১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করা নিয়ে বিতর্কিত 'প্রস্তাব ১৮১' গ্রহণ করে। প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে পাস হয়। প্রস্তাব পাসের সময়টায় ফিলিস্তিনে ছিল ১৩ লাখ ফিলিস্তিনি আরবের বসতি; বিপরীতে সেখানে ছিল ৬ লাখ ইহুদির বাস। এই বিভক্তির প্রস্তাব অনুসারে পরের বছরের ১ আগস্টের মধ্যে স্বাধীন ইহুদি ও আরব রাষ্ট্র গঠনের কথা ছিল। প্রস্তাবিত ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য বরাদ্দ হয় ১৪ হাজার বর্গকিলোমিটার স্থান। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ ফিলিস্তিনি আরবদের জন্য বরাদ্দ হয় সাড়ে ১১ হাজার বর্গকিলোমিটারের তিনটি এলাকা। আর জেরুজালেম ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠন করা হয় এক বিশেষ আন্তর্জাতিক অঞ্চল। এই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সিদ্ধান্ত খুবই বিতর্কিত। কারণ সমগ্র জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েলের দখলচেষ্টা ৭০ বছরেরও অধিক সময় ধরে জাতিসংঘ ও বিশ্ববাসী প্রত্যাখ্যান করে। ফলে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে তেলআবিব ব্যবহূত হচ্ছে। ১৯৬৭ সালে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের কিছু এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে আসে। এসব এলাকা আন্তর্জাতিকভাবে অধিকৃত ভূমি হিসেবে স্বীকৃত। সেখানে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন প্রযোজ্য। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পরই ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমে তাদের দখল সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে ১৯৮০ সালে আইন পাস করে।
দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের এ সম্প্রসারণ অবৈধ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের মাধ্যমে এ দখলের নিন্দা জানিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘের মাধ্যমে যখন বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের এ সম্প্রসারণ অবৈধ- তখন আইনত প্রত্যেকটি রাষ্ট্রও এর পক্ষে এবং এর বাইরে গিয়ে কোনো রাষ্ট্র এ অবৈধ দখলকে বৈধতা দেওয়া, স্বীকৃতি দেওয়া বা কোনোরূপ সহায়তা করতে পারে না।
এ অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা কেবল অবৈধ দখলকৃত এলাকায় ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বৈধতাই দিচ্ছে না, বরং যুক্তরাষ্ট্র নিজেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য রচিত তার আইন লঙ্ঘন করছে, যেটা আমরা আগেও বলেছি।
এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ইতালি ও ফ্রান্সসহ আট সদস্য রাষ্ট্রের আবেদনে একটি বিশেষ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে সবাইকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের দখল কায়েমের বিষয়ে জবাবদিহিরও সুযোগ এখনই। তা না হলে সংকট আরও বাড়বে এবং চূড়ান্তভাবে ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার হরণের মূল্য দিতে হবে সবাইকে।
ট্রাম্পকে ক্ষমতায় আনাই হয়েছে ইসরাইলের চাহিদাগুলো পুরণ করার জন্য।
ট্রাম্প কোন ভাবেই একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না। তাই তার কাছ থেকে সুদুপ্রসারী চিন্তাভাবনা প্রসুত কোন কাজ আশা করা যায় না। আগের প্রেসিডেন্টদের আমলে যা হয়নি তার আমলে তাই হবে এটাই স্বাভাবিক।
ট্রাম্প রাজনীতিতে প্রবেশের আগে যেখানে যাই করছেন তার সব কিছুর সাথেই ফাজলামো জড়িত। ব্যক্তিগত জীবনে মূল্যবোধহীন এমন একজন ব্যক্তিকেই দরকার ছিল Zionist দের। তারা তাই করেছে। নাহলে বাজে মন্তব্য আর উগ্র ধারণা পোষণ করে একজন আর যাই হোক আমেরিকার নেতা হতে পারতো না।
ধন্যবাদ সগীর ভাই।
আপনি ঠিকই বলেছেন। দুনিয়ার কেউই প্রেডিক্ট করেনি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সকল মিডিয়াকে বোকা বানিয়ে তার প্রেসিডেন্ট হওয়া বিস্ময়কর। নির্বাচনের অাগে ট্রাম্প ইসরায়েলের পক্ষে যা বলেছেন এখন সেটা বাস্তবায়ন করছেন। দুর্ভাগ্য বিশ্বের।