Mahfuzur Rahman Manik
উল্টো পথের যাত্রী
জুলাই 3, 2017
সাধারণ মানুষ বুঝে নেন উল্টোপথে কোনো ক্ষমতাবান যাচ্ছেন

উল্টো মানেই নেতিবাচক কিছু। যা সরল নয়, সহজ নয় কিংবা সঠিক নয়। তবে ঢাকা শহরে গাড়ি নিয়ে উল্টোপথে চলা সরল কিংবা সঠিক না হলেও সহজ বটে। যখন দীর্ঘক্ষণ ধরে সঠিক পথে আপনি যানজটে পড়ে আছেন, আরেকজন সহজে উল্টোপথে চলে যাচ্ছে। তার জন্য উল্টোপথই আরামদায়ক। ভিআইপি হলে তো কথাই নেই। মন্ত্রী-এমপি, প্রভাবশালীদের ধরার মতো বুকের পাটা কার আছে? দিব্যি তারা নিয়ম ভেঙে উল্টোপথে যান। ২৯ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সে কথাই পরদিন সমকালে খবর হিসেবে এসেছে, 'আমরা মন্ত্রী-এমপিরা রাস্তায় গাড়ির চাপ দেখলেই আর ধৈর্য রাখতে পারি না। তখন উল্টোপথে যাই। ভিআইপিদের এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।' যারা নিয়ম তৈরি করেন, সাধারণ মানুষকে নিয়ম মানার পরামর্শ দেন, তারাই নিয়ম ভাঙেন। পুলিশ তাদের ধরবেন কি, অনেক সময় দেখা যায় পুলিশই মন্ত্রী-এমপি-ভিআইপিদের পাহারা দিয়ে উল্টোপথে নিয়ে যান। সাধারণ মানুষ তাকিয়ে থাকে, বুঝে নেন কোনো ক্ষমতাবান যাচ্ছেন। এ তালিকায় যেমন মন্ত্রী-এমপি আছে, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস আছে, হয়তো কিছু সাংবাদিকও যান, পুলিশ ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও এ রকম অনেকের উল্টোপথে যাওয়া বিচিত্র নয়। সাধারণ মানুষও যে নিয়ম ভেঙে উল্টোপথে যায় না, তা নয়। তারাও যায়। কিন্তু তাদের জরিমানার ভয় থাকে। অনেক সময় আবার ক্ষমতাবানদের গাড়ি উল্টোপথে চললে কোনো কোনো মানুষও সে সুযোগ নেন। তবে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহন ও বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে উল্টোপথে চলার অনুমতি নিশ্চয় ট্রাফিক আইনে রয়েছে। বেআইনিভাবে উল্টোপথে গাড়ি চলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে, অনেক সময় যানজট সৃষ্টি হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাকলীতে উল্টোপথে আসা পুলিশবাহী মিনিবাসের ধাক্কায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াজ উদ্দিন নিহত হন। গত বছরের মার্চে উত্তরায় সিটি করপোরেশনের আবর্জনাবাহী একটি গাড়ি উল্টোপথে গিয়ে চাপা দিলে আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ রকম দুর্ঘটনার দৃষ্টান্ত থাকলেও কমছে না উল্টোপথে যাওয়ার প্রবণতা। অনেকেরই মনে থাকার কথা, কয়েক বছর আগে উল্টোপথে গাড়ি ঠেকাতে মন্ত্রীপাড়ার কাছে হেয়ার রোডে বসানো হয় 'প্রতিরোধ' নামে আধুনিক এক যন্ত্র। যার ধারালো ধাতব কাঁটা উল্টো দিক দিয়ে প্রবেশ করা গাড়ির চাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফুটো করে দিত। বলাই বাহুল্য, সে উল্টোপথে চলতে গিয়েই চাকা ফুটো হয় মন্ত্রিপরিষদের এক সদস্যের। তা নিয়ে কথা ওঠে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকেও। অনেক সময় পুলিশের সদিচ্ছা থাকলেও তারা পারেন না। খোদ ট্রাফিক পুলিশের কথাই এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এসেছে, 'মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা যদি আইন না মেনে উল্টোপথে যান, তখন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, বাধা দিলেও নানাভাবে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়।' অবশ্য মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এ কথাও সমকালের এক প্রতিবেদনে এসেছে, 'উল্টোপথে গাড়ি চললেই তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে। মন্ত্রী অথবা ভিআইপির যার গাড়িই হোক না কেন_ সবার বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' আসলে সবার জন্য একই ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া এ বেআইনি কাজটি বন্ধের পথ নেই। তা না হলে যেভাবে দিন দিন ভিআইপি ও যানজট বাড়ছে, তাতে মানুষ যাবে কোথায়? উল্টোপথে চলা যদি ক্ষমতা প্রদর্শনের উদাহরণ হয়, সবলের চিহ্ন হয়, বল প্রয়োগের মাধ্যম হয়, তা দুঃখজনক। একটি সভ্য শহর, সমাজ ও সুন্দর ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়তে এ অপসংস্কৃতি বন্ধের কোনো বিকল্প নেই।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।