Mahfuzur Rahman Manik
গৃহহীন মানুষ : ঢাকা-লন্ডন এক কাতারে
এপ্রিল 1, 2017
ঢাকার ফুটপাত

মানুষ আছে অথচ কোথাও থাকে না, ঘুমায় না- এ রকমটা চিন্তা করা অকল্পনীয়। এর জন্য একটা বাসস্থানের প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যায়, কিছু মানুষ আছে যাদের বাসস্থান নেই, ফুটপাতে কিংবা খোলা কোনো জায়গায় ঘুমায়। রাস্তার পাশেই পরিবারের সবাই মিলে বাস করছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। এরপরও বাসস্থানহীন থাকছে মানুষ। এ চিত্র হয়তো আমরা বাংলাদেশে স্বাভাবিক হিসেবে নিতে পারি। কিন্তু উন্নত বিশ্বেও গৃহহীন থাকবে মানুষ, তা বিস্ময়কর।
বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের মতো ইউরোপ-আমেরিকা তথা উন্নত বিশ্বেও ফুটপাতে থাকছে মানুষ। তারই সত্যায়ন করছে ২২ মার্চ যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন, 'হোয়াট ক্যান দ্য ইউকে লার্ন ফ্রম হাউ ফিনল্যান্ড সলভড হোমলেসনেস? অর্থাৎ যুক্তরাজ্য গৃহহীন সমস্যার সমাধানে ফিনল্যান্ড থেকে যা শিখতে পারে। গার্ডিয়ানে তার আগের দিন খবর ছিল, 'হোমলেসনেস এন্ড হাউজিং প্রবলেমস রিচ ক্রাইসিস পয়েন্ট ইন অল ইইউ কান্ট্রিজ- এক্সেপ্ট ফিনল্যান্ড'- মানে ফিনল্যান্ড ছাড়া সব ইউরোপীয় দেশে গৃহহীন ও আবাসন সমস্যা সংকটে রূপ নিয়েছে। লন্ডন, প্যারিস, ব্রাসেলস, ডাবলিন, ভিয়েনা, এথেন্স, ওয়ারশ ও বার্সেলোনার মতো ইউরোপের বড় বড় শহরে এ সমস্যা প্রকট। আমেরিকাও পিছিয়ে নেই, ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স টু অ্যান্ড হোমলেসনেস নামক বেসরকারি সংস্থার জরিপ অনুযায়ী ২০১৬ সালে আমেরিকায় গৃহহীন লোকের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার। প্রায় পাঁচ লাখ লোক ফুটপাতে, গাড়িতে, পার্কে, আশ্রয়কেন্দ্র্রে রাত যাপন করে। বাংলাদেশে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ঠিক কত তার জরিপ সেভাবে নেই। তবে জাতিসংঘের তথ্যমতে, আমাদের ১০ লাখ মানুষ গৃহহীন। বস্তিতে বাস করে ৪০ লাখ মানুষ। সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের মতে, বাংলাদেশের ছোট-বড় সব শহরেই ৩০ শতাংশ মানুষ বস্তি ও ফুটপাতে বাস করে।
বাংলাদেশে নদীভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভিটা হারায় মানুষ। আবার দারিদ্র্য নিয়ে শহরে এসে উচ্চমূল্যের ভাড়ায় অনেকেই বাসায় থাকতে পারে না। তখন ফুটপাত ও বস্তিই ভরসা। উন্নত বিশ্বে অবশ্য গৃহহীন হওয়ার কারণ ভিন্ন। মানসিক সমস্যা, মাদকাসক্তিসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় সেখানে মানুষ গৃহহীন হয়। অন্য দেশগুলোতে দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে উদ্বাস্তু হচ্ছে মানুষ।

লন্ডনের ফুটপাত

গৃহহারা মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করতে অবশ্য প্রত্যেক দেশই তৎপর। উন্নত বিশ্বে তো বটেই বাংলাদেশেও গুচ্ছগ্রাম নির্মাণসহ সরকারের তরফ থেকে নানাভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিত করার কথা বলছে সরকার। গার্ডিয়ান ফিনল্যান্ডের উদাহরণ টেনেছে। আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন হলেও ইংল্যান্ডের দিক থেকে ফিনল্যান্ড আদর্শ। ফিনল্যান্ড ইউরোপের হাউজিং ফার্স্ট মডেলকে অনুসরণ করে সরকার, সিটি কর্তৃপক্ষ ও এনজিওর সমন্বিত সহায়তায় সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করেছে। তারা কেবল স্বল্পমেয়াদে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেনি বরং অনেক বছর ধরে জাতীয়ভাবে পরিকল্পনা করে এটা সম্ভব করেছে। বাংলাদেশও আবাসন নিশ্চিতের বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এগোচ্ছে। তারপরও শহরে ক্রমবর্ধমান মানুষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের ভাবার বিষয়।
তবে স্বস্তির কারণ বোধ হয় গৃহহীন মানুষ যেমন ঢাকায় রয়েছে, তেমনি লন্ডনের মতো শহরেও রয়েছে। এখানে উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত সবাই এক কাতারে এবং চ্যালেঞ্জটিও সবার।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।