মূল: রুশনারা আলী
স্যাটেলাইট থেকে তোলা মিয়ানমারের দুটি ছবি অনেক কথা বলছে। দুটিই সকালে তোলা, উভয়টি রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের একই গ্রামের ছবি। প্রথম ছবি তোলা হয়েছে ২০১৪ সালে। দেখা যাচ্ছে, কার্যত রাষ্ট্রহীন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি। শতাধিক ঘর সড়ক ও গাছের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে যেন শুয়ে আছে। আর দ্বিতীয় সেট ছবি তোলা হয়েছে দুই মাস আগে, যাতে ঘরবাড়ির কোনো অস্তিত্বই নেই; আগুনে পোড়ামাটির ওপর সব একাকার হয়ে আছে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সেখানকার তিনটি ভিন্ন গ্রামের ৪৩০টি ঘরবাড়ি ধ্বংসের ছবি দেখিয়ে জাতিসংঘের কাছে বলছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের মাধ্যমে নিজেদের ভূমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করছে।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গা মুসলমানদের এলাকার কাছে মিয়ানমার সীমান্তে ৯ অক্টোবর ৯ সীমান্তরক্ষী নিহত হওয়ার ঘটনার পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সন্দেহ থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, রোহিঙ্গা নারী ধর্ষিত হচ্ছে। এভাবে দিন দিন নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছেই। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রায় দশ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও শরণার্থীদের সূত্র মতে, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী শত শত ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, নির্বিচারে গ্রেফতার ও নারীদের ধর্ষণের জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছে। জাতিসংঘ এই তালিকায় নির্যাতন, প্রাণদণ্ড ও মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টিও যুক্ত করেছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জোর করে রাখার আশ্রয় শিবিরগুলোর চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ।
মিয়ানমারে অনেক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গা অন্যতম। আনুমানিক দশ লাখ রোহিঙ্গা বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশটিতে বাস করে। অথচ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সুদীর্ঘকাল ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০১২ সালে সংঘটিত দাঙ্গায় এক লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়। এর পরের বছর আমি রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল ও মিয়ানমার ক্যাম্পেইন ইউকের সঙ্গে মিয়ানমার সফরে যাই। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এ রকম নৃশংস আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কীভাবে পালিয়ে যায় সে গল্পগুলো আমরা তখন শুনেছি। রাখাইন রাজ্যে কিছু ক্যাম্পে জোর করে রোহিঙ্গাদের বাস করতে হয়। সেগুলোতে তাদের মানবেতর বাস। জীবন রক্ষাকারী মানবিক সাহায্য ও স্বাস্থ্যসেবার অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
আমি জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর পরিচালিত পোকতোর একটি ক্যাম্পে নৌকা করে পেঁৗছি। সেখানকার স্মৃতি এখনও জ্বলজ্বল করছে। ক্যাম্পটি যেন মানুষের বিষ্ঠায় ঢাকা। শিশুরা যেখানে শীতল হওয়ার জন্য অসহনীয় গরম পানিতে গোসল করছে, তার কয়েক মিটার দূরেই মরা ইঁদুর ভাসছে। প্রতিদিন সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের শিকার হয়ে বাস করা মানুষগুলোর অসহায়, ভীতিকর মুখচ্ছবি এখনও আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। চিকিৎসার অভাবে শিশুর মৃত্যু ও প্রসবের সময় নারীর মৃত্যুর ঘটনাগুলোর কথা আমার এখনও মনে পড়ে।
বার্মা ক্যাম্পেইন ক্যাম্প ইউকের তথ্যানুসারে ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর জাতীয় সম্প্রদায় ক্যাটাগরিতে ১৮২৪ সালের আগে যারা মিয়ানমারে বাস করেছিল তারাই নাগরিকত্ব পায়। ২০১৪ সালে মিয়ানমারে জাতীয় আদমশুমারিতে মুসলমানদের প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা হিসেবে রোহিঙ্গা বলে অনুমতি প্রদান করে। কিন্তু পরে সরকার তাদের স্বীকৃতি না দিয়ে বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গারা স্পষ্টতই বৈষম্য ও অবহেলার শিকার হয়। তাদের শিক্ষা ও সমান চাকরির সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। সামান্য স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে দিন দিন তারা এ রকম দুঃসহ অবস্থার সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে আমি মিয়ানমারের হাসপাতালে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে দেখেছি, কীভাবে রোগীদেরও ধর্মের ভিত্তিকে পৃথক রাখা হয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে নৌকায় করে বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পেঁৗছার আশা করে। গত পুরো বছর ধরেই পরিস্থিতি যখন ক্রমাবনতি হচ্ছে, তখন এ রকম হাজারো রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রাণের আশায় দুঃসাহসিকভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়। জাতিসংঘের তথ্য মতে, তাদের অনেকে প্রায়শই সাগরে পাচারকারীদের দ্বারা আটক হন। এমনকি অনেকে চোরাকারবারিদের দ্বারা মুক্তিপণের জন্য প্রহৃত হন।
মিয়ানমারে গত বছরের ঐতিহাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে আশা করা হয়েছিল, ৫০ বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটবে। সে নির্বাচনের পরও কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সে নির্বাচনের আট মাস আগে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট সব অস্থায়ী কার্ড বাতিল করে রোহিঙ্গাদের পরিচয়হীন রাখে, যাতে তারা ভোট দিতে না পারে।
নির্বাচনে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সান সু চির জয়লাভের পরও অবস্থার উন্নয়ন ঘটেনি। যদিও সু চি ১৫ বছর গৃহবন্দি ছিলেন, তাকে প্রেসিডেন্ট হতে দেওয়া হয়নি; কেবল স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে রাখা হয়। সবাই আশায় বুক বেঁধেছিল অন্তত শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের অধিকারী অং সান সু চি রোহিঙ্গা অন্যান্য নির্যাতিত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবেন। যাই হোক, মিয়ানমারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও সামরিক বাহিনীর হাতেই রয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এমনকি তাদের চিকিৎসা, সহযোগিতা ও সুরক্ষা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সেখানে সাংবাদিকদেরও প্রবেশাধিকার নেই।
দুই সপ্তাহেরও আগে ৭০ জন ব্রিটিশ এমপি ইউকে পররাষ্ট্র সচিব বরিস জনসনের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, রাখাইনে পূর্ণ মানবিক সহায়তা ও প্রবেশাধিকার প্রদানে যাতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে। আমরা এখনও তার উত্তর আশা করছি। ব্রিটেনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের উচিত, জরুরি ভিত্তিতে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ শোনা, সেখানে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার অনুসন্ধান করা। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা। মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদেরও শান্তিতে বসবাসের অধিকার রয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সেখানকার তিনটি ভিন্ন গ্রামের ৪৩০টি ঘরবাড়ি ধ্বংসের ছবি দেখিয়ে জাতিসংঘের কাছে বলছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের মাধ্যমে নিজেদের ভূমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করছে।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গা মুসলমানদের এলাকার কাছে মিয়ানমার সীমান্তে ৯ অক্টোবর ৯ সীমান্তরক্ষী নিহত হওয়ার ঘটনার পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সন্দেহ থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, রোহিঙ্গা নারী ধর্ষিত হচ্ছে। এভাবে দিন দিন নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছেই। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রায় দশ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও শরণার্থীদের সূত্র মতে, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী শত শত ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, নির্বিচারে গ্রেফতার ও নারীদের ধর্ষণের জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছে। জাতিসংঘ এই তালিকায় নির্যাতন, প্রাণদণ্ড ও মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টিও যুক্ত করেছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জোর করে রাখার আশ্রয় শিবিরগুলোর চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ।
মিয়ানমারে অনেক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গা অন্যতম। আনুমানিক দশ লাখ রোহিঙ্গা বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশটিতে বাস করে। অথচ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সুদীর্ঘকাল ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০১২ সালে সংঘটিত দাঙ্গায় এক লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়। এর পরের বছর আমি রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল ও মিয়ানমার ক্যাম্পেইন ইউকের সঙ্গে মিয়ানমার সফরে যাই। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এ রকম নৃশংস আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কীভাবে পালিয়ে যায় সে গল্পগুলো আমরা তখন শুনেছি। রাখাইন রাজ্যে কিছু ক্যাম্পে জোর করে রোহিঙ্গাদের বাস করতে হয়। সেগুলোতে তাদের মানবেতর বাস। জীবন রক্ষাকারী মানবিক সাহায্য ও স্বাস্থ্যসেবার অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
আমি জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর পরিচালিত পোকতোর একটি ক্যাম্পে নৌকা করে পেঁৗছি। সেখানকার স্মৃতি এখনও জ্বলজ্বল করছে। ক্যাম্পটি যেন মানুষের বিষ্ঠায় ঢাকা। শিশুরা যেখানে শীতল হওয়ার জন্য অসহনীয় গরম পানিতে গোসল করছে, তার কয়েক মিটার দূরেই মরা ইঁদুর ভাসছে। প্রতিদিন সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের শিকার হয়ে বাস করা মানুষগুলোর অসহায়, ভীতিকর মুখচ্ছবি এখনও আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। চিকিৎসার অভাবে শিশুর মৃত্যু ও প্রসবের সময় নারীর মৃত্যুর ঘটনাগুলোর কথা আমার এখনও মনে পড়ে।
বার্মা ক্যাম্পেইন ক্যাম্প ইউকের তথ্যানুসারে ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর জাতীয় সম্প্রদায় ক্যাটাগরিতে ১৮২৪ সালের আগে যারা মিয়ানমারে বাস করেছিল তারাই নাগরিকত্ব পায়। ২০১৪ সালে মিয়ানমারে জাতীয় আদমশুমারিতে মুসলমানদের প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা হিসেবে রোহিঙ্গা বলে অনুমতি প্রদান করে। কিন্তু পরে সরকার তাদের স্বীকৃতি না দিয়ে বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গারা স্পষ্টতই বৈষম্য ও অবহেলার শিকার হয়। তাদের শিক্ষা ও সমান চাকরির সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। সামান্য স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে দিন দিন তারা এ রকম দুঃসহ অবস্থার সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে আমি মিয়ানমারের হাসপাতালে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে দেখেছি, কীভাবে রোগীদেরও ধর্মের ভিত্তিকে পৃথক রাখা হয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে নৌকায় করে বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পেঁৗছার আশা করে। গত পুরো বছর ধরেই পরিস্থিতি যখন ক্রমাবনতি হচ্ছে, তখন এ রকম হাজারো রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রাণের আশায় দুঃসাহসিকভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়। জাতিসংঘের তথ্য মতে, তাদের অনেকে প্রায়শই সাগরে পাচারকারীদের দ্বারা আটক হন। এমনকি অনেকে চোরাকারবারিদের দ্বারা মুক্তিপণের জন্য প্রহৃত হন।
মিয়ানমারে গত বছরের ঐতিহাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে আশা করা হয়েছিল, ৫০ বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটবে। সে নির্বাচনের পরও কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সে নির্বাচনের আট মাস আগে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট সব অস্থায়ী কার্ড বাতিল করে রোহিঙ্গাদের পরিচয়হীন রাখে, যাতে তারা ভোট দিতে না পারে।
নির্বাচনে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সান সু চির জয়লাভের পরও অবস্থার উন্নয়ন ঘটেনি। যদিও সু চি ১৫ বছর গৃহবন্দি ছিলেন, তাকে প্রেসিডেন্ট হতে দেওয়া হয়নি; কেবল স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে রাখা হয়। সবাই আশায় বুক বেঁধেছিল অন্তত শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের অধিকারী অং সান সু চি রোহিঙ্গা অন্যান্য নির্যাতিত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবেন। যাই হোক, মিয়ানমারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও সামরিক বাহিনীর হাতেই রয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এমনকি তাদের চিকিৎসা, সহযোগিতা ও সুরক্ষা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সেখানে সাংবাদিকদেরও প্রবেশাধিকার নেই।
দুই সপ্তাহেরও আগে ৭০ জন ব্রিটিশ এমপি ইউকে পররাষ্ট্র সচিব বরিস জনসনের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, রাখাইনে পূর্ণ মানবিক সহায়তা ও প্রবেশাধিকার প্রদানে যাতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে। আমরা এখনও তার উত্তর আশা করছি। ব্রিটেনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের উচিত, জরুরি ভিত্তিতে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ শোনা, সেখানে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার অনুসন্ধান করা। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা। মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদেরও শান্তিতে বসবাসের অধিকার রয়েছে।
- রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
- সমকালে প্রকাশিত, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬
- ই-সমকাল হতে দেখুন
- লেখক: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি
- ছবি: অনলাইন, গার্ডিয়ান
ট্যাগঃ নির্যাতন, মানবাধিকার, মিয়ানমার, মুসলমান, রোহিঙ্গা