Mahfuzur Rahman Manik
চা, কফি কিংবা ফিকা
জানুয়ারী 18, 2016

Tea-Fikaএটা হয়তো মানুষের বিনয়েরই প্রকাশ, যখন কাউকে দাওয়াত দেন চা কিংবা ডাল-ভাতের কথা বলেন। বড় আয়োজন হলে ডাল-ভাতের প্রসঙ্গ আসে। কিন্তু সচরাচর সবাই চায়ের দাওয়াতই দেন। এমনকি এক দেশের প্রধানমন্ত্রী আরেক রাষ্টীয় প্রধানকেও চায়ের দাওয়াত দেন। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের চা-চক্রের কথা শোনা যায় অহরহ। কয়েকজন একত্র হলে খাওয়ার অনিবার্য উপাদান চা। আড্ডা ছাড়াও অনেকের চা ছাড়া দিনই শুরু হয় না। ‘অদ্ভুত চা-খোর’ গল্প তো অনেকের জানা। ঠিক আমাদের এ চায়ের মতোই অনেকটা সুইডেনের ‘ফিকা সংস্কৃতি’। এ বিষয়ে ১৩ জানুয়ারি সাংবাদিক এলিজাবেথ হটসন বিবিসিতে লিখেছেন, ‘ইজ দিস দ্য সুইট সিত্রেক্রট টু সুইডিশ সাকসেস?’ তথা ‘সুইডিশদের সফলতার গোপন রহস্য কি মিষ্টি?’। শিরোনামে মিষ্টির কথা এলেও তিনি আসলে লিখেছেন ফিকা নিয়ে। ফিকা হলো একত্রে বসে গল্প-গুজবে কফি, কেক বা মিষ্টিজাতীয় কিছু খাওয়া। সুইডেনের অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের জন্য রয়েছে বাধ্যতামূলক ফিকা বিরতি, সে সময় প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকেই পানীয় পরিবেশন করা হয়। তাদের বিশ্বাস, এতে জনশক্তির কর্মমতা বাড়ে। পরিসংখ্যানও বলছে, বিশ্বের অন্যতম উৎপাদনমুখী শ্রমিক সুইডেনের। ঐতিহ্যগতভাবে ফিকা সাতটি ঘরোয়া কেকের সমন্বয়ে তৈরি হলেও এখন তার অন্যতম উপাদান কফি; যা কেবল সুইডেন নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই জনপ্রিয়। বলা চলে পানীয় হিসেবে কফি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় এর কদর অনেক। তার পরেই চায়ের স্থান। আমরা ‘চা সংস্কৃতি’র কথা বলছি বটে, তবে চা পানকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় ইংল্যান্ড থাকলেও বাংলাদেশ নেই। অথচ এখানে চায়ের এত তোড়জোড়। চায়ের জন্য হয়তো ‘চায়ের কাপে ঝড়’ও উঠতে পারে। তবে ভালো বিষয় হলো, চা চীন থেকে এলেও এটি আমাদের অন্যতম অর্থকরী ফসল। সিলেটের চায়ের খ্যাতি দুনিয়াজোড়া। পাটের পর ফসল রফতানিতে চা শীর্ষে। যদিও আমাদের চা শ্রমিকরা নানাভাবে বঞ্চিত। বিভিন্ন দাবিতে তাদের আন্দোলন চলছে। কর্তৃপক্ষ তাদের সম্মানজনক জীবনের জন্য যৌক্তিক দাবি মেনে নেবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। তা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। চা, কফি কিংবা ফিকা যা-ই বলা হোক এসব উপকারী বটে। ব্যক্তিকে চাঙ্গা রাখতে এগুলো সাহায্য করে। কাজের মাঝে একটু বিরতি যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি এসবে চুমুক দেওয়া কর্মীদের সজীব রাখে বৈকি। আর কয়েকজন একত্র হয়ে কথা বললে মনও ভালো হয়ে যায়। এসব কাজে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করতে সক্ষম। তাছাড়া আমাদের এখানে চায়ের সঙ্গে ব্যবহৃত শ্বব্দগুলোও অনেকটা স্বস্তিদায়ক। দীর্ঘ সময় এক নাগাড়ে কাজ করার পর ‘চা বিরতি’ বলা হলে নিশ্চয়ই সবার হাফ ছেড়ে বাঁচার মতো অবস্থা হবে। চা-চক্র মানেই ক্লান্তিকর একঘেয়ে জীবনে একটু আয়েশ। workমূল কথা অবশ্য কাজ। কাজের ক্ষেত্রে এসব পানীয় সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলেই হয়তো এদের দাম সবখানে। কাজের পর অবসর, কাজের ফাঁকে চা-কফি কাজের স্বার্থেই প্রয়োজন। কোনো প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে চালাতে কিংবা শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এসব দরকার। কাজ না করে চা, কফি কিংবা ফিকা বিরতি কার্যকর কিছু নয়। তার কথাও কেউ লিখবে না। অনেকের কাছে অপরিচিত ফিকা আমাদের সামনে এসেছে কেবল সে সূত্র ধরেই। সুইডেনের সফলতার গোপন রহস্য যদি ফিকা হয়, আমাদের চা কেন তা হবে না!

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।