Mahfuzur Rahman Manik
ঢাবির ছারপোকা
জুলাই 15, 2015

du_bedbug_campaignছারপোকা খবরের অনুষঙ্গ হিসেবে সংবাদমাধ্যমে নানা সময়ে হাজির হয়। বিভিন্ন সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে ছারপোকা প্রসঙ্গ এসেছে। তবে এবারের খবরটি ব্যতিক্রমই বলতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে ছারপোকার বিরুদ্ধে অভিযানের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। এখন খবর বলছে, হল কর্তৃপক্ষ এ অভিযানে নেমেছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও শিক্ষার্থী নিবাসে ছারপোকার উৎপাত কতটা রয়েছে। সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ঘুমুতে গিয়ে রক্তচোষা ছারপোকার তীক্ষষ্ট কামড় কতটা বেদনাদায়ক তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। সে ছারপোকার বিরুদ্ধে স্বয়ং হল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চয়ই স্বস্তির খবর! ১২ জুলাই ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের 'ডিইউ ডর্ম ইন ব্যাটল উইথ বেডবাগস!' ঢাবি হলের ছারপোকার সঙ্গে যুদ্ধ শিরোনামের প্রতিবেদনটি সে খবরই দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ ছারপোকা নিধন কর্মসূচি শুরু করেছে। হল প্রভোস্ট বলছেন, হলের অনেক আবাসিক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা জানার পর এই কর্মসূচি হাতে নেন। হলের কর্মচারীরা ভেতরকার সব ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে এবং কীটনাশক ছিটিয়ে ছারপোকা নিধনের চেষ্টা করছে। কাঁথা, বালিশ, মশারির মধ্যে ও তোশকের নিচে ছারপোকা পালিয়ে থাকে। দিনে দেখা না গেলেও রাতের অন্ধকারে এদের বিচরণ। বিশেষ করে সবাই যখন লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে যায়, তখনি রক্তচোষার দল বেরিয়ে পড়ে। ঘুমন্ত মানুষের শরীর থেকে এরা রক্ত খায়। ছারপোকা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। স্বাভাবিক জীবনযাপনে অসুবিধা সৃষ্টি করে। এমনকি অনেক রোগের কারণ হতে পারে।
ছারপোকার বিচরণ অবশ্য বিশ্বব্যাপী। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় হল, আবাসিক হোটেলেও এদের উৎপাতের খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। হাফিংটন পোস্ট এ বছরের গোড়ার দিকে ছারপোকাপ্রবণ আমেরিকার দশটি শহরের তালিকা সংবলিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে শিকাগো, ডেট্রয়েট, লস অ্যাঞ্জেলেস প্রভৃতি শহরের নাম উঠে এসেছে। তবে ছারপোকার ব্যাপারে তারা কতটা সতর্ক সেটা বোঝা গেল এনজে ডট কমে প্রকাশিত সেখানকার নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির এক খবরে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত যে খবরটি বলছে, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির এক হলের দুটি রুমে ছারপোকা পাওয়া যাওয়ার পর সে রুমের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কয়েকদিনের জন্য অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিয়ে তাদের রুম ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ছারপোকামুক্ত করার পরই সে রুমে ফিরে নেওয়ার কথা বলেছে। সে উদাহরণ অবশ্য আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। দেশের charpokaবিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলগুলোতে বলা চলে ছারপোকার নিরাপদ আবাস। এর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত পর্যায়েই শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যে অভিযান চালায়। বিশেষ করে নিজেদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র রোদে দেওয়া বা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করে। ক'দিন ভালো থাকলেও আবার শুরু হয় রক্তচোষাদের আনাগোনা। এখন সেখানে হল কর্তৃপক্ষ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য, পড়াশোনার পরিবেশ সর্বোপরি হলের পরিবেশ ঠিক রাখতে এ রকম উদ্যোগ জরুরিও বটে। সবার জন্য এ উদ্যোগ অনুকরণীয় হতে পারে। হল কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তিগত অভিযানেই ছারপোকা দমন করা দরকার। না হলে রক্তচোষাদের এভাবে আর কত রক্ত দান!

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।