Mahfuzur Rahman Manik
হিতে বিপরীত
এপ্রিল 1, 2015
copy-bihar
ভারতের বিহারে পরীক্ষাকেন্দ্রের দেয়াল বেয়ে উঠে নকল সরবরাহ। ছবি: টাইমস অব ইন্ডিয়া

নকল করে পরীক্ষায় পাস করা এখন অচিন্তনীয়। এমনকি আগে পাবলিক পরীক্ষায় নকলের বিষয়টি আমাদের প্রজন্মের জন্যও 'শোনা কথা'। অগ্রজরা নিশ্চয়ই ভালো জানবেন। তবে নকলের অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। অবশ্য ভারতের চিত্র এখনও ভিন্ন। সম্প্রতি সেখানকার বিহারে নকলেরই এক আশ্চর্য ছবি দেখা গেছে। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয় ছবিটি। যেটি দেখাচ্ছে, পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং বন্ধু-বান্ধবরা ভবনের দেয়াল বেয়ে উঠে নকল সরবরাহ করছে। ২১ মার্চ প্রকাশিত এ ছবি-সংশ্লিষ্ট খবর বলছে, দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় নকল সরবরাহের জন্য পুলিশ বিহারের বৈশালী ও ভোজপুরে গুলি ছোড়ে। সেখান থেকে প্রায় একশ' জনকে গ্রেফতার করে। এর আগে ও পরে টাইমস অব ইন্ডিয়া এ সংক্রান্ত অন্তত ছয়টি প্রতিবেদন ও নিবন্ধ প্রকাশ করে। সব মিলে জানা যায়, গ্রেফতারের সংখ্যা প্রায় তিনশ'। এ ছাড়া কমপক্ষে ৭৫০ পরীক্ষার্থী নকলের অভিযোগে বহিষ্কার হয়।
বিহারে এ পরীক্ষায় ১২শ'র অধিক কেন্দ্রে ১৪ লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। দেয়াল বেয়ে নকল সরবরাহের ছবিটি ছড়িয়ে পড়লে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার অবশ্য বলেছেন, এটা বিহারের সার্বিক চিত্র নয়। আর রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সাহায্য না করলে তো সরকার অসহায়। এখানেই বোধ হয় আমাদের সঙ্গে একটা মিল রয়েছে। সেখানে হয়তো নকল রয়েছে কিন্তু আমরাও তো প্রশ্ন ফাঁস, হুবহু সাজেশন মিলে যাওয়াসহ নানা অজুহাত থেকে মুক্ত নই। অনেকে তো ঠাট্টা করেও বলেন বরং এভাবে আমরা আরও এগিয়ে। আগে পরীক্ষায় নকল হতো, এখন প্রশ্নই ফাঁস হয়ে যায়। অনলাইনে সেসব পাওয়াও যায়। মানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চুরির ধরনে উন্নতি হয়েছে আর কি! এ ক্ষেত্রেও সেই অভিভাবকরাই যে অধিকাংশ সময় অগ্রগামী, বলাই বাহুল্য। দিন দিন অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারে সচেতনতা বেড়েছে_ এটা খুবই সত্য। একই সঙ্গে এটাও সত্য যে, অভিভাবক সবাই চান তার সন্তানকেই প্রথম হতে হবে; সর্বোচ্চ জিপিএ তাকেই পেতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সবাই প্রথম হয় না। সবাই গোল্ডেন ৫ও পায় না। তা অবশ্য কেউ কেউ বুঝি মানতে নারাজ! এ জন্য অসদুপায় অবলম্বন করেও তা পেতে চান। এ প্রবণতা তার সন্তানের জন্য যে হিতে বিপরীত_ তা বোঝা দরকার।
শিক্ষার অর্জন নিয়ে আমাদের প্রশ্ন নেই। তবে মান নিয়ে নিশ্চয়ই কথা রয়ে যায়। তার জন্য নকল বন্ধ করা আমাদের অনেক বড় সফলতা। একই সঙ্গে এ রকম অন্য সব অসদুপায় বন্ধ হওয়া জরুরি। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় প্রতি বছর জিপিএ ৫ ও পাসের হারের বৃদ্ধি দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। সরকারসহ সবার এ হারের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশা সবসময় ইতিবাচক নাও হতে পারে।
অমাদের পরীক্ষাগুলোতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন হচ্ছে_ এটা ভালো বিষয়। কিন্তু সেই সৃজনশীল প্রশ্নই যদি হুবহু সৃজনশীল (!) গাইড কিংবা সাজেশনের সঙ্গে মিলে যায় তা দুঃখজনক। যেটা এ বছরের এসএসসির কয়েকটি পরীক্ষায়ও দেখা গেছে। এসব বিষয়ে দৃষ্টি না দিলে শিক্ষার মানের চ্যালেঞ্জটা যে অধরাই থেকে যাবে।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।