সময়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সবকিছু পাল্টাচ্ছে। মানুষ সবসময়ই নিজেকে পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোরা চেষ্টা করেছে। মানুষের চলাফেরা, জীবনাচরণ, খাদ্যাভ্যাস, ভাষা, আয়-রোজগারের পথ-পদ্ধতি ইত্যাদি সবকিছুতে এ পরিবর্তন দৃশ্যমান। মানুষের সঙ্গে সঙ্গে সমাজও পরিবর্তন হয়, পরিবর্তন হয় রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি। সম্প্রতি ভারতের দি হিন্দু পত্রিকার সানডে ম্যাগাজিনে শিব বিশ্বনাথন 'সোসাইটি : নিউ ডেফিনেশনস' ফিচারে পরিবর্তিত অবস্থার নতুন সংজ্ঞা খুঁজেছেন। তিনি অবশ্য সমাজের কথা বললেও আসলে মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ সব বিষয়ই এখানে আসবে। সমাজ বোঝার জন্য ভাষা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের শব্দ চয়ন, কথা বলার ধরন বদলে যাওয়ার দৃশ্য আমাদের চোখের সামনেই দেখছি। ষাট বছর বয়সের মানুষের কথা আর সঙ্গে ত্রিশ-চলি্লশ বছরের মানুষের কথার ধরন কিন্তু এক নয়। আজকালকার প্রজন্মের সঙ্গে আবার এদের কারও কথারই হয়তো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। ডিজুস কিংবা জগাখিচুড়ি মার্কা ভাষার কথা আমরা জানি। এখানে বয়সের তফাত যতটা না বেশি, তার চেয়ে বেশি প্রভাবক সমাজ ও সময়।
বর্তমান সময়ে পরিবর্তনটা খুব দ্রুতই আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রযুক্তি মানুষের হাতে এসেছে। যোগাযোগের বাধা অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে। এখন মোবাইল যতটা সহজলভ্য হয়েছে দশ বছরেরও আগে অনেকে তা কল্পনা করতে পারেনি। ইন্টারনেটের বিস্তারও তখন হয়তো অকল্পনীয় ছিল। মোবাইলের কল্যাণে ইন্টারনেট মানুষের হাতে হাতে এসেছে। এর ফলে সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে; তরুণ প্রজন্মের মাঝে তা ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। দি হিন্দুতে অবশ্য লেখক বলছেন, সমাজ বদল হচ্ছে: কারণ মানুষের উপলব্ধিতে পরিবর্তন আসছে। একে এভাবে বলা যায়, মানুষ তার চাহিদা বুঝতে পারছে। যে চাহিদা বা প্রয়োজনকেই বলা হচ্ছে আবিষ্কারের জননী। মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে, মুহূর্তেই তার আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। যেখানে শারীরিক উপস্থিতির বিকল্প নেই সেখানে দ্রুতগতির যাতায়াতের ব্যবস্থাও হয়েছে। আজকের দিনে উন্নত বিশ্বের অনেক পরিবর্তনের ছোঁয়া আমাদের স্পর্শ করেছে। কিংবা কোনোটা এখানে সেভাবে দেখা না গেলেও কিন্তু আমরা সেগুলো জানতে পারছি। জানার দুনিয়া যেখানে অবারিত, সেখানে চিন্তার ও উপলব্ধির পরিবর্তন অনিবার্য।
সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাবক হিসেবে নানা বিষয়ই রয়েছে। গণমাধ্যমের ভূমিকা বলার অপেক্ষা রাখে না। নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল ইত্যাদির প্রভাব আমাদের লাইফ স্টাইলে দৃশ্যমান। সংবাদমাধ্যমে উপস্থাপিত নানা বিষয়ের প্রভাবও দর্শক-শ্রোতা-পাঠকের ওপর রয়েছে। এ পরিবর্তন ইতিবাচক না নেতিবাচক তা নিয়ে হয়তো বিতর্ক থাকবে। সব পরিবর্তন সবসময়ের জন্য ভালো নাও হতে পারে। আবার সব নেতিবাচকও নয়। কে কোনটা গ্রহণ করবে তা ব্যক্তির ওপরই নির্ভর করবে। তবে এটা বলাই বাহুল্য যে, চাইলেও অনেক পরিবর্তনই ঠেকানো অসম্ভব, যেমনটা অসম্ভব অতীতে ফেরা। তবে সামষ্টিক পরিবর্তনের বাইরে মানুষের ব্যক্তিগত অনেক পরিবর্তন হয়তো অনেকের কাছে অদ্ভুত ঠেকে। নানা ঘটনা, বিষয় মানুষের মনকে নাড়া দিতে পারে। হঠাৎ কারও সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়াটাও হয়তো বিচিত্র নয়। এসব পরিবর্তিত অবস্থার সংজ্ঞা আমরা কীভাবে নিরূপণ করব তা নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। এ নিয়ে অনেক থিওরিও আবিষ্কার হয়েছে। পরিবর্তন যে সর্বজনীন। একে সংজ্ঞার নির্দিষ্ট ফ্রেমে বাঁধা সম্ভব কি?
- সমকালে প্রকাশিত, ১৪ আগস্ট ২০১৪
- ই-সমকাল হতে দেখুন
- ছবি: Taetzsch's art of CHANGING EVERYTHING