অন্যদিকে শিক্ষার দিকে তাকালে আমরা দেখছি, একাডেমিক মূল বইয়ের চেয়ে এখন নোট-গাইড-শিটের প্রাধান্যই বেশি; শ্রেণীকক্ষের তুলনায় যেমন প্রাধান্য কোচিং-প্রাইভেটের। যেখানে শিক্ষাব্যবস্থায় জ্ঞানার্জনের তুলনায় পাস আর ভালো রেজাল্টই মুখ্য, সেখানে আমাদের পাঠাভ্যাস কেমন হবে তা বলাই বাহুল্য। অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পরও এখন পড়তে হয়। তবে সেটা চাকরির পড়া। এখন অনেক লাইব্রেরিতে গেলেই আশ্চর্যজনকভাবে নজরে পড়বে চাকরিপ্রার্থীদের ভিড়।
অবশ্য কেবল আজকের ইন্টারনেট দুনিয়া বলেই নয়, বাঙালির পাঠাভ্যাস নিয়ে অনেক আগ থেকেই সমালোচনা রয়েছে। অন্তত সৈয়দ মুজতবা আলীর বই কেনা প্রবন্ধ তার প্রমাণ। তার পরও আশান্বিত হওয়ার অনেক বিষয় রয়েছে। এখনও আমরা পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার কথা শুনি, অনেক জায়গায় নানা উদ্যোগে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা হয়েছে, হচ্ছে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিজুড়ে বইমেলা হয় এবং সে উপলক্ষে হাজার হাজার বই প্রকাশ হয়। এখনও সংবাদপত্রে পাঠকরা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখেন। আমরা জানি, এ আবেদন চিরন্তন। হয়তো পাঠাভ্যাস কমা-বাড়া নিয়ে কথা হতে পারে কিন্তু বইয়ের আবেদন অস্বীকার করা যাবে না।
আমাদের বরং পাঠক বাড়ানোর জন্য গুরুত্ব দিতে হবে। যারা একেবারে পড়তেই জানেন না তাদের শেখানোটা জরুরি। আর আজকের গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবসটিতে জাতিসংঘ ঠিক এ বিষয়টিতেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বকোভার বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। দিবসটি নিয়ে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেছেন, 'আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার_ অধিকসংখ্যক মানুষ যাতে বই পড়ে সাক্ষরতা অর্জন ও সহজ পাঠের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে তা নিশ্চিত করতে আমরা লেখক ও শিল্পীদের উৎসাহিত করছি। কারণ বই দারিদ্র্য দূরীকরণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।' আমাদের এখনও চলি্লশ ভাগের মতো মানুষ নিরক্ষর। তাদের সাক্ষরতা নিশ্চিতকরণই আসলে দিবসটির সার্থকতা।
বিচিত্র এ পৃথিবীর কতটুকুইবা আমরা জানি। লেখক বলেছেন, এ জানার জন্য ভ্রমণ করো, নইলে বই পড়। দুনিয়া ভ্রমণের ফুরসত আর অর্থ কোথায়। সুতরাং বই পড়াই যে আমাদের নিয়তি। আর যারা কষ্ট করে বই লিখেন তাদের স্বত্বটাও যেন আমরা স্বীকার করি।
- ছবি- ইন্টারনেট