নতুন প্রজন্মের কাছে পয়সার হিসাব অনেকটা ঐতিহ্যের মতো। এক-পাঁচ-দশ এমনকি পঁচিশ পয়সাও দেখার সুযোগ অনেকের হয়নি হয়তো। অনেকে হয়তো দেখে থাকবেন জাদুঘরে; বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকার জাদুঘর ও মুদ্রা প্রদর্শনীতে। মুদ্রা সংগ্রহের শখ কিংবা সংগ্রহ করে রাখা অন্য কারও কালেকশন থেকেও কেউ দেখে থাকতে পারেন। অথচ এসব মুদ্রার এক সময় ব্যাপক প্রচলন ছিল। দাদা-দাদি, নানা-নানিদের গল্প থেকে অনেকে জানেন, তাদের সময় পাঁচ-দশ পয়সায় অনেক কিছু পাওয়া যেত। এক-দুই টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার করা যেত, যা এখন কল্পনা করাও কঠিন। যেখানে পঁচিশ-পঞ্চাশ পয়সা থাক, এক টাকায়ও তেমন কিছু পাওয়া যায় না; যেখানে এক টাকাই দুষ্প্রাপ্য, এর বদলে অনেক জায়গায় যেখানে চকোলেট ধরিয়ে দেয়, সেখানে পয়সার কথা অবাস্তবই বটে। তবে দেখার বিষয় হলো, এভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একদিক থেকে পয়সার হিসাব, চিন্তা কিংবা লেনদেন উঠে গেলেও আরেকদিক থেকে ঠিকই ফিরে এসেছে।
সেটা অবশ্য আগের মতো ধরাছোঁয়া কিংবা সরাসরি লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে নয়। বরং এর বাইরে থেকেই প্রতিনিয়ত পয়সার হিসাব করছেন সবাই। এ হিসাব ফিরে এসেছে মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে। দিন যত যাচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলোর এ পয়সার হিসাব বরং আরও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হচ্ছে। এ হিসাবে পয়সার সঙ্গে সেকেন্ডের হিসাবটাও গুরুত্ব পাচ্ছে। এখন নানা অফারে মিনিটে পঁচিশ-ত্রিশ পয়সায় কথা বলা যায় এবং বলা চলে, দেশের কোনো অপারেটরে মিনিটে দেড় টাকা-দুই টাকার ওপরে কথা বলার চার্জ নেই। চার্জ যাই হোক তার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। দেড়-দুই টাকায় ভ্যাটের হিসাবটা অবশ্যম্ভাবীভাবে পয়সাই আসে। আর সেকেন্ডের হিসাব ধরলে চার্জ প্রতি সেকেন্ডে দুই-আড়াই পয়সা আসে। এমনকি কোনো কোনো অপারেটরের বিভিন্ন প্যাকেজে এ হিসাবে সেকেন্ডে আধা পয়সাও হয়ে যায় এবং মোবাইল অপারেটরগুলো ঠিকই চার্জ পয়সা হিসাবেই টাকা কেটে নেয়।
পয়সাবিহীন এ সময়ে এভাবে ভার্চুয়াল পয়সার হিসাব মজার বিষয়ই বটে। প্রত্যেকের গোচরে-অগোচরে এ হিসাব কাজ করে যাচ্ছে। সবাই যখন তার মোবাইলের ব্যালেন্স চেক করতে যান তখনই সেটা টের পান। ফলে বলা চলে, মোবাইল ফোনই নীরবে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পয়সার হিসাব বাস্তবে ধরে রাখছে! এটা অবশ্য বর্তমান আধুনিক দুনিয়ারই ফল। প্রযুক্তি এখন দিন দিন একেবারে মানুষের দোরগোড়ায় সহজলভ্য হিসেবে পেঁৗছে যাচ্ছে।
এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বিপরীতমুখী একটি চিত্র আমরা দেখছি, যেখানে জীবনের অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বাড়ছে অথচ একই সময়ে কমছে প্রযুক্তিগত পণ্যের মূল্য। মোবাইল ফোনই তার বাস্তব উদাহরণ। আগে চার-পাঁচ হাজার টাকায় মোবাইল ফোন কেনা অসম্ভব ছিল। এখন তা এক-দেড় হাজার টাকায়ই পাওয়া যায়। একই সঙ্গে আমরা মোবাইল ফোনে কথা বলার চার্জও কমতে দেখছি। এমনকি এ নিয়ে অপারেটরগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতাও লক্ষণীয়। এরই ধারাবাহিকতায় পয়সার পুনরাবির্ভাব।
বর্তমান প্রজন্ম মোবাইল ফোনে পয়সার এ হিসাব থেকেও আগেকার দিনের কথা স্মরণ করতে পারেন। তবে বলাই বাহুল্য, সত্যিকার পয়সা দেখতে জাদুঘরেই যেতে হবে। সবকিছুর দামই যে এখন বাড়তি!
- ছবি- ইন্টারনেট ও ল্যাপটপে তোলা
valo laghlo