Mahfuzur Rahman Manik
স্বেচ্ছাশ্রমের প্রেরণা
স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত সাঁকো

মানুষ শ্রম দেয় নিজের জন্য, আবার কখনও কখনও স্বেচ্ছায় শ্রম দেয় দেশ ও দশের জন্য। ৮ মে সমকালের লোকালয়ে প্রকাশিত 'স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ' প্রতিবেদনটিই এর প্রমাণ। প্রতিবেদনটি বলছে, সাঁকোটি নির্মাণ হয়েছে শেরপুরের কেউটা বিলের ওপর। বিলটির এক পাড়ে তিরছা পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়াসহ তিন গ্রাম। অন্যপাড়েও রয়েছে কতগুলো গ্রাম। ওই বিলে গ্রামগুলোর দরিদ্র কৃষক ও জেলে পরিবারের ৬০০ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। এসব জমির ধান, সবজি ও বিলের মাছ বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। বর্ষাকালে জলপথে ছোট নৌকা দিয়ে ধান ও সবজি পারাপার করেন গ্রামগুলোর শত শত কৃষক ও জেলে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। বৃষ্টি হলে বাড়ে দুর্ভোগ। এ অসুবিধা দূর করতে গ্রামের মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হয়েছে সাঁকো। সাঁকোটি নির্মাণে গ্রামের সব মানুষ উপকৃত হবেন, এটাই স্বাভাবিক।
এমন সময় স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি নির্মাণ হলো, যখন এ ধরনের গণউন্নয়নমূলক কাজে সবাই সাধারণত সরকার বা স্থানীয় প্রতিনিধিদের দিকে তাকিয়ে থাকে কিংবা তাদের কাছে ধরনা দেয়। এখানে গ্রামবাসী তা না করে নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ, রাস্তা সংস্কার, প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ইত্যাদি নানা কাজের খবর প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে আসে। এর মধ্যে হয়তো কোনোটি নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে স্বেচ্ছায় করেছে; আবার কোনোটি হয়তো করতে বাধ্য হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ দুর্ভোগ পোহালেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। রাস্তাঘাট-পুল-কালভার্ট দিনের পর দিন ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে থাকলেও তা সংস্কার করা হয় না। এমনকি কোথাও তার জন্য আন্দোলন করেও কাজ হয় না। এমতাবস্থায় যে স্বেচ্ছাশ্রমই ভরসা।
স্বেচ্ছাশ্রমে কিছু করা ছোট কোনো বিষয় নয়। অনেকের পক্ষেই হয়তো শ্রম দেওয়ার চেয়ে অর্থ দেওয়া সহজ। আবার শ্রম দেওয়ার ক্ষেত্রে নগদ লাভই খোঁজেন অধিকাংশ মানুষ। ফলে এভাবে স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে কোনো কিছু নির্মাণের দৃষ্টান্ত অবশ্যই প্রেরণার। এটা ঠিক যে, স্বেচ্ছাশ্রমে কাজের ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। চাইলেই তো কেউ এক কিলোমিটার সড়ক পাকা করতে পারবে না। সেখানে যেমন অর্থের বিষয় আছে তেমনি আছে সময়ের ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে ছোট ছোট কাজই আদর্শ। শেরপুরের কেউটা বিলের মতো এ রকম সাঁকো নির্মাণ কিংবা ছোট পরিসরের কোনো সড়ক সংস্কার বা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ বা অন্য কোনো ছোট কাজ করলেও তার দ্বারা মানুষের বড় উপকার হয়। বলা বাহুল্য, এখানে যেমন স্বেচ্ছাশ্রম ধর্তব্য তেমনি সবাই মিলে চাঁদা তুলে তার ব্যবস্থা করাও এর বাইরে নয়। এগুলো সমাজসেবামূলক কাজ। হতে পারে আপনার গ্রামের দরিদ্র কোনো পিতা অর্থের জন্য কন্যা পাত্রস্থ করতে পারছেন না, সেখানে সবাই মিলে তাকে সাহায্য করা। আপনার প্রতিবেশী যে শিক্ষার্থী অর্থের কারণে পরীক্ষা দিতে পারছে না তার জন্য ফির ব্যবস্থা করাও এর অন্তর্ভুক্ত। এসব ক্ষেত্রে জরুরি বিষয় হলো উদ্যোগ ও উপকারের মানসিকতা। সমস্যার সমাধানে প্রথমে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হয়। তারপর সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা সম্পাদন করে।
সরকারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের এলাকার সমস্যার সমাধান যে নিজেদের দ্বারাই সম্ভব, স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত কেউটা বিলের সাঁকো তার উদাহরণ ও অনুপ্রেরণা।

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।