নতুন বছর আসছে- এ খবরটা কি কেউ আমাদের দিয়েছে? উত্তরে কেউ হয়তো বলবেন, নতুন বছর আসার খবর দেওয়ার কী আছে; ডিসেম্বর এলেই আমরা বুঝতে পারি নতুন একটা বছর শুরু হবে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও কি তা বলবেন? মনে হয় না। কারণ ফেসবুক তার ব্যবহারকারী প্রত্যেককে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই এ খবর দিয়েছে যে, বছরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক বিষয়টা বছরের আনন্দময় মুহূর্তগুলো অ্যালবাম আকারে উপহার দিয়ে বুঝিয়েছে। তাছাড়া সংবাদমাধ্যমও ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই পুরো বছরের ঘটনা সালতামামি আকারে পাঠক-দর্শকের কাছে নানাভাবে উপস্থাপন করেছে। তাতেও নতুন বছরের একটা আমেজ সবাই পেয়ে গেছে।
নতুন বছর নিয়ে এই যে আবেগ-উচ্ছ্বাস, এটা হয়তো এ কারণেই যে, আমরা সবাই নতুন কিছু ভালোবাসি। নতুন জামাকাপড় পরলে প্রত্যেকের মধ্যে যে ভালো লাগা কাজ করে; নতুন বছরে প্রবেশের মাধ্যমেও সে ভালো লাগাটা সবাই পেতে চান। বৈশাখ এলে যেমন ব্যবসায়ীরা হালখাতা খোলেন, তেমনি অনেকেই হয়তো ইংরেজি বছরের আগে একটু পেছন ফিরে তাকাতে চান_ এক বছরে তিনি কী করলেন। তার সাফল্য-ব্যর্থতা, সুখ-দুঃখের হালখাতা খুলে বসেন। নতুন বছরের পরিকল্পনা করেন_ আগামী বছরটা তার কেমন যাবে। কী কী কাজ তিনি করবেন। হয়তো বড় টার্গেটের কতটা পূরণ করবেন তাও তার বাইরে থাকে না।
আমাদের নিজস্ব বাংলা পঞ্জিকা থাকলেও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বক্ষেত্রে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই অনুসরণ করা হয়। অফিস-আদালতের হিসাব যেমন আছে, তেমনি শিক্ষাবর্ষও এ ক্যালেন্ডার অনুসরণেই শুরু ও শেষ হয়। যারা চাকরি করেন তাদের বেতনও এ ক্যালেন্ডার অনুসারেই দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের জীবনের হিসাবটাও এ অনুসারেই আমরা রাখি। কে কোন সালে জন্মগ্রহণ করেছে, কবে মারা গেছে, কবে বিশেষ কিছু অর্জন করেছে_ তার হিসাবটাও এর বাইরে নয়। সুতরাং, যে বছরটি যখন শুরু হলো তখন তো সবার জীবনের হিসাব নিয়েই বসার কথা।
এ হিসাবে প্রতিটি বছরই গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরে ঘটে যাওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনা হয়তো আমাদের সামনে নানাভাবে এসেছে। আজকের বিশ্ব যেভাবে এগোচ্ছে প্রতিদিন_ প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনাই আমরা পরবর্তী সময়ের জন্য কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে পারছি। আগে হয়তো ব্যক্তিগত ঘটনাগুলো মনে রাখতে অনেকে কেবল ডায়েরি ব্যবহার করতেন। এখন সেটা অনায়াসে ফেসবুকে লিখে রাখাসহ ইন্টারনেটের কল্যাণে নানাভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। ফলে নিজের অতীতকে যেভাবে আমরা দেখতে পারি সেটা হয়তো নিশ্চয়ই ভবিষ্যতের পথচলা সহজ করবে।
নতুন বছরে অনেক প্রত্যাশা আমাদের। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা করতে কেউ কম করেন না। আমরা কেউই চাই না জীবনে খারাপ কিছু ঘটুক। তার পরও হয়তো নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে ঘটে যায়। এগুলোকে চ্যালেঞ্জই বলতে পারি। তাই আমাদের প্রত্যাশার সঙ্গে সম্ভাব্য আঘাত কিংবা চ্যালেঞ্জগুলোও যেন মাথায় থাকে। আর এরই মাধ্যমে আমরা খুলছি ২০১৫ সালের হালখাতা। বছরটি শুভ হোক- তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না!
- সমকালে প্রকাশিত, ১ জানুয়ারি ২০১৫
- ই-সমকাল হতে দেখুন
- ছবি: অনলাইন