শক্তি পরিমাপের একক হর্স পাওয়ার বা অশ্বশক্তি। অশ্ব বা ঘোড়ার ক্ষমতা কীভাবে শক্তি পরিমাপের একক হলো, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। সাধারণভাবে যেটা বলা হয়, ইংল্যান্ডে খনি থেকে কাঠের দুই সমান্তরাল লাইনের ওপর দিয়ে মানুষ কয়লা বোঝাই ওয়াগন টেনে নিয়ে যেত। পরে তাতে মানুষের বদলে জুড়ে দেওয়া হলো ঘোড়া। এতে কয়লা টানার গতি বাড়ল। গতি আরও বাড়াতে বাড়িয়ে দেওয়া হতো ঘোড়ার সংখ্যা। এক ঘোড়াকে বলা হলো ১ হর্স পাওয়ার বা ১ অশ্বশক্তি, ২ ঘোড়াকে ২ হর্স পাওয়ার। এভাবেই ঘোড়া থেকে তৈরি হলো হর্স পাওয়ার বা অশ্বশক্তির ধারণা। রোববার ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনের শিরোনামে সে 'হর্স পাওয়ার' অভিধাটি কৌতূহলের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে প্রসঙ্গ যখন শিশু। হর্স পাওয়ার :গিভিং কিডস দ্য রাইড অব দেয়ার লাইফ। অশ্বশক্তি কীভাবে শিশুদের জীবনকে গতি দিচ্ছে, সেটিই প্রতিবেদনটির আলোচ্য বিষয়। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ লন্ডনের ব্রিক্সটন সেখানকার পিছিয়ে পড়া এলাকা। ব্রিক্সটনে রয়েছে 'এবোনি হর্স ক্লাব'। এ ক্লাবের উদ্দেশ্য হলো, ঘোড়ায় চড়ার মাধ্যমে শিশু ও তরুণদের মাঝে শিক্ষা ও প্রত্যাশার আলো জ্বালানো। পিছিয়ে পড়া এলাকাটিতে মানুষের মাঝে রয়েছে কুসংস্কার আর হতাশা, যে কারণে সেখানে বেকারত্বের হারও অস্বাভাবিক। এ পিছিয়ে পড়াদের এগিয়ে নিতেই কাজ করছে ঘোড়ার ক্লাবটি। সেখানে কেবল ঘোড়াতেই চড়ানো হয় না বরং তাদেরকে জীবন ইতিবাচক ধারণা দিয়ে সামাজিক কুসংস্কারমুক্ত করা হয়। ঘোড়ায় চড়ার মাধ্যমে সেখানে জীবন নতুন অভিজ্ঞতা দেওয়া হয়; তেমনি ঘোড়ার সংস্পর্শে এসে অশ্বশক্তি বলীয়ান হয়ে জীবনের পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় ক্লাবটি। গার্ডিয়ানের হর্স পাওয়ার লেখার রহস্য আসলে এখানেই। প্রতিবেদনসূত্রে ক্লাবটির ওয়েবসাইটে গিয়েও তার পরিচয় পাওয়া গেল। ক্লাবটির কার্যক্রমে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে, স্কুল-কলেজ ফেরত অনেকে উৎসাহিত হয়ে স্কুল-কলেজ তথা পড়াশোনায় যোগ দিয়েছে। অনেকে সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে উৎসাহিত হচ্ছে।
ছোট উদ্যোগ কখনও কখনও অনেক বড় কাজ করে। মানুষের জীবনেও হয়তো সাধারণ কোনো বিষয় দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক ফল দেয়। হয়তো একটা শব্দ, একটা কাজ, একটা বক্তৃতাও কারও জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। সেটা বরং হর্স পাওয়ারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী।
আমাদের দেশেও উদ্যোগ কম নেই। ঝরে পড়াদের স্কুলে ফেরাতে উদ্যোগ আছে, ফুটপাতের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ আছে। ছিন্নমূল শিশুদের সুন্দর জীবনে ফেরাতে উদ্যোগ আছে। তাতে নিশ্চয়ই অনেকের জীবনই বদলে গেছে। তারপরও এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু বাইরে রয়ে গেছে। তাদের জীবনও লন্ডনের এবোনি হর্স ক্লাবের মতো কোনো উদ্যোগের সংস্পর্শে বদলে যেতে পারে। এটা হয়তো ঠিক, ইংল্যান্ডের বাস্তবতা আর বাংলাদেশের বাস্তবতা এক নয়; তারপরও উদ্যোগ কতটা অভিনব হতে পারে, তা নিশ্চয়ই আমাদের শেখার আছে।
জীবনের শিক্ষার বড় শিক্ষাবোধ হয় আত্মনির্ভরশীলতা, আত্মমর্যাদাবোধ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও অনেকক্ষেত্রে মেধায় কেউ কম নয়। সুতরাং জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কোনো বাধা নয়। বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র। সুতরাং নানাভাবেই আমরা শিখি। এ শেখাটাই শক্তি। হর্স পাওয়ারের চেয়েও তা শক্তিশালী।
- সমকাল সম্পাদকীয় বিভাগে প্রকাশিত, ১৩ আগস্ট ২০১৮
- ই-সমকাল হতে দেখুন
- অনলাইন