হারিয়ে যাওয়া মানুষ ফেসবুকে ফিরে পাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। আক্ষরিক অর্থে হারিয়ে যাওয়া কাউকে যেমন ফেসবুক ফিরিয়ে দিচ্ছে, আবার কোনো বাল্যবন্ধু, হয়তো তার সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে কথা হয় না। তার মোবাইল নম্বরসহ যোগাযোগের সব উপায় বন্ধ। অর্থাৎ সেও একপ্রকার আপনার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে- এরকম কোনো না কোনো বন্ধুকে নিশ্চয়ই আপনি ফেসবুকে পেয়েছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই এরকম ঘটনার খবর আমরা জানি, যেখানে পরিবারের কোনো সদস্য হয়তো ১০-১৫ বছর তথা দীর্ঘদিন ধরে হারিয়ে গেছে, অনেক চেষ্টার পরও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি কিন্তু ফেসবুক ঠিকই বের করে দিয়েছে। বাংলাদেশেও যে তা হচ্ছে না, তা নয়। ৭ নভেম্বরের সমকাল এমনি এক সংবাদ দিয়েছে। 'ফেসবুক ফিরিয়ে দিল নিরুদ্দেশ রাজীবকে' শিরোনামের প্রতিবেদনটি বলছে, আড়াই বছর আগে ১৭ বছরের এক মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে রাজশাহী থেকে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি পরিবার। অবশেষে কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে নিরুদ্দেশ রাজীব শুভকে ফিরে পায় পরিবার।
বলাবাহুল্য, সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুক। এক হিসাবে দেখা গেছে, ফেসবুকের প্রতিদিন সক্রিয় আইডি সংখ্যা দুই বিলিয়ন বা দুইশ' কোটি। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ প্ল্যাটফর্মে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় কাউকে পাওয়া স্বাভাবিক। কেউ এর ব্যবহারকারী না হয়েও অন্যের মাধ্যমে মিসিং প্রিয় কাউকে খুঁজে বের করা অসম্ভব নয়। আলোচ্য রাজীবের ঘটনাই তার প্রমাণ। বগুড়ার এক ফুটপাতে মানসিক প্রতিবন্ধী এ ছেলেটি অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল। তা দেখে স্থানীয় একজন 'বগুড়া অনলাইন রক্তদান সংগঠন'কে খবর দেয়। তারা রাজীবকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। উদ্ধার রাজীব তার নাম-ঠিকানা বলতে না পারলেও ওই সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা ছবি তুলে শেয়ার করে। পরে রাজীব নাম-ঠিকানা বলে, সে অনুযায়ী ছবি-নাম-ঠিকানাসহ পুনরায় তারা ফেসবুকে দেয়। ফেসবুকের ওই পোস্ট রাজীবের মামার দৃষ্টিগোচর হয়। এরপরই তিনি তার বোন ও বোনজামাইকে নিয়ে বগুড়া যান। হাসপাতালে অনেক দিন পর হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে দেখে মা কেঁদে ফেলেন। পরিবারের সঙ্গে রাজীবের এ মিলনদৃশ্য নিশ্চয়ই এক আনন্দদায়ক ঘটনা। যে মা-বাবা তার সন্তানকে পেয়েছেন, তাদের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
ফেসবুকে বিচ্ছিন্নভাবে যেমন এরকম হারিয়ে যাওয়া মানুষের সন্ধান মিলছে, তেমনি এ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে। অনেক আগ থেকেই তা চলে আসছে। যেমন ২০১২ সালের এক খবরে আমরা দেখেছি. ভারতে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের খুঁজে বের করতে আহমেদাবাদের পুলিশ বিভাগ ফেসবুকের সহায়তা নেয়। সেখানে পুলিশের অপরাধ বিভাগ একটি ফেসবুক পেজ খুলেছে। কারও শিশুসন্তান হারিয়ে গেলে সন্তানের ছবি ও অন্যান্য বর্ণনা ওই পেজে শেয়ার করে। আর পুলিশ সেসব তথ্য নিয়ে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের খুঁজে পেতে সাহায্য করে। তার সফলতাও তারা পায়।
নিরুদ্দেশ মানুষের ফিরে পাওয়ার এসব ঘটনায় ফেসবুকের অবদান অনন্য। তবে তার চেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে মানুষ ও মানবিকতার। মানবিক মানুষই মূলত এগিয়ে এসেছে। রাজীবের ঘটনায় 'বগুড়া অনলাইন রক্তদান সংগঠন'কে সে ভূমিকায় দেখা গেল। ফলে মানবিকতা যতদিন থাকবে মানুষও তেমনি মানুষের পাশে দাঁড়াবে, সেখানে তার সহায়ক ভূমিকায় ফেসবুক বা যেই থাকুক না কেন। আর ফেসবুক ব্যবহার করে এরকম যে কত ভালো কাজ করা যায়, তাও কিন্তু দেখার বিষয়।