Mahfuzur Rahman Manik
যেমন খুশি তেমন চলো!

'যেমন খুশি তেমন সাজো' সম্পর্কে আমরা জানি; কিন্তু 'যেমন খুশি তেমন চলো' বিষয়টি সেভাবে পরিচিত নয়। সম্প্রতি সমকাল তারই এক চিত্র দেখিয়েছে। ৯ মে পত্রিকাটির প্রথম পাতায় একটি ছবি প্রকাশ হয়। যার ক্যাপশনে লেখা ছিল- 'যেমন খুশি তেমন চলো'। রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে পথচারী-যানবাহনের এমন যত্রতত্র চলাচল নিত্যদিনের দৃশ্য। জেব্রা ক্রসিংয়ে নিয়ম মানারও বালাই নেই। মঙ্গলবার (৮ মে) কারওয়ান বাজার এলাকার ছবি।

রাস্তাঘাটে অনেকেই নিয়ম ও দুর্ঘটনার তোয়াক্কা না করে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে রাস্তা পার হন, গাড়ি চালান। অনেক পথচারী যেমন চলাচলের সময় মোবাইলে কথা বলেন, কোনো কোনো গাড়িচালকের অবস্থাও তথৈবচ। ঢাকা শহরে ব্যস্ততম সড়কেও মানুষের ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে নিচ দিয়ে চলা, চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড়ানো ইত্যাদি যেমন হচ্ছে, তেমনি ট্রাফিক সিগন্যাল তোয়াক্কা না করে চলা, জেব্রা ক্রসিংয়ের নিয়ম না মেনেই চলছে গাড়ি। এ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল আরও এক ধাপ এগিয়ে। ফুটপাতে গাড়ি উঠিয়ে দেওয়া, রং সাইডে মোটরসাইকেল চালানো, নির্দিষ্ট গতি অনুসরণ না করে বেপরোয়া চালানো ইত্যাদি নানাভাবেই রাজপথে চলছে প্রদর্শনী 'যেমন খুশি তেমন চলো'।

নিয়ম মেনে যে কেউ চাইলে যেমন খুশি তেমন চলতে পারে। এ স্বাধীনতা নিশ্চয়ই সবার রয়েছে। আপনি আপনার রুটে আস্তে কিংবা নির্ধারিত গতিসীমায় জোরেও চলতে পারেন। হাঁটার জন্য ফুটপাত আপনার জন্য অবারিত। নির্দিষ্ট ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করা আপনার জন্যই মঙ্গলজনক। বরং ওভারব্রিজগুলোতে অপরিচ্ছন্নতা, হকার বসা কিংবা মাদকসেবীদের আড্ডা দূর করতে আপনি ভূমিকা রাখতে পারেন, প্রশাসনকে সহায়তা করতে পারেন। এর বাইরে ট্রাফিক আইন অমান্য করে 'যেমন খুশি তেমন চলো'র অধিকার কারও নেই।

আমরা দেখেছি, গত মাসের শুরুর দিকে এই কারওয়ান বাজার এলাকায়ই দুই বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় হাত হারান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব। এ ঘটনায় রাজীবকে বাঁচানোই গেল না। বাঁচানো যায়নি বাসের চাপায় পা হারানো রোজিনা আক্তারকেও। উভয় ঘটনাই গত মাসের। এর বাইরেও অনেকের হাত-পাসহ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারানোর খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তাতেও কিন্তু হুঁশ হয়নি আমাদের। সচেতন হননি গাড়িচালকরাও। যেমন খুশি তেমন চলছে সবাই।

বিভিন্ন জায়গায় আমরা লেখা দেখি, 'একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না'। এ অমোঘ সত্য বাণী কয়জনই-বা মনে রাখি। রাস্তায় বেরোলেই সবাই যেন দৌড়ে, কার আগে কে যাবে- এ নীরব প্রতিযোগিতা চলে। এমনিতেই বাংলাদেশ সড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশ। প্রায়শই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটে, মানুষ আহত হয়, মারা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কিছু বিষয় যেমন রয়েছে, তেমনি মানসিকতার সমস্যাও কম নয়। উন্নত দেশে সড়কে সাইকেলের আলাদা লেন থাকলেও আমাদের নেই। যোগ্যতা না থাকলেও অনেক সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে এখানে তেমন বেগ পেতে হয় না। রাস্তার অব্যবস্থাপনা, বেহাল, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব ইত্যাদি নানা বিষয় প্রতিনিয়তই আলোচনা হয়।

তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে সাবধানতা, সচেতনতা। চালক সচেতনভাবে গাড়ি চালালে, পথচারী সাবধান হয়ে চলাচল করলে সড়ক দুর্ঘটনা বহুলাংশেই কমে যাবে। আর জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই 'যেমন খুশি তেমন চলা' যায় না, রাস্তাঘাটে তো না-ই।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।