জেসমিন কোলম্যান
প্রতিবেদন বলছে, এ নিপীড়নের ঘটনা কেবল কোলনেই ঘটেনি বরং জার্মানির অন্যান্য শহরেও ঘটেছে। এর শিকার নারী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বিস্ময়_ 'কীভাবে এ রকমটা ঘটল!'
কোলনের বাসিন্দারা বলছেন, যে এলাকায় যৌন নির্যাতন সংঘটিত হয়েছে সে এলাকাটি আসলে অপরাধের জন্য ডেঞ্জার জোন হিসেবে পরিচিত। সেখানে পকেটমার ও চুরির ঘটনা অহরহ ঘটে। যদিও সে স্পটটি শহরের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত, যেখানে নতুন বছর উদযাপনে হাজারো মানুষকে একত্র হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। মানুষের ভিড়, কোলাহল, মাদকের ছড়াছড়ি, আতশবাজি ইত্যাদি পরিস্থিতিকে পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গিয়েছিল। অপরাধীরা সে সুযোগই কাজে লাগিয়েছিল। তারা ভিকটিমের সঙ্গে নেচে-গেয়ে তাদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল।
যদিও প্রশাসন বলছে, ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ নিপীড়নের এত ঘটনা ছিল 'অপ্রত্যাশিত'। ধারণা করা হচ্ছে, উত্তর আফ্রিকান চেহারার প্রায় এক হাজার যুবক উদ্দেশ্যমূলক দল বেঁধে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল। তারাই নারীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। সেখানে শরণার্থীদের দিকেও ইঙ্গিত অনেকের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এ ধরনের যৌন হামলার ঘটনায় কোলনের পুলিশ কর্মকর্তারা হকচকিত হয়ে যান। জার্মানির পুলিশ ইউনিয়নের প্রধান রেইনার ওয়েন্ড বলছেন, সে রাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। যদিও কোলনের পুলিশপ্রধান ওলফগ্যাঙ অ্যালবার্স জোর দিয়ে বলছেন, তারা ৭০ জন ফেডারেল পুলিশ অফিসার নিয়ে স্টেশনে ও ১৪০ কোলন পুলিশ অফিসার নিয়ে গির্জা ও সিটি সেন্টারে প্রস্তুত ছিলেন।
পুলিশের সংখ্যা যতই হোক, এটা স্পষ্ট_ তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী টমাস অবশ্য পুলিশকে দোষারোপ করে বলছেন, তারা কেবল অভিযোগের জন্য অপেক্ষা করেছে অথচ প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রসঙ্গত, কোলনের পুলিশপ্রধান অ্যালবার্স বলতে বাধ্য হয়েছেন, নববর্ষ উপদযাপনের সময় শহরে 'স্বাভাবিক অবস্থা' বিরাজ করছে বলে পুলিশ ভুল রিপোর্ট দিয়েছিল। এখন এ ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও কেউ গ্রেফতার না হওয়া দুঃখজনক। রেপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে একজন বিবিসিকে বলেন, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তিনি বলছেন, এ রকম ঘটনা খুবই আশ্চর্যজনক, এবং পুলিশের তরফ থেকে এর অবশ্যই ব্যাখ্যা দিতে হবে_ কেমন করে এ রকম ঘটতে পারল, যেখানে পুলিশ আগেই জানত অনেক মানুষের সমাগম সেখানে ঘটবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, পুলিশ চাইলে অধিক সংখ্যক সদস্য নিতে পারে, যাতে অপরাধীদের ধরতে পারে।
এ ঘটনায় উত্তর আফ্রিকান ও আরবীয় চেহারার মানুষের জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে শরণার্থীবিরোধী ক্যাম্পেইনাররা এটা বলতে সুযোগ পায়_ এটা জার্মানির শরণার্থী আশ্রয়ের ব্যর্থ নীতির উদাহরণ। কেউ কেউ বলছেন, গত বছর কয়েক লাখ শরণার্থী জার্মানিতে আশ্রয় লাভের ফলে এ ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে আসায় জার্মান সংবাদমাধ্যম বিষয়টি উপস্থাপনায় দোটানায় পড়েছে। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী অবশ্য বলেছেন. সাধারণভাবে এ ঘটনায় গড়ে শরণার্থীদের সন্দেহ করা উচিত নয়। তবে যেহেতু উত্তর আফ্রিকানদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সেহেতু তাদের অপরাধী হওয়াটা বিচিত্র নয়। কোলন শহরের মেয়র হেনরিয়েট রেকার বলছেন, যে কোনো খোলামেলা উৎসবে কীভাবে ভালো আচরণ করতে হয়; 'অন্য সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষদের' তার শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে যৌন নিপীড়নের বিষয়টি সব গোষ্ঠীর মানুষের জন্যই একটা মাথাব্যথার কারণ। মজার ব্যাপার হলো, তথ্য বলছে, জার্মানিতে সংঘটিত যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত অধিকাংশ মানুষ অভিবাসী নয়; বলছেন এক বিশেষজ্ঞ।
কোলনের এ হামলার পর মেয়র মেয়েদের নিয়মনীতি মেনে চলার তাগিদ দিয়ে আগন্তুকদের থেকে দূরে থাকার যে পরামর্শ দিয়েছেন, তার ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আইনমন্ত্রী হেইকো মাস টুইটারে লিখেছেন, এটা মেয়েদের দায়িত্ব নয়, বরং দায় অপরাধীদের। এখন সবাই বলছেন, এটা স্পষ্ট_ আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দেশব্যাপী যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সবাইকে আরও সোচ্চার হতে হবে।
- বিবিসি থেকে ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
- সমকালে প্রকাশিত, ৮ জানুয়ারি ২০১৬
- ই-সমকাল হতে দেখুন
- জেসমিন কোলম্যান: বিবিসির সাংবাদিক
- ছবি: বিবিসি