Mahfuzur Rahman Manik
হৃদরোগ চিকিৎসা হোক হৃদয় দিয়ে
জানুয়ারি 23, 2025

হৃদরোগ হৃদয়ঘটিত কোনো রোগ নয়। তবে দেশে হৃদরোগী দেখলে অনেকের হৃদয় আনন্দে নেচে ওঠাও হয়তো অস্বাভাবিক নয়। কারণ, কারও হৃদরোগ মানেই অন্য কারও জন্য অর্থের খেলা। যে কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে অনেক সময় হৃদরোগের চিকিৎসা দূরের বিষয়, রোগ নির্ণয়ের খরচ জোগানোও সহজ নয়। এনজিওগ্রাম থেকে রিং পরানো কিংবা সার্জারি– হৃদরোগ চিকিৎসার পরতে পরতে প্রয়োজন হয় অর্থের। হৃদরোগের চিকিৎসা যখন বড় বাণিজ্যের বিষয়, তখন সিন্ডিকেট গড়ে ওঠাই স্বাভাবিক।

সোমবার সমকালের শেষ পাতায় প্রকাশ হয়: ‘রমরমা হার্টের চিকিৎসাপণ্যের অবৈধ কারবার।’ প্রতিবেদনে কেবল সিন্ডিকেটের কথাই উঠে আসেনি, বরং হৃদরোগের নিম্নমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম চোরাচালান চক্রেরও সন্ধান দেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে চোরাই পথে পণ্য আনছে চক্রটি। অন্যদিকে দাম কমের কারণে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালও সেগুলো ব্যবহার করছে। অথচ স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে তাদের খবর নেই। সরকারও যে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে, তাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

নিম্নমানের হৃদরোগের চিকিৎসা সরঞ্জামের বাজার যেভাবে বাড়ছে, সেটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। হৃদযন্ত্রের মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে এ ধরনের সরঞ্জাম সুস্থতার পরিবর্তে অসুস্থতা দিতে পারে। সে জন্য স্বাস্থ্য প্রশাসনের নজর জরুরি। একই সঙ্গে হৃদরোগের চিকিৎসায় যেভাবে রোগীকে বড় খরচের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, তাও ভাবা দরকার।

ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা থেকেই দেখেছি, হৃদযন্ত্রে সামান্য সমস্যা পেলেই কোনো কোনো চিকিৎসক এনজিওগ্রাম করতে বলেন। বেসরকারি হাসপাতালে এ পরীক্ষায় ন্যূনতম ১৫ হাজার টাকা গুনতে হয়। সরকারি হাসপাতালে কিছুটা কম হলেও অন্যান্য ভোগান্তি বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ অনেক সময় সাধারণ ‘ব্লক’ দেখিয়ে রোগীকে রিং পরানো বা সার্জারিতে অনেকটা বাধ্য করা হয়। মৃদু মাত্রার হৃদরোগী কিন্তু খাদ্যাভ্যাস ও জীবন প্রণালি পরিবর্তন করেও সুস্থ থাকতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে খরচের পথটাই যেন বিকল্পহীন। ব্যতিক্রমধর্মী চিকিৎসক ও চিকিৎসাকেন্দ্র নিশ্চয় রয়েছে।
সমকালের প্রতিবেদনে যথার্থ অর্থেই তুলে ধরা হয়েছে, ‘রমরমা হার্টের চিকিৎসা’। সমকালের অনুসন্ধানে নিম্নমানের সরঞ্জাম চোরাচালান চক্রের দু’জনের পরিচয় এসেছে। এর সঙ্গে নিশ্চয় আরও অনেকে জড়িত। তারা স্টেন্ট, হৃদরোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত বেলুন, গাইডওয়্যার, ক্যাথেটার, ভাল্‌ভ, অক্সিজেনেটরসহ নানা সরঞ্জাম অবৈধভাবে আমদানি করছে।

আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। এখানে নানামুখী সংকট ও শক্তিশালী বিভিন্ন সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যার সঙ্গে কোনো কোনো চিকিৎসকও যুক্ত। সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা কিংবা বেসরকারি হাসপাতালের পাহাড়সম চিকিৎসা ব্যয় তো অনেক বড় বিষয়। সাধারণ ওষুধ নিয়ে যে ধরনের বাণিজ্য দেখা যায়, ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসক ‘ম্যানেজ’ করতে যে ব্যয় করেন বলে অভিযোগ, তা হতাশাজনকই বটে।

সরকার অন্যান্য খাতের মতো স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এ কমিশন সিন্ডিকেট নিশ্চিহ্ন করাসহ জনমুখী সুপারিশ করবে বলে প্রত্যাশা। এর বাইরে চিকিৎসকদেরও দরদি হওয়া জরুরি।

এমন অনেক চিকিৎসক আমাদের সামনে উদাহরণ ও প্রেরণা হয়ে আছেন। সেই সংখ্যা বাড়াতে না পারলে কেবল সংস্কার দিয়ে স্বাস্থ্য খাত ঠিক করা কঠিন। বিশেষত হৃদরোগের চিকিৎসা হৃদয় দিয়েই করা উচিত। অযথা খরচের হাত থেকে রোগীকে বাঁচালেও সিন্ডিকেট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। হৃদরোগীদের উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকিপূর্ণ। এর চিকিৎসাও যদি লাগামহীন খরচের পথে ধাবিত হয়, অর্থের চিন্তায় রোগীর রক্তচাপ আরও উচ্চ হতে পারে বৈ কি।

সমকালে প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।