সপ্তাহ না পেরুতেই সংঘর্ষ নিয়ে দুইবার ‘খবর’ হয়েছে ঢাকা কলেজ ও ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজ। এ দুই কলেজের পাশাপাশি মাঝে মাঝে সিটি কলেজও সংঘর্ষে জড়িয়ে খবরের পাতায় নাম লেখায়। কাছাকাছি থাকলে একটু-আধটু সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যুগের পর যুগ এই তিনটি কলেজের মধ্যে যেভাবে সংঘর্ষ চলে আসছে, সে এক বিস্ময়। এ কারণেই নাকি এসব কলেজে সংঘর্ষ বাধলে তাদের বড় ভাইরাও চলে আসেন। বড় ভাইদের সে কী প্রেষণা!
সর্বশেষ রোববারের কাজিয়ার কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর করেছে। এ দুই কলেজের মধ্যকার সংঘর্ষ মানেই তাদের পার্শ্ববর্তী রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান এবং যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া। নগরীর যানজটের আগুনে আরেকটু ঘি ঢেলে মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে দেওয়া এবং চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজির হওয়া। যেন এই ষোলকলা পূর্ণ না হলে কলেজের শিক্ষার্থীদের শক্তিমত্তা প্রমাণ করা যাচ্ছে না।
এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবারের সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা আইডিয়াল কলেজের সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে যায়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ভাবখানা এমন, তারা যেন বিজয়ের স্মারক বহন করছে। রোববার ঢাকা কলেজের গাড়ি ভাঙচুর করে কি সেই শোধ নিতে চেয়েছেন আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা? এবারের সংঘর্ষের আগের রেকর্ড ঘাঁটতে গিয়ে দেখলাম, ২০২৩ সালেও ঢাকা কলেজের সঙ্গে আইডিয়াল কলেজের সংঘর্ষ হয় এবং তখনও কলেজটির সাইনবোর্ড নিয়ে যায় ঢাকা কলেজের ছাত্ররা।
বলা যায়, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই তিন কলেজ। দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতিবেশী এই কলেজগুলো মিলেমিশে যেখানে ভালো কাজের দৃষ্টান্ত হতে পারত, সেখানে তারা নিন্দনীয় উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছে। ছাত্রসমাজের ঐক্য কতটা কার্যকরী, জুলাই অভ্যুত্থানই তার প্রমাণ। অথচ তুচ্ছ ঘটনায় এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত। এর পরিণতি শুধু মানুষের ভোগান্তিই নয় বরং নিজেদের পড়াশোনারও বারোটা বাজানো। সর্বশেষ রোববারের অঘটনে আইডিয়াল কলেজ পাঁচ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমন সংঘর্ষ ঘটতে থাকলে পরিণতিতে আহত কিংবা নিহত হওয়ার ঘটনারও আশঙ্কা রয়েছে।
আইডিয়াল কলেজের ‘সাইনবোর্ড’ বারবার ছিনিয়ে আনা যদি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে বীরত্বের উপলক্ষ হয়, সেটা হতাশার। তারুণ্যের রক্ত গরম থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার শক্তিমত্তা কোন কাজে লাগাবে, সেটা বোঝা জরুরি। মাঝে মাঝে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করার মধ্যেই যে বীরত্ব থাকে, তাও হয়তো আমরা ভুলে যাই। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে বড় সংঘর্ষ বাধিয়ে আগের প্রতিশোধ নেওয়ার এক ধরনের প্রবণতা কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে এই প্রবণতার বলি যে নিজেরাই– তা শিক্ষার্থীরা কবে বুঝবে?
দেশের তরুণদের নিয়ে এতদিন সমাজে যেসব ধারণা প্রচলিত ছিল; ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে নিশ্চয়ই সেখানে পরিবর্তন এসেছে। দেশ গঠনে আগামীর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের এখন প্রস্তুতির সময়। পড়াশোনা বাদ দিয়ে ঠুনকো অজুহাতে আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড তাদের মানায় না। বিষয়টি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদেরই প্রথম বুঝতে হবে। এক সময় পড়াশোনায় এতটা এগিয়ে থাকা কলেজটি কেন পিছিয়ে? এখন যেহেতু লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতির দাপট নেই; আমার মনে হয়, ঢাকা কলেজের অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকরা উদ্যোগী হয়ে কলেজটির হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে ভূমিক রাখতে পারেন এবং প্রতিবেশী দুটি কলেজের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিবর্তে বন্ধুত্বের আহ্বান জানাতে পারেন। তারুণ্যের অজেয় শক্তি বেহুদা ও ক্ষতিকর কাজে ব্যয় করার মানে কী?