Mahfuzur Rahman Manik
সদরঘাট, তুমি কতদূর!

বাড়িতে একটা পারিবারিক ‌'গেটটুগেদার' ছিলো গত মাসের শেষ সপ্তাহে। ঢাকা থেকে আমি আর আমার ভাগিনা মায়াজ একসঙ্গে যাই। বাড়ি যখন চাঁদপুর, রাজধানী থেকে লঞ্চে যাওয়ার জন্য সদরঘাটই ভরসা। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে লঞ্চের জুড়ি নেই। প্রতিদিন ৪০টির অধিক রুটে লঞ্চ চলাচল করে। সদরঘাট থেকেই লঞ্চে উঠতে হয়।
সে যাই হোক, ওইদিন বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে রাতের লঞ্চে রওনা দিবো। রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত লঞ্চ আছে। তারপরও বাসা থেকে বেরিয়ে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় যখন সদরঘাটের বাসে উঠি তখন রাত সাড়ে দশটা। বাসে উঠার কথা জানালাম মায়াজকে। ও ঢাকা পলিটেকনিকে পড়ে, হলে ‌থাকে; তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে বাসে উঠবে। ওখান থেকে বাসে সদরঘাট যেতে এখান থেকে সময় কম লাগারই কথা।
মিরপুর থেকে সদরঘাটের বিহঙ্গ বাস। শেওড়াপাড়া থেকে ১৫ মিনিটেই পৌছে গেলাম ফার্মগেট। রাত সাড়ে দশটার পর রাস্তায় যানজট নেই। আরো ১৫ মিনিট লাগলো গুলিস্তানের কাছে পৌছতে। মায়াজও ওদিকে বাসে উঠে গেছে। আধাঘন্টায় গুলিস্তান এসে ভাবলাম আর ১০ মিনিটেই সদরঘাট পৌছে যাব। ১১:৩০ এর লঞ্চ ধরব। বাস তো আর সদরঘাট যায় না, বাহাদুর শাহ পার্ক বা ভিক্টোরিয়া পার্ক নামিয়ে দেয়। কিন্তু গুলিস্তান থেকে বাস আর চলে না। চলে না বলতে এতক্ষণ যেভাবে বিহঙ্গের মতো দ্রুত চলছিলো তার সেই গতি নেই। হাঁটার গতিও পাচ্ছে না বাসটি। থেমে থেমে চলছে। কিংবা দাঁড়িয়ে থাকছে বেশিরভাগ।
আমার দেখা, রাত দশটার পর থেকে কিংবা তার আগ থেকেই কি-না জানি না, গুলিস্তান থেকে সদরঘাটের গাড়ি একেবারেই থেমে থেমে যায়। না, কোনো যানজট নেই। কারণ একটাই। গুলিস্তানের পর থেকে বংশাল হয়ে নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত এই অল্প পথের পুরোটাই ট্রাকে ঠাসা থাকে। রাস্তার দুই ধারে ট্রাকগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় মালপত্র নেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা রাস্তা আটকিয়ে দিব্যি মালপত্র ওঠায়। এদিকে যে যানজট লেগে থাকে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তা দেখারও যেন কেউ নেই।
এভাবে রাস্তা আটকিয়ে, মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে কেন এ অরাজকতা চলছে?
রাতে বড় বড় ট্রাক চলবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাক মাল আনা নেওয়া করবে, তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কেন রাস্তাটি দখল করবে। যদি এমন হতো রাত দশটার পর রাস্তাটি ব্যবহৃত হয় না। সাধারণ কোনো মানুষ চলাচল করে না। তাহলেও মানা যেত। অথচ গুলিস্তান থেকে সদরঘাটের রাস্তাটি একটি ব্যস্ত সড়ক। চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলার লঞ্চ রাত অন্তত ১টা পর্যন্ত ছেড়ে যায়। সারা পথ এসে যদি সবাই সদরঘাটের কাছে এসে এমন অহেতুক ভোগান্তিতে পড়ে, মানা যায়?
বাসে বসে থেকে অধৈর্য হয়ে মায়াজের সঙ্গে যখন এসব বলছি, তখন ওর বাসও আমার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। কিন্তু আমরা তখনও সদরঘাটের রাস্তার ওই ‌'ট্র্যাপ' পেরুতে পারিনি। কখনও কখনও মনে হয়ে আমরা বোধ হয় লঞ্চ পাবো না। সাড়ে বারোটায়ও ঘাটে গিয়ে উঠতে পারবো না। অবশ্য মাঝে মাঝে বাস যখন দ্রুত চলে মনে হয়, হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আবার থেমে যায়। সামনে সেই ট্রাক। ব্যবসায়ীরা আপন মনে মালপত্র উঠাচ্ছে। এভাবে থেমে থেমে চলে আমরা বারোটার প্রায় কাছাকাছি সময় গন্তব্যে পৌছি। দ্রুত একটা রিকশা নিয়ে যখন সদরঘাটে চাঁদপুরের নির্দিষ্ট লালকুঠি ঘাটে যাই তখন ১২টার লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে প্রায়। আমরা দ্রুত কোনোমতে লঞ্চে স্বস্তির পা রাখলাম।
সদরঘাটে পৌছতে দিনে ট্রাফিক জ্যাম আর রাতে ট্রাকের এই প্যারা। ট্র্যাফিক জ্যাম তাও মানা যায় কিন্তু রাতের এই ঝুটঝামেলা কেন! যাহোক, আমরা ভালোয় ভালোয় বাড়ি পৌছলাম, সেটাই প্রাপ্তি। যদিও দু'দিন পর আসার দিন আবার বাড়ি থেকে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে পৌছতে আরেক প্যারায় পড়ি। চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে পৌছতে দেরি হওয়ায় ১ ঘন্টা পরের লঞ্চে ঢাকা ফিরতে হয়। সেটা না হয় আরেকদিন লিখবো।

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।