তিনি দাতা সদস্য। কিন্তু দাতা কি শুধু দেবেন? নেবেনও তো। টাকার জোরে রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদ সদস্য হয়েছেন খন্দকার মুশতাক আহমেদ। সোমবার তাঁকে স্কুলটির ত্রিসীমানায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ধর্ষণ মামলার আসামি তিনি। অবস্থা এমন যেন, তিনি শিয়াল; প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের হয়তো মুরগি মনে করেন। সে জন্যই সেখানে তাঁর ঘেঁষতে মানা। আবার কে তাঁর কুনজরে পড়ে! কিন্তু আদালতকে এটা বলে দিতে হবে কেন? আইডিয়াল কলেজ কর্তৃপক্ষ কী কারণে এমন বিকৃত মানসিকতার ব্যক্তিকে পরিচালনা পর্ষদে রেখেছে!
ষাটোর্ধ্ব মুশতাক আহমেদের কাহিনি শুনে কারও যেমন কান্না আসবে, তেমনি হাসিও আসতে পারে। এ ঘটনায় মামলা করেন ছাত্রীর বাবা। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর মেয়ে মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ওই ছাত্রীকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে নিতেন। খোঁজ-খবর নেওয়ার নামে আসামি তাকে ‘বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন।’ অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। কিছুদিন পর তিনি ভুক্তভোগীকে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় মেয়েটিকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেন এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকাছাড়া করার হুমকি দেন। বেদনার সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করলাম, নিজ ছাত্রীকে শ্রেণিকক্ষ থেকে ডেকে দিতেন অধ্যক্ষ। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অভিভাবকরা সন্তানের জন্য নিরাপদ আশ্রয় মনে করেন। মা-বাবা ভাবেন, তাদের সন্তান শিক্ষকদের নিরাপত্তার চাদরে থেকেই বিদ্যা অর্জন করছে। সেখানে একজন প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানপ্রধান কীভাবে তাঁর সন্তানতুল্য ছাত্রীকে ‘শিয়াল’-এর কাছে যেতে দেন! তিনি কি এতটুকু বুঝতে পারেননি, কেন বারবার এ দাতা সদস্য তাঁর ছাত্রীর ‘খোঁজ নিচ্ছেন’? বস্তুত অধ্যক্ষের এমন সহযোগিতার কারণেই ওই সদস্য আশকারা পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং স্কুল প্রশাসন যেভাবে ‘ধর্ষক’-এর সহযোগী হয়ে উঠলেন, তাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা খারাপ জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই মামলায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মুশতাক আহমেদের নির্লজ্জতায় আমাদের হাসিও পায়। ছাত্রীটি হয়তো তার নাতনির বয়সী হবে। যাহোক, তারপরও মানুষের মনকে বয়সের ফ্রেমে আবদ্ধ করা যায় না। তাঁর অর্থের জোর আছে এবং তা দিয়ে দাতা সদস্য হওয়ার মতো মর্যাদার একটি টিকিটও তিনি ক্রয় করে ফেললেন। কিন্তু তিনি এতটা কাণ্ডজ্ঞানহীন যে, সে সম্মানের জায়গাকে তিনি শিয়াল হয়ে ব্যবহার করতে চাইলেন! ঘটনাটা দেখুন, ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করেছেন, তিনি মেয়েকে বাঁচাতে ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান। কিন্তু মানুষরূপী শিয়াল মুশতাক লোক পাঠিয়ে মেয়েটিকে বাবার কাছ থেকে অপহরণ করে নিয়ে যান। তাকে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রেখে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্যাতন করা হয়। এর পর তিনি মেয়েকে বিয়ে করেন। এ ঘটনা যেন বাংলা ছবির কাহিনিকেও হার মানাচ্ছে। তাঁর অর্থ-বিত্ত যেমন আছে, তেমনি লাঠিয়াল বাহিনীও কম নেই। এত কিছু থাকতেও তাকে আমরা শিয়ালরূপেই দেখছি! কোনো সভ্য দেশে এমনটা সম্ভব?
মুশতাক-চরিত্রের মানুষ সমাজে কম নেই। তাদের সহযোগীও যে কম নেই– এ ঘটনা তারও সাক্ষ্য দিচ্ছে। কিন্তু একটি স্কুল প্রশাসনে এমন মানুষ কীভাবে থাকেন? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের এ ধরনের আচরণ, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের এমন অবস্থা কাম্য হতে পারে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন ঘটনা এটাই প্রথম নয়; নানাভাবে বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় মানুষ ছেলেমেয়েকে কীভাবে নিশ্চিন্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাবেন? শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই এ ধরনের অপরাধ কমাতে পারে।