Mahfuzur Rahman Manik
নন-ক্যাডার নিয়োগে জট কেন
আগস্ট 23, 2023

সরকারি চাকরিতে পদ খালি রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। এ বছরের জুনে প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত পদের প্রায় ২৬ শতাংশ শূন্য। তার মানে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি পদ এখন খালি আছে। সরকারি শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সময় নির্দেশনা দেওয়া হলেও নিয়োগে গতি দেখা যাচ্ছে না। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক চিঠিতে ‘বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি চাকরিতে (বিসিএস ছাড়া) সরাসরি নিয়োগের শূন্য পদগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নিতে বলা হলেও কাজ হয়নি। এ চিঠি যখন দেওয়া হয় তখন পৌনে ৪ লাখ পদ শূন্য ছিল। আর দুই বছর পর এখন সেটা প্রায় ৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। তার মানে, এ সময়ের মধ্যে নিয়োগের কাজ যতটা দ্রুত হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি।
 রোববার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের নিয়োগ আটকে থাকায় বিপাকে পড়েছেন আট হাজার প্রার্থী। নিয়োগবিধি জটিলতায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে আটকে

আছে তাদের নিয়োগ। অবশেষে নিয়োগবিধি জারি হলেও নতুন করে একটি রিটে আবারও নিয়োগে স্থগিতাদেশ আসে। ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের এ সংকট অবশ্য তৈরি হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ১৫৬ জন সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ নিয়ে। তাদের নিয়োগ কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে থাকলেও হঠাৎ এলজিইডি নিয়োগ স্থগিত করতে বলায় জটিলতা তৈরি হয়। পরে তা আদালতে গড়ায়। এলজিইডির আকস্মিক এমন সিদ্ধান্তে তাদের শুধু ১৫০ জন নয়, পুরো আট হাজার প্রার্থীর নিয়োগ আটকে যায়।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগ এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে। প্রার্থী বেশি থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথমে প্রিলিমিনারি, এর পর লিখিত ও ভাইভার মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন হয়। এই তিন ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিয়োগ জটিলতায় পড়া প্রার্থীদের জন্য কষ্টের অভিজ্ঞতা। সে জন্যই আমরা দেখেছি, ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডাররা তাদের নিয়োগ আটকে যাওয়ার পর যেমন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, তেমনি আন্দোলনও অব্যাহত রাখেন।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন করে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। পিএসসি বিসিএসের পাশাপাশি অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। বিসিএস থেকে ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পান অনেকে। আবার তাদের বাইরে বড়সংখ্যক উত্তীর্ণ হন নন-ক্যাডার। নন-ক্যাডাররা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পান। সরকারের নীতিমালার আলোকে ৩১তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগ শুরু হয়। ৩৪তম বিসিএস থেকে উল্লেখযোগ্য হারে নিয়োগ দেওয়া এবং ৩৫ ও ৩৭তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে আবেদনকারীর মধ্যে প্রায় শতভাগ চাকরি পেয়েছেন বলে আমরা জানি। সর্বশেষ প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসে আমরা দেখেছি, ক্যাডার হিসেবে নিয়োগের জন্য ২ হাজার ৫২০ জনকে সুপারিশ করেছে পিএসসি। এর বাইরে ৯ হাজার ৮২১ জনকে নন-ক্যাডার হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

এখন যে প্রায় পাঁচ লাখ সরকারি পদ শূন্য; অবসরসহ অন্যান্য কারণে প্রতি বছরই এই শূন্যতা বাড়বে। এই শূন্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগের জন্য বিসিএস বড় মাধ্যম হতে পারে। ক্যাডারের পদ স্বল্প থাকলেও নন-ক্যাডারের মাধ্যমে ব্যাপক ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রতি বছর বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাধ্যমে অধিকসংখ্যক প্রার্থীকে নেওয়া যেতে পারে। একদিকে সরকারি শূন্য পদ, অন্যদিকে বেকারদের চাকরির আকুতি। উভয়ের মধ্যে সমন্বয় করা হলে বেকারদের দ্রুত কর্মসংস্থান হবে এবং সরকারি পদ পূরণের মাধ্যমে মানুষের সেবাপ্রাপ্তি সহজ হবে। শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। সরকারের এত পদ নেই। আবার সবার সরকারি চাকরির বয়সও নেই। সে জন্য চাইলেও সরকার সবার কর্মসংস্থান করতে পারবে না। সাধারণত বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানেই সর্বাধিক কর্মসংস্থান হয়। তারপরও সরকারের যে শূন্য পদ আছে, সেগুলো পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর করা দরকার। ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারে যেমনটা দেখা গেল, প্রার্থীরা যেন অযথা এমন বিপাকে না পড়েন। সে জন্য সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন জরুরি। নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএসসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পিএসসিকে সহায়তা করলে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুততর হতে পারে। এখানে সবার আন্তরিকতা ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।

সরকারি যেসব পদ শূন্যতার কারণে মানুষের সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে কিংবা অন্য কারণে জরুরি– এমন পদে নিয়োগের জন্য সরকার পৃথক উদ্যোগ নিতে পারে। সে জন্য কর্তৃপক্ষ নিজেরা হোক কিংবা পিএসসির মাধ্যমে অথবা জরুরি নিয়োগে বিশেষ কোনো বোর্ড গঠন করে প্রক্রিয়া শুরু করলে বিষয়টি সহজ হতে পারে। সরকারি চাকরিতে সুযোগ-সুবিধার কারণে মেধাবীরা সেদিকে ঝুঁকছেন। সরকারি চাকরির জন্য এমনকি তারা দীর্ঘ মেয়াদে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এসব মেধাবীকে প্রজাতন্ত্রের কাজে লাগানোর জন্য বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরির নিয়োগে যে জট আছে, তা কাটানো জরুরি। এটা ঠিক, বর্তমানে বিসিএস নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত হয়েছে। একে আরও দ্রুততর করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। 

সমকালে প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৩

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।