Mahfuzur Rahman Manik
উপজেলা নির্বাচন : মন্ত্রী-এমপির স্বজনেরই জয়!
এপ্রিল 23, 2024

বিএনপি ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলের বর্জনের মুখে অনেকটা নিরুত্তাপ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার কিছুটা আলোচনার জন্ম দিয়েছে মন্ত্রী-এমপির স্বজনকে নির্বাচন না করতে ক্ষমতাসীন দলের নির্দেশনা। তবে আপাতত তা ভালোভাবে কার্যকর হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অন্তত রোববার পর্যন্ত বহু স্থানেই সরকারি দলের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ের এ ঘোষণা উপেক্ষিত থেকে গেছে।

মন্ত্রী-এমপির স্বজনের প্রতি এ নির্দেশনা এসেছিল নাটোরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। সেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, নাটোর-৩ আসনের এমপি জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে সিংড়া উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতানোর সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছিল। শুরুতে চেয়ারম্যান পদের পাঁচ সম্ভাব্য প্রার্থী গণসংযোগ শুরু করলেও প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীদের চাপে কিছুদিন পর হঠাৎ চুপ হয়ে যান চার সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে সেখানে আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা শেষ সময়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় রুবেলের লোকজন তাঁকে তুলে নিয়ে মারধর করে। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। নাটোরের ঘটনায় সমকালের প্রতিবেদন ছিল– পলকের রাজ্যে সবাই ‘বোবা’। জুনাইদ আহমেদ পলক শেষ পর্যন্ত রুবেলকে হাসপাতালে দেখতে যান। ইতোমধ্যে মন্ত্রী-এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশ দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী অবশেষে সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

এটা স্পষ্ট যে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা দেরিই করে ফেলেছে। চার পর্বে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইতোমধ্যে তিন পর্বের তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। চতুর্থ পর্বের তপশিল ঘোষণা না হলেও প্রথম পর্বের নির্বাচন হচ্ছে ৮ মে। প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল যেখানে ১৫ এপ্রিল, সেখানে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত এসেছে ১৮ এপ্রিল। তার মানে, প্রথম পর্বে কোথাও কোথাও ওইসব স্বজনই একমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং অন্যরা হয়তো তাদের দাপটে মনোনয়নপত্র জমাই দেননি। ফলে অনেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন।

দ্বিতীয় পর্বের উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২১ মে। আর ২১ এপ্রিল রোববার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। সমকালের সোমবারের প্রতিবেদন অনুসারে, কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মো. আমিনুল ইসলাম টুটুল, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আহাম্মেদ নিয়াজ পাবেল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হোসেনেয়ারা বকুল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এ তিন প্রার্থীই সদর আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহা উদ্দিনের অনুসারী। তা ছাড়া তাদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম টুটুল ও হোসনেয়ারা বকুল ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

আমাদের মনে আছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার অনেক ঘটনা ঘটে। তখনও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছিল। সে সময় ৫ ধাপে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে ৪৭৩টি উপজেলার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা ৩২০টিতে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। এর মধ্যে ১১৫ জনই নির্বাচিত হয়েছেন বিনা ভোটে।
অন্য একটি সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে, আলোচ্য নির্দেশনার পেছনে অন্য একটি লক্ষ্য ছিল। এর মাধ্যমে যেসব নেতার সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ ক্ষীণ, তাদের উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সুযোগ দিতে চেয়েছিল ক্ষমতাসীন দলটি। বাস্তবে দেখা গেছে, স্বজনের বাইরেও এমপি-মন্ত্রীরা বেশির ভাগ স্থানে নিজের লোককেই প্রার্থী করেছেন।

আরেকটি সংবাদমাধ্যম অবশ্য বলছে, উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কঠিন বার্তা দিতে চায়। এ লক্ষ্যে মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার পুলিশের আইজি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, ইসির মাঠ প্রশাসন এবং ডিসি-এসপিদের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছে ইসি। ইসি এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য কাজ করছে। এটা ভালো; কিন্তু এই সময়ে জরুরি হলো নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা। জাতীয় নির্বাচনসহ সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো একপক্ষীয় হয়ে পড়ায় ভোটারদের আগ্রহেও ভাটা পড়েছে। ভোটারদের আস্থা ফেরানোর কাজটা নির্বাচন কমিশন কতটা করতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়। বিশেষ করে বিএনপি ও তার মিত্ররা উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলেও কোথাও কোথাও তাদের বিদ্রোহী নেতাকর্মী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। থাকবেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সে জন্যও নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার জন্য ইসির সদিচ্ছা থাকা জরুরি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, উপজেলা পরিষদ বর্তমানে এমপিদের হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণে প্রায় অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে একে হস্তক্ষেপমুক্ত রাখা প্রয়োজন। সে জন্যও মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা দরকার। শেষ পর্যন্ত দলটি তা কতটা পারবে, সেটাই দেখার বিষয়।

সমকালে প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।


Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119