Mahfuzur Rahman Manik
মানবসম্পদ উন্নয়নে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়নি
মার্চ 29, 2024

সাক্ষাৎকার: ড. সেলিম জাহান

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহযোগী সম্পাদক শেখ রোকন ও জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক।

ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ২০১৮ সালে অবসরে যান। ১৯৯২ সালে ইউএনডিপিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর একই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৭-৮২ সাল পর্যন্ত কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে বরিশাল জিলা স্কুল ও বিএম কলেজে পড়াশোনা করেছেন। সেলিম জাহান ১৯৫১ সালের ২২ জানুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।

সমকাল: স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় একটা দেশের স্বপ্ন ছিল। তখন কি মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রশ্নটিও সামনে ছিল?

সেলিম জাহান: ষাটের দশকের সংগ্রাম এবং এর পর মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফার মধ্যেও কিন্তু খেয়াল করলে মানবসম্পদের বিষয়টা দেখা যাবে। তখন দুই অর্থনীতির মধ্যে যে বঞ্চনার কথা বলা হয়েছে, এর মধ্যে মানবসম্পদের কথাও আছে। পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয় বা লাহোর বিশ্ববিদ্যালয় তখন যে আনুকূল্য পেয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেটা পায়নি। দ্বিতীয় বিষয় হলো, সে সময় পূর্ব পাকিস্তান ছিল একটি প্রদেশ।

সমকাল: আমরা তো লড়াই করছিলাম দেশের জন্য?

সেলিম জাহান: সে কারণেই প্রদেশের জন্য যে ধরনের মানবসম্পদ দরকার, দেশের জন্য সেই মানবসম্পদ পরিমাণে নয়, গুণগত দিক থেকেও অন্য রকম প্রয়োজন। এ কারণে মানবসম্পদের বিষয়টি ষাটের দশকের আন্দোলনের সঙ্গে যেমন সম্পৃক্ত ছিল, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীন দেশের সংগ্রামের সঙ্গেও ছিল। এমনকি বঙ্গবন্ধু এমন কথাও বলেছেন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো স্বাধীন দেশে যদি ভূমিকা পালন করতে চায়, জনগণের কাছে যেতে চায়, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য কিংবা নেতাকর্মীর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গিও বাড়াতে হবে।

সমকাল: স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের প্রয়োজনেও কি মানবসম্পদের প্রশ্নটা সামনে আসে?

সেলিম জাহান: স্বাধীনতার পর প্রথম আমরা একটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করি। সেটা ছিল প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। অধ্যাপক নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে সেখানে কাজ করেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক আনিসুর রহমান, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন। সবাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেখানে মানবসম্পদের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়।

সমকাল: যেমন–

সেলিম জাহান: মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার পর আমরা একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি পেয়েছিলাম। বাহাত্তর-তিয়াত্তর সালে আমাদের মূল ভাবনার জায়গা ছিল পুনর্গঠন। উন্নয়ন না। তখন প্রশ্ন আসে– পুনর্গঠনের জন্য কেমন মানবসম্পদ প্রয়োজন। পাকিস্তান আমলে যে ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো ছিল, আমলাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, স্বাধীন দেশে তা বদলাতে হবে। তখন সমাজতান্ত্রিক একটা অর্থনীতির প্রত্যাশা ছিল। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির জন্য ব্যাংক, বীমা, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান, উৎপাদন প্রতিষ্ঠান তথা আদমজী কিংবা বাওয়ানী জুট মিল– এগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। তার মানে, সরকার সেগুলোর মালিক। সে জন্য এগুলো পরিচালনার জন্য আমলাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর প্রশ্ন আসে। তাদের দক্ষতা, প্রশিক্ষণ অন্য রকম করতে হয়। সে কারণে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মানবসম্পদ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে এবং এ বিষয়ে সেখানে আলাদা একটা অধ্যায়ই ছিল। এ পরিকল্পনায় কী করে মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে হবে, কেমন মানবসম্পদ দরকার তা এসেছে, বিশেষ করে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের মুখবন্ধেও বিষয়টি এসেছে।

সমকাল: স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্য কী?

সেলিম জাহান: ভালো প্রশ্ন। সোনার মানুষ মানে সোনা দিয়ে মোড়ানো মানুষ তো নয়। বঙ্গবন্ধু বোঝাতে চেয়েছেন, যার দেশের প্রতি দরদ থাকবে, দেশপ্রেম থাকবে। দুর্নীতি-ভয়ভীতি ইত্যাদি থেকে মুক্ত হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে। বঙ্গবন্ধুর এ রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণ– সেখানে ঘাটতি ছিল। ঘাটতিটা তিন দিক থেকে ছিল। একটা হলো, যারা যুদ্ধ করেছেন, যারা প্রাদেশিক পরিপ্রেক্ষিতে আমলা ছিলেন, তাদের প্রত্যাশা বড় হয়েছে। তখন যিনি প্রাদেশিক সচিব ছিলেন, তিনি মনে করেছিলেন, একটা দেশের কেন্দ্রীয় সচিব হবেন। তখনকার আমলা সবাই যে দেশপ্রমিক ছিলেন এবং সবাই যে দেশকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, এমন নয়। পঁচাত্তরের আগে যেসব প্রতিষ্ঠান– বীমা, ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়েছিল, তখন অনেকে নিজস্ব সম্পদ-প্রতিপত্তি বাড়ানোর উপায় হিসেবে দেখেছিলেন।

সমকাল: সোনার মানুষের মধ্যে সাধারণ মানুষও কি নেই?

সেলিম জাহান: অবশ্যই। বঙ্গবন্ধু যে সোনার মানুষ বলেছেন, সেটা শুধু প্রশাসনিক কাঠামো বা নীতিনির্ধারকের জন্য না; সাধারণ মানুষকেও বোঝাচ্ছিল। সাধারণ মানুষ কখন দেশকে অগ্রাধিকার দেবে? আমি একটা কথা বলি, বঙ্গবন্ধু যদি তখন বলতেন, আপনারা ঘাস খেয়ে হলেও থাকেন। তারা তা-ই করতেন। তাদের এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কাজে লাগানোর জন্য রাজনৈতিক বক্তব্য এসেছে ঠিকই, কিন্তু প্রশাসনিকভাবে কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ে সেসব মানুষকে একত্র করে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করানোর একটা সুযোগ তৈরির দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর। কিন্তু বাস্তবে সেটা না হওয়ায় মানুষ বিযুক্ত ও বিক্ষুব্ধ হয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি, চুয়াত্তর-পঁচাত্তরের সময়ের ছবিটা এত স্পষ্ট না। নানা মাত্রিকতা ছিল এবং সেভাবেই উন্নয়ন এগিয়েছে।

সমকাল: আমরা স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার করছি। যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি, প্রাণ দিয়েছি; মানবসম্পদের দিক থেকে সেই স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে? আমরা যদি আপনাকে মার্কিং করতে বলি, ১০-এর মধ্যে আপনি কত দেবেন?

সেলিম জাহান: নাম্বার দেওয়ার আগে বিষয়টা আমি কীভাবে দেখছি, সেটা বলা উচিত। প্রথম ব্যাপার হলো, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আমাদের গড় আয়ু যেখানে ৭৩ বছর, ভারতে সেখানে ৭০ বছর, আর পাকিস্তানে ৬৭। শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। দারিদ্র্য অনেক কমেছে। আমাদের পুষ্টি বেড়েছে, শিশুদের টিকাদানের হার বেড়েছে, পানিবাহিত রোগ– কলেরা, উদরাময় ইত্যাদি থেকে মুক্তি মিলেছে। অর্জন যা হয়েছে, আমরা গর্ব করি। প্রশ্ন হলো– এ অর্জনের প্রতিফলন আমরা মানবসম্পদের মধ্যে কতটা দেখছি। সে সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচুরসংখ্যক সনদপ্রাপ্ত মানুষ পাচ্ছি। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। দ্বিতীয়ত, এই যে শিক্ষা-প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা সক্ষমতা বাড়ালাম, অথচ সেটা ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করিনি। এখানে একটা বড় ফারাক আছে। এখনও চার রকমের শিক্ষা বিরাজমান। গ্রামের বিদ্যালয়ের অবকাঠামো আর শহরের অবকাঠামো এক নয়।

সমকাল: স্বাস্থ্য খাত নিয়েও প্রশ্ন আছে।

সেলিম জাহান: শিক্ষার মতো স্বাস্থ্য খাতেও বৈষম্য ব্যাপক। সরকারি হাসপাতালে গরিবরা যায়। বেসরকারি হাসপাতাল আছে জেলা-উপজেলায়। আবার বিত্তবানরা যাচ্ছে দেশের বাইরে। তার মানে, আমি যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছি আর গরিব মানুষ যে সেবা পাচ্ছে, এর মধ্যে পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। এখানে আমার সক্ষমতা আর গরিব মানুষের সক্ষমতা এক নয়। আবার মানবসম্পদের ক্ষেত্রে শুধু আজকের কথা ভাবলেই হবে না। আগামী ২০-২৫ বছরে কী হবে, কেমন জনসম্পদ প্রয়োজন, কর্মজগতে কী পরিবর্তন আসছে– সেটাও ভাবতে হবে। যেমন ধরুন, এখন যারা ছবি তোলে, তাদের হয়তো ১০ বছর পর চাকরিই থাকবে না।

সমকাল: এটা কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) কারণে?

সেলিম জাহান: এটি এআইয়ের কারণে হতে পারে, তথ্যপ্রযুক্তির কারণেও হতে পারে। আমরা তো মোবাইল ফোন দিয়েই ছবি তুলছি। একসময় স্টুডিও ছিল, এখন সেটা কমে গেছে। এভাবে ১০ বা ২০ বছর পর বিশ্বের শ্রমবাজার বদলে যাবে। সংবাদমাধ্যমে এখনও আলোকচিত্রী বিভাগ আছে বটে, কিন্তু ধরন কিছুটা বদলে গেছে।

সমকাল: সংবাদমাধ্যমে এখন একজনই সব করছেন। রিপোর্ট, অডিও-ভিডিও সবই করছেন।

সেলিম জাহান: হ্যাঁ, এভাবেই রূপান্তর ঘটছে। পুরোনো বহু কর্মের জায়গায় নতুন কাজ যুক্ত হবে। সেগুলো বিবেচনায় রেখে শিক্ষাব্যবস্থা সাজাতে হবে। এইআইয়ের কাজ হয়তো পোশাক শিল্পেও দেখা যাবে। কিন্তু সেই প্রস্তুতি তো আমরা দেখছি না। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগের যে প্রশ্ন, অর্থাৎ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মানবসম্পদে আমাদের অগ্রগতিকে ১০-এর মধ্যে ৫ বা ৬-এর বেশি দেওয়া কঠিন।

সমকাল: মানবসম্পদের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক কতটা?

সেলিম জাহান: এখানে দুটো বিষয়– একটা হলো রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আরেকটা রাজনৈতিক অগ্রাধিকার।

সমকাল: আমরা রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা বলছি।

সেলিম জাহান: আমি দুটোই বলি। মানবসম্পদ কেমন হবে, সেটা নির্ভর করে রাষ্ট্র কী চায় তার ওপর। এখানে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখানে স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের ৪ বা ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। শিক্ষা খাতেও একই রকম। ভিয়েতনামের মতো দেশ বরাদ্দ দেয় ৮-৯ শতাংশ। আপনি এভাবে দেখে বলেন, কতটা সম্পদ মানব উন্নয়নে যাচ্ছে। খুবই কম। গত বছর বাজেটে মানবসম্পদে ২৮ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি সবই অন্তর্ভুক্ত। তার মানে, সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

সমকাল: মানবসম্পদ উন্নয়নে পিছিয়ে থাকার জন্য ছাত্র রাজনীতির বর্তমান চিত্র কতটা দায়ী?

সেলিম জাহান: প্রাসঙ্গিকভাবে বলা দরকার, আপনারা দু’জনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমিও সেখানকার ছাত্র। একটি বিষয়ে আমরা গর্ব করতে পারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা জাতির সংগ্রাম ও স্বাধীনতায় যে নেতৃত্ব দিয়েছে, এমনটা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করতে পারবে না। ধরুন, অক্সফোর্ড অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের আন্দোলনে তার ভূমিকা নেই বললেই চলে। একইভাবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েরও ভূমিকা নেই। আমাদের ছাত্র রাজনীতি সবসময় ছিল, থাকা উচিতও বটে। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করার মতো, ষাট বা সত্তর দশকে ছাত্র রাজনীতি আমাদের জাতীয় রাজনীতিকে সামনে ঠেলে দিয়েছে এবং প্রভাবিত করেছে। আমাদের মুক্তিসংগ্রামই তার প্রমাণ। অর্থাৎ ছাত্র রাজনীতির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও স্বাতন্ত্র্য ছিল।

সমকাল: নব্বই দশক পর্যন্ত আমরা সেটা দেখেছি।

সেলিম জাহান: হ্যাঁ, নব্বই দশক পর্যন্ত। এ সময়ে রাজনীতি কখনোই বৃহত্তর রাজনৈতিক সংগঠনের লেজুড়বৃত্তির সংগঠনে পরিণত হয়নি। ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কেও একই কথা।

সমকাল: বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপারেও একই কথা।

সেলিম জাহান: নিশ্চয়ই। বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপারেও একই কথা। এখন রাজনীতিকরা ছাত্রদের ব্যবহার করছে। এখন ছাত্রদের রাজনীতি মানে ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি। ছাত্রদের নিয়ে শিক্ষকরা রাজনীতি করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় করছে, সংগঠনগুলোও করছে।

সমকাল: কোনো দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার না থাকলে মানবসম্পদের উন্নয়ন সম্ভব? যেমন– রাশিয়ার কথা যদি আমরা বলি। তো আমরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে কিছুটা ছাড় দিলাম এবং উন্নয়নে এগিয়ে গেলাম…।

সেলিম জাহান: এ প্রশ্ন অনেকটা ডিম আগে না মুরগি আগে– এ রকম। কোনো জায়গায় গণতন্ত্র না থাকলে, মানবাধিকার না থাকলে মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব কিনা। সীমিত অর্থে সম্ভব বটে। কিন্তু গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে পাশে রেখে মানব উন্নয়ন হলে, সেটা বজায় রাখার যোগ্যতা থাকবে না। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উন্নয়নকে কতটা সহায়তা করে– প্রশ্ন সেটা না। এদের নিজস্ব একটা মূল্য আছে। গণতন্ত্র গণতন্ত্রের জন্যই মূল্যবান। মানবাধিকারের ক্ষেত্রেও সমান কথা। মানবসম্পদ উন্নয়ন মানে শুধু দক্ষতা বৃদ্ধি নয়; আমার কণ্ঠস্বর, আমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দ্বিমত করার স্বাধীনতাও গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য এগুলো ছাড়া সীমিত মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব হলেও তা টেকসই হবে না। ব্যাপক অর্থে বললে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ছাড়া মানব উন্নয়ন সম্ভব নয়।

সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

সেলিম জাহান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

সমকালে প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।