Mahfuzur Rahman Manik
ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইসরায়েলের
জুলাই 12, 2023

দাউদ কুত্তাব

ভাষান্তর: মাহফুজুর রহমান মানিক

ইসরায়েলের সমর্থকরা বারবার দাবি করেন, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চায় না। আসলে এটি একটি প্রপাগান্ডা। এই প্রপাগান্ডা প্রচারকারীরা বোঝাতে চায়– শান্তি আলোচনা প্রত্যাখ্যান মানে ফিলিস্তিনিরা শান্তিতে আগ্রহী নয়। ফিলিস্তিনিদের দ্বারা এই দাবিগুলো খণ্ডন করার প্রচেষ্টা ইচ্ছাকৃতভাবেই অগ্রাহ্য করা হয়। যদিও ১৯৬৭ সাল থেকে যে কোনো পরিস্থিতি, সেটা অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন হোক কিংবা ক্রমাগত ইসরায়েলি মানবাধিকার লঙ্ঘন; কোনো ব্যাপারই নয়। ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর অন্ধ সমর্থন রয়েছে। এমনকি ইসরায়েলের তৎপরতা যদিও দুই দেশের সমস্যা সমাধানের ধারণা প্রত্যাখান করলেও ওই দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে।

২০০০ সালে ক্যাম্প ডেভিড-২ বৈঠকের ব্যর্থতার পর সম্ভবত ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের ওপর সবচেয়ে বেশি আক্রমণ হয়েছিল। ২০০০ সালে ওই বৈঠকের আগে ফিলিস্তিনি নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বিষয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাককে বৈঠকে যোগদানের আহ্বান জানান। ইয়াসির আরাফাতের দ্বিধার কারণ ছিল, শান্তির জন্য কঠিন অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারে ইসরায়েলের সেই প্রস্তুতি দেখা যায়নি। আরাফাত সঠিক ভবিষ্যদ্বাণীই করেছিলেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে তাঁকে দোষারোপ করা হবে এবং যার প্রভাব হবে ভয়াবহ।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বিল ক্লিনটনের আরেকটি প্রচেষ্টা ছিল দ্য ক্লিনটন প্যারামিটার। সেটাও ব্যর্থ হয়। সেই ঘটনার দুই দশকেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। যেহেতু ইসরায়েল ক্যাম্প ডেভিড-২ চুক্তির কিছু নথি প্রকাশ করেছে; গবেষক এবং অন্যরা সত্য জানছেন। তার মানে, মার্কিন ও ইসরায়েলি নেতারা বিশ্বের কাছে মিথ্যা বলেছেন এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে সংযুক্ত করার অধিকারের ওপর ইসরায়েলের আপত্তি এবং প্রত্যাবর্তনের অধিকারের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান ছিল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। সেই নথিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাছে লেখা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর একটি চিঠি অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সেখানে এও লেখা ছিল, ইসরায়েলের উদ্দেশ্য, ইসরায়েলি সীমানার মধ্যে বসতি স্থাপনকারীদের ৮০ শতাংশকে অন্তর্ভুক্ত করা। সেই সঙ্গে তারা অতিরিক্ত অঞ্চলের ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি লিজ নেওয়ার সুযোগ গ্রহণ করবে।

সম্ভবত ওইসব নথির সবচেয়ে বেশি বিচ্যুতির জায়গা, জাতিসংঘের ১৯৪ ধারা অনুযায়ী ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ফিরে আসার অধিকার। যে অধিকার ইসরায়েল এড়াতে চায়। একই সঙ্গে এটা স্পষ্ট, হারাম আল শরিফের বাইরে ফিলিস্তিনি পুলিশের অবস্থানসহ ফিলিস্তিনি অনুরোধগুলো বৈধ ছিল; সেগুলো ইসরায়েল যেভাবে দাবি করছে ‘গেম কিলার’ ছিল না। ইতিহাস বলছে, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের চিন্তা সঠিক ছিল এই বিষয়ে। ইসরায়েলিরা ১৯৬৭ সীমান্ত মেনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়নি।

ক্যাম্প ডেভিড-২ চুক্তির ব্যর্থতার পেছনে ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের ব্যর্থতার বিষয়টি সামনে আনা হয়। সে সময় ইসরায়েলি বিরোধীদলীয় নেতা এরিয়েল শ্যারন বুঝতে পারেন, মসজিদুল আকসা হলো সমঝোতার কেন্দ্রবিন্দু। সে সময় ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে তারা ইসলামের তৃতীয় পবিত্র এই মসজিদে ঢোকে। তাদের এই উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড আল আকসা ইন্তিফাদার স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয়। সেই জাগরণ ইসরায়েল নির্মমভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ১৪১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ছয় হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়।

শব্দের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন মিথ্যা বাস্তবতার বয়ান তৈরি করে শব্দ ব্যবহার করা হয় তখন তার ব্যাপক প্রভাব তৈরি হয়। ক্যাম্প ডেভিড-২ চুক্তির বিষয়ে ক্লিনটন ও এহুদ বারাক ফিলিস্তিনি নেতাদের ব্যর্থতার যে বয়ান তৈরি করেছেন, তার প্রভাব তখন থেকেই ফিলিস্তিনিরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি যে দুই দেশের সমাধানের ওপর নির্ভরশীল– সেটা এই ঘটনার কারণে আরও কঠিন হয়ে পড়ে। উপরন্তু ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি বর্বরতা থেমে নেই। যার সর্বশেষ নজির এই সপ্তাহেই দেখা গেছে। ইসরায়েল শুধু জেনিন শিবিরকেই গুঁড়িয়ে দেয়নি, এটি এমনকি অধিকৃত ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে বুলডোজিং করে চলেছে, যা আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে কঠোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে বসতি স্থাপন এবং ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংস করার মাধ্যমে যারা সত্য দেখতে চায়, তাদেরকে দেখাচ্ছে বাস্তবে কী ঘটছে। ইসরায়েলের প্রকাশিত নথিগুলো ফিলিস্তিনি আখ্যান ব্যাখ্যা করতে পারে। কিন্তু নিহত প্রাণ ও সংকট সমাধানের আশা ফিরিয়ে আনবে না।

সমকালে প্রকাশ: ৭ জুলাই ২০২৩

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।