Mahfuzur Rahman Manik
চোখের অস্বস্তি, পরিবেশের ক্ষতি
ফেব্রুয়ারী 14, 2023

রাজধানীবাসীর দূষণ-যন্ত্রণার শেষ নেই। এ শহরে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণের পাশাপাশি চলছে দৃশ্যদূষণ। যদিও দৃশ্যদূষণ বা ভিজুয়াল পলিউশন নিয়ে আলোচনা সেই অর্থে কম। অথচ সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, দৃশ্যদূষণ ঢাকার ২৪ শতাংশ মানুষের চোখের সমস্যা সৃষ্টি করছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডোর গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, দৃশ্যদূষণের কারণে রাজধানীর প্রায় তিন লাখ শিশু চোখের রোগ ও মাথাব্যথায় ভুগছে। দৃশ্যদূষণ সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে বলে ওই গবেষণাটি বলছে।

রাজধানীজুড়ে যেখানে তারের জঞ্জাল, সেখানে দৃশ্যদূষণ অনুধাবন করা কঠিন নয়। চোখের জন্য অস্বস্তিদায়ক কিংবা বিরক্তিকর এমন আরও বিষয় রয়েছে, যেমন পোস্টার ও বিলবোর্ড। তা ছাড়া যেখানে সেখানে ময়লার ভাগাড়ও দৃশ্যদূষণের জন্য দায়ী। ঢাকার সড়কে অলিগলিতে তারের জঞ্জাল দৃশ্যমান। তারের জঞ্জাল যেমন দৃশ্যদূষণে ভূমিকা রাখছে, তেমনি বিশৃঙ্খল এসব তার দুর্ঘটনারও শঙ্কা তৈরি করছে। সৌন্দর্যহানির বিষয় বলাই বাহুল্য। সে জন্য সব ধরনের সেবার তার মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার দাবি উঠছে বারবার। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি অবশ্য এ ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য ভূগর্ভস্থ কমন নেটওয়ার্ক করতে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশনস ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক-এনটিটিএনের লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু ঝুলন্ত তার এখনও অপসারণ করা হয়নি। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও কেবল অপারেটর তথা ডিশ সংযোগ প্রদানকারীরা সড়কে জঞ্জালের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা তৈরি করছে। মাটির নিচ দিয়ে সব সেবার তার সংযোগ নিশ্চিত করলে রাজধানীবাসী এ সংকট থেকে মুক্তি পাবে।

ঢাকার রাস্তায় যেখানে সেখানে পোস্টার ও বিলবোর্ড শুধু দৃশ্যদূষণই করছে না, একই সঙ্গে সৌন্দর্যহানি ও নানামুখী সংকট তৈরি করছে। রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের প্রচারের জন্য পোস্টার সাঁটিয়ে থাকেন। বাণিজ্যিক পণ্যের প্রচার হয় পোস্টারে। বিলবোর্ডে বিশাল আকারে দেখা যায় পণ্যের বিজ্ঞাপন। এসব বিজ্ঞাপন অনেক ক্ষেত্রেই নগরবাসীকে অস্বস্তিতে ফেলে। চোখের অস্বস্তি তৈরি হয় অতিরিক্ত আলো কিংবা নিয়ন সাইনেও। তারযুক্ত অপরিকল্পিত বিদ্যুতের খুঁটি, কুয়াশাও দৃশ্যদূষণ ঘটাতে পারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যহানি করে এবং চোখের প্রশান্তি নষ্ট করে এমন অতিরিক্ত ট্রাফিক চিহ্ন কিংবা গ্রাফিতিও এর বাইরে নয়। পরিবেশ ধ্বংসকারী প্লাস্টিকের ব্যাগও রয়েছে এ তালিকায়।
আলোচ্য গবেষণায় দৃশ্যদূষণে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়টি এসেছে। এটি উদ্বেগজনক চিত্র। সড়কে যানবাহন চালানোর ক্ষেত্রে চালককে যেভাবে সব দিক থেকে কর্মক্ষম থাকতে হয়, দৃশ্যদূষণ সেখানে ব্যাঘাত ঘটায়। দৃশ্যদূষণের কারণে চালকের মধ্যে ওভারটেকিংয়ের প্রবণতা দেখা দিতে পারে কিংবা চালক বেপরোয়া হয়ে গাড়ি চালাতে পারেন। বলা বাহুল্য, সড়কে যানজটও এক ধরনের দৃশ্যদূষণ। সড়কে যানবাহনের চাপ না থাকলে সামনের দৃষ্টিতে যে প্রশান্তি আসে, যানজটের দৃশ্য সেখানে বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি করে।

দৃশ্যদূষণের জন্য যেসব বিষয় দায়ী, সেগুলো অন্য সংকটও তৈরি করছে কিংবা পরিবেশের অন্য ধরনের দূষণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে। যেমন তারের জঞ্জাল যে কোনো সময় বিশেষত পথচারীর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। পোস্টার-বিলবোর্ড সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে, ময়লার স্তূপ বায়ূদূষণ করছে, যানজট শব্দদূষণ করছে। সে জন্যই নাগরিকদের ওপর দৃশ্যদূষণের প্রভাব আরও গভীর হচ্ছে।
পরিবেশের ক্ষতি যেভাবেই হোক, সেটি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। ঘরবন্দি শিশুরা মোবাইল ফোন কিংবা অন্যান্য ডিভাইসে আসক্ত হওয়ার কারণে এমনিতেই ক্ষীণ দৃষ্টিসহ চোখের নানা সমস্যায় ভুগছে। সেখানে তারা বাইরে বের হয়ে দৃশ্যদূষণের শিকার হলে তা হবে গোদের উপর বিষফোড়ার মতো। দৃশ্যদূষণ প্রতিরোধে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিজ্ঞাপনের পোস্টার ও বিলবোর্ড নীতিমালা ছাড়াও শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে দৃশ্যদূষণ কমানো সম্ভব।

সমকালে প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।