Mahfuzur Rahman Manik
উচ্চমাধ্যমিকের যে পরিসংখ্যানটি গুরুত্বপূর্ণ
নভেম্বর 21, 2022

রোববার থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার যেসব খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, সেখানে এ বছর দুই লাখ শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে। এর কারণও স্পষ্ট। এ পরীক্ষা-সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীও পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন। বলাবাহুল্য, প্রতি বছরই আগের বছরের তুলনায় কত শিক্ষার্থী কমলো, সেটি বলা হয়ে থাকে। আমার বিবেচনায়, অন্তত এইচএসসির ক্ষেত্রে এটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ নয়। এখানে যে পরিসংখ্যানটি গুরুত্ব পাওয়া উচিত, তা হলো দুই বছর আগে কত শিক্ষার্থী এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে কিংবা ওই সময় কত শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল। এসএসসিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই বছর পর কত শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, সেটি জানলে সত্যিকার অর্থে বোঝা যেত, এ পর্যায়ে কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।

এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ১২ লাখ ৩ হাজার। ২০২০ সালে তারাই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। তখন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪৫ হাজার। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা হওয়ায় তাদের ওপর করোনার প্রভাব পড়েনি। এর পরের মাস অর্থাৎ মার্চের মাঝামাঝি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে ওই বছরের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত হয়নি। ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সময় কভিডের প্রভাব না পড়লেও ফলের ওপর কিছু প্রভাব পড়ে। যে কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন সপ্তাহ পর ৩১ মে ফল প্রকাশ হয়। সেখানে আমরা দেখেছি, প্রায় ৮৩ শতাংশ উত্তীর্ণের হারে প্রায় ১৬ লাখ শিক্ষার্থী সফলভাবে এসএসসি সম্পন্ন করে। ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন কতজন এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিচ্ছে, সেটি বরং গুরুত্বপূর্ণ।

২০২০ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৬ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে এবার এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষা দিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী। তার মানে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ঝরে গেছে। এইচএসসির খবরের সঙ্গে এই সংখ্যাটি যখন আমাদের সামনে আসবে, তখন আমরা শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারব। তাতে শিক্ষার্থীদের এত বড় অংশ কেন ঝরে পড়ল, তার কারণ চিহ্নিত করা যেমন সহজ হবে, তেমনি সে অনুযায়ী পদক্ষেপও গ্রহণ করা যাবে।

তবে তথ্য হিসেবে আগের বছর কত শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল, সেটি প্রকাশ করা যেতেই পারে। কিন্তু আগের বছর কত পরীক্ষার্থী ছিল, সেটি পরের বছরের জন্য সে অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ নয়। প্রতি বছর একইসংখ্যক শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রবেশ করতে নাও পারে। ফলে কোনো বছর বাড়বে, কোনো বছর কমবে। তুলনার প্রয়োজনে পরিসংখ্যানটি আসতেই পারে। কিন্তু একেবারে শিরোনামেই যখন বলা হয়, 'শিক্ষার্থী কমেছে ২ লাখ'; সেটি অন্য মাত্রায় চলে যায়। ফলে অন্তত এইচএসসির ক্ষেত্রে আমি মনে করি, দুই বছর আগের এসএসসির পরিসংখ্যান তুলে আনাই যৌক্তিক। এটা সাংবাদিকদের জন্য তো বটেই একই সঙ্গে শিক্ষা প্রশাসনের জন্যও জরুরি।
তবে হ্যাঁ। এ বছর যেভাবে দুই লাখের মতো শিক্ষার্থী কমেছে, সেটিও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর আগের বছরগুলোতে সাধারণত শিক্ষার্থী বেড়েছিল। যেমন এর আগের দুই শিক্ষাবর্ষে প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ৩০ হাজার থেকে ৩৩ হাজার বেড়েছিল। এবার কারণ হিসেবে অবশ্য গত মাসের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নিজেই বলেছেন, গতবার পাসের হার অনেক ভালো ছিল বলে অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে এসেছে। তা ছাড়া করোনার মধ্যে পরীক্ষার্থীদের কারও কারও বাল্যবিয়ে, কাজে যোগদানসহ বিভিন্ন ঘটনার কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। বলাবাহুল্য, শিক্ষামন্ত্রী যদি এসএসসির হিসাবটা ধরতেন, এটি আরও বড় করে সামনে আসত। ৪ লাখ শিক্ষার্থী গ্যাপের বিষয়টি আরও বড় প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়াত। তাতে আমাদের নিয়মিত ঝরে পড়ার বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে সামনে আসত। কভিড-১৯-এর কারণে শিক্ষার সর্বস্তরেই ঝরে পড়ার সমস্যায় যে বড় সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তাও হয়তো বোঝা সহজ হতো। অন্য স্তরগুলোতে এ পরিসংখ্যানটি বোঝা কঠিন হলেও এসএসসির দুই বছর পরই যেহেতু এইচএসসি পরীক্ষা হয়, সেহেতু সংবাদমাধ্যম থেকেও তা সহজে পাওয়া সম্ভব।

সমকালে প্রকাশ ৭ নভেম্বর ২০২২

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।