Mahfuzur Rahman Manik
শূন্যে ঝুলন্ত শ্রমিকের ছবিটি কী বলছে?
নভেম্বর 29, 2022

রোববার সমকালের শেষ পাতায় প্রকাশিত ছয় তালার ওপর মিপারের বাকেটে শূন্যে ঝুলন্ত শ্রমিকের ছবিটি বলছে, আমাদের নির্মাণ শ্রমিকরা কতটা অনিরাপদে কাজ করেন। ছবিটি চট্টগ্রামের। সেখানে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন ছয় তলা ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। সেখানে এক নির্মাণ শ্রমিক যেভাবে কংক্রিট মিপার বাকেটে ঝুলে নিচ থেকে ছয় তলার ছাদে ওঠেন, তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ বলার অপেক্ষা রাখে না। হাত ফসকে গেলে তার পরিণতি কী হতো! 

শ্রমিকের ঝুঁকিপূর্ণ এ ওঠানামার মতোই সেখানে নেই নিরাপত্তা বেষ্টনী। অথচ সেখানে হাজার শিক্ষার্থী চলাচল করেন এবং যে কোনো সময় নির্মাণসামগ্রী পড়ে শিক্ষার্থী আক্রান্ত হতে পারে। সমকালের প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগরের নির্মাণাধীন অধিকাংশ ভবনের অবস্থাই তথৈবচ। ভবন থেকে পড়ে গত ৯ মাসে অন্তত ৩০ জনের প্রাণহানির অঘটনের চিত্রটিও বলছে অসতর্কতার দাম কত? 

বলা বাহুল্য, এমনটা শুধু চট্টগ্রামের দৃশ্যই নয়; রাজধানীর অবস্থাও এরকম। সে জন্যই গত আগস্টে গার্ডার ধসে পাঁচজনের মৃত্যুর দৃশ্য আমরা দেখেছি। তাছাড়া এর আগে উত্তরার ওই বিআরটি প্রকল্পে গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী ও বিমানবন্দর এলাকায় এবং আবদুল্লাহপুরে একই দিনে দুইবার গার্ডার ধসের ঘটনায় ছয়জন আহত হন। তাছাড়া এ বছরের মে মাসে মেট্রোরেলের মিরপুর-১১ নম্বর অংশে নির্মাণাধীন পিলার থেকে ইট পড়ে এক পথচারী নিহত হন। 

যে কোনো নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে সাধারণত বলা হয়, 'সেফটি ফার্স্ট' বা নিরাপত্তাই প্রথম। এ নিরাপত্তা যেমন কর্মরত শ্রমিকদের জন্য জরুরি, তেমনি পথচারীসহ প্রকল্প এলাকাধীন সব মানুষের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। অথচ তা নিশ্চিত না করেই অবলীলায় চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, নির্মাণাধীন ভবনের তিন থেকে চার মিটার দূরত্বে নাইলনের জাল দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে হবে। নির্মাণ প্রকল্পে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগাতে হবে। কাজ করার সময় শ্রমিকদের অ্যাপ্রোন, হেলমেট, গগলস, হ্যান্ডশিল্ড, বুটসহ নানা সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারের কথা রয়েছে। সেগুলো কাজীর গরুর মতো কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। ফলে অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহারে শ্রমিকদের যেমন অনীহা রয়েছে, তেমনি ঠিকাদার ও তদারকি প্রতিষ্ঠানও ব্যবহার নিশ্চিতে তৎপর নয়।

সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারে কেন এই অবহেলা? আলোচ্য ছবিতে যেভাবে মিপারের বাকেটে একজন শ্রমিকের ছয় তলায় ওঠার চিত্র দেখা যাচ্ছে, আবার একইভাবে শ্রমিক নামছে, তা ভয়াবহ। এভাবে চলতে পারে না। এ ব্যাপারে সামষ্টিক দায়িত্বশীলতা জরুরি। শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে কোনো ধরনের নির্মাণকাজ যাতে না হয়, সে জন্য প্রথমেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা জরুরি। আমরা বিস্মিত, সমকালের প্রতিবেদন বলছে, নির্মাণাধীন ওই ভবনে শ্রমিক যখন শূন্যে ঝুলছিলেন, তখন নিচে ছিলেন তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক প্রকৌশলী। তিনিও অন্যদের মতো এ দৃশ্য দেখছিলেন!

এটি সিনেমার দৃশ্য হতে পারে; কিন্তু প্রতিনিয়ত চলা শ্রমিকদের কাজের অংশ হতে পারে না। শ্রমিকের রক্ত-ঘামে ভবন ওঠে। অথচ কীভাবে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন থাকি? আইন অনুযায়ী শ্রমিকের নিরাপত্তা ও পথচারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই হবে।

সমকালে প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২২

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।