Mahfuzur Rahman Manik
শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে সুন্দর
নভেম্বর 29, 2022

যে সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কথা, সে সময়ে শিশুর রাজনৈতিক মাঠে থাকা অস্বাভাবিক। সংবাদমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই এ ধরনের অস্বাভাবিক খবর প্রকাশ হয়। কখনও রাজনীতিকরা শিশুদের ব্যবহার করেন; রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিয়ে যান। কখনও শিক্ষকরা ব্যবহার করেন শিশুদের; সরকারি কর্মকর্তা বা প্রভাবশালীদের সংবর্ধনায় হাজির করেন। আবার দেখা যায়, স্কুল বন্ধ রেখে সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি চালানো হয়। এই অপচর্চায় শিশুর ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও তা বন্ধ হচ্ছে না।

সোমবার প্রকাশিত সমকালের শেষ পাতার একটি খবর, 'স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি'। খবরটি বলছে, ময়মনসিংহে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে স্কুল ড্রেস পরা শিক্ষার্থীরা 'ভাইয়ের' ডাকে ১৬ কিলোমিটার দূরের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দেয়। জেলা জাতীয় পার্টির আয়োজনে দলটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবিতে পালিত কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছে। দুপুরের ওই কর্মসূচির সময়ে ক্লাস চলছিল। একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমকালকে বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি এবং শিক্ষার্থীরা স্কুলে না এসে বাইরে থেকেই চলে গেছে। তিনি বলেছেন, এ ধরনের কাজ তাঁরা সমর্থন করেন না।

শিক্ষার্থীরা স্কুলের কথা বলে বাড়ি থেকে বেরুলেও তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজনৈতিক সমাবেশে। এ কাজটা যে অনৈতিক ও অন্যায্য- তাও সংশ্নিষ্টরা স্বীকার করতে চাইছেন না। জাতীয় পার্টির এক নেতার কাছে যখন এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি বলেন, 'ছাত্র সংগঠন জোরদার করার চেষ্টা চলছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে। মুক্তাগাছাতেও স্কুল-কলেজে সংগঠন শক্তিশালী করতে কাজ চলছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রোগ্রামে আরও ছোট বাচ্চারা আসে। যারা ছাত্র রাজনীতি করে, তারা তো আসতেই পারে।' তাঁর বক্তব্য বিস্ময়কর! খারাপ কাজ অন্যেরা করছে বলে আমিও করতে পারব- এমন তো নয়। কেউ ছাত্র রাজনীতি করলেও তার প্রধান কাজ পড়াশোনা। রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলেও ক্লাস অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। তা ছাড়া স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বলা চলে শিশু; বড় জোর কিশোর। তাদের সঠিক বুঝ নেই। এ সময় তারা অন্যের দ্বারা ব্যবহূত হয়।

শহরে দেখা যায়, বিশেষ করে বস্তি এলাকার শিশুদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ধ্বংসাত্মক কাজে লাগানো হয়। এদেরই একাংশ পরবর্তী সময়ে নানা অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুর ব্যবহারের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার সমানভাবে পরিত্যাজ্য। এমপি, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের সংবর্ধনার জন্য শিশুদের সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার চর্চাও চলে আসছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই অতিউৎসাহী হয়ে শিশুদের নিয়ে আসেন। আবার কখনও রাজনৈতিক সভায় ব্যবহার করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে। যে কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে হলে খোলা ময়দান আছে কিংবা হোটেল বা অন্য কোনো জায়গায় তা হওয়া উচিত। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হলেও তা বন্ধের দিনে হতে পারে। কিন্তু স্কুল ছুটি দিয়ে রাজনৈতিক সভার আয়োজন কেন? এ বছরের জুলাইতেই আমরা দেখেছি, খোদ শিক্ষামন্ত্রী প্রধান অতিথি ছিলেন এমন একটি রাজনৈতিক সম্মেলনে প্যান্ডেল সাজানো এবং ব্যানার-পোস্টার টানানোর কারণে ওই দিন কয়েকটি স্কুল বন্ধ রাখা হয়। পরে এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে পরে শিক্ষামন্ত্রী ক্ষমা চান। বস্তুত তাঁর অগোচরেই এ ধরনের আয়োজন করা হয়।

শিশু আইনে (২০১৩) সরাসরি রাজনীতির কথা বলা না হলেও আগ্নেয়াস্ত্র ও অবৈধ বস্তু বহন করানো কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করাতে শিশুর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। অবশ্য নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলেরই শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার না করার অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না- ময়মনসিংহের ঘটনা ও সেখানকার নেতার বক্তব্যই তার প্রমাণ। এ ব্যাপারে রাজনীতিকদের পাশাপাশি শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্বও কম নয়। মনে রাখতে হবে, শিশুরা ক্লাসেই সুন্দর। কোনোভাবেই তাদের শিক্ষাঘণ্টা নষ্ট করা যাবে না। তারা ভালোভাবে পড়াশোনা করে বড় হলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারে। কিন্তু অবুঝ শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি করে রাজনীতিতে ব্যবহার কাম্য নয়।

সমকালে প্রকাশ ২২ নভেম্বর ২০২২

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।