
সাক্ষাৎকার: সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : মাহফুজুর রহমান মানিক
কথাসাহিত্যিক, সাহিত্য সমালোচক ও অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে চার দশকেরও বেশি শিক্ষকতার পর ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) অধ্যাপনার পাশাপাশি জাতীয় জাদুঘর ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ন্যায়পাল হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। ২০১৭ সালে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও কাগজ সাহিত্য পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি স্বীকৃতি ও সম্মাননা লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে যথাক্রমে ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তিনি ১৯৭৪ সালে একই বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ১৯৮১ সালে কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার জন্ম ১৯৫১ সালে সিলেটে।
সমকাল: সম্প্রতি জাতীয় সংসদে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বরেণ্য শিক্ষাবিদরা উপাচার্য হতে চান না। তাদের কি স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ নেই, না অন্য কিছু? বিষয়টি আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যটি একটা দুঃখজনক বাস্তবতার প্রতিফলন। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই এই সত্য সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। বরেণ্য শিক্ষাবিদদের উপাচার্য হওয়ার জন্য আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। কিন্তু তারা হতে চান না। কারণ আপনি যেমনটা বলেছেন, স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের, দু-এক বিরল ব্যতিক্রম বাদ দিলে সরকারি দলের স্থানীয় রাজনীতিকে আমলে নিতে হয়। ছাত্র-যুব-স্বেচ্ছাসেবী নানা সংগঠনের মন জুগিয়ে চলতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় প্রকল্পে তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিতে হয়। এ রকম নানা প্রতিবন্ধকতা তাদের মোকাবিলা করতে হয়। এসব সামাল দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করাটা প্রায় অসম্ভব।
সমকাল: উপাচার্যদের নিয়ে সাম্প্রতিক যে সংকট আমরা দেখছি, সেখানে কারণ হিসেবে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগের বিষয়টিই সর্বাগ্রে উঠে আসছে কেন?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কারণ দু-এক ব্যতিক্রম বাদ দিলে উপাচার্য নিয়োগে একজন শিক্ষকের সরকারি দলের প্রতি আনুগত্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই দলের রাজনীতিতে শক্তিশালী একটি ভূমিকা থাকাকে একটি আবশ্যকতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি একটি প্রথা হিসেবে গত শতকের আশির দশক থেকেই চলে আসছে। এটি একটি শক্তিশালী চর্চা।
সমকাল: উল্লেখযোগ্য উপাচার্যের কর্মকাণ্ডে সরকারও বিব্রত। তাহলে সরকার যোগ্য লোককে যোগ্য জায়গায় বসাতে পারছে না? নাকি যে যায় লঙ্কায় সে-ই হয় রাবণ?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: যেসব উপাচার্য নানা বিতর্কের জন্ম দেন, তাদের সংখ্যা কম। অনেক উপাচার্যই নিজেদের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারেন। অনেক সময় স্থানীয় রাজনীতি ও রাজনীতিকদের স্বার্থের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থকে প্রাধান্য দিলে নানাভাবে তাদের 'বিতর্কিত' প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। ফলে সব উপাচার্যকে একই মাপে ফেলে দেখা ঠিক নয়। তবে যারা প্রকৃতই বিতর্কিত, তারা শুধু নিয়োগকারী সরকারকে নয়; তাদের সহকর্মীসহ পুরো শিক্ষা পরিবারকেই বিব্রত করেন।
সমকাল: স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচিত উপাচার্য নিয়োগের বিধান থাকলেও, এর ব্যত্যয় ঘটছে। পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যর্থতার সঙ্গে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগজনিত সংকটের সম্পর্ক আছে কি?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: এই সম্পর্কের বিষয়টি এভাবে দেখা যায় :যদি স্বায়ত্তশাসিত সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়ায় হতো এবং মেয়াদ শেষ হলে নতুন নিয়োগের সময় আবারও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতো, তাহলে যে একটি সুষ্ঠু চর্চার ধারাক্রম তৈরি হতো, তাতে সব বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানাত। এক সময় এসব বিশ্ববিদ্যালয়েও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করাটা গুরুত্ব পেত। তাহলে উপাচার্য নিয়োগে যেসব অভিযোগ এখন শোনা যায়, সেসব হয়তো আমাদের শুনতে হতো না।
আমাদের দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মের চর্চা বিরল। অনিয়মের চর্চাটাই ব্যাপক। আমাদের আরেক সমস্যা হলো, এক প্রতিষ্ঠানে যদি দুর্নীতির কোনো চর্চা হয়, অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই চর্চাটা তার দুর্নীতির তালিকায় যোগ করে দেয়। উল্টোটা কখনও হয় না।
সমকাল: সংবাদপত্রের প্রতিবেদনমতে, দ্বিতীয় মেয়াদের উপাচার্যরা বেশি বিপজ্জনক। তারপরও প্রশাসন কেন বারবার একই পথে হাঁটছে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: পরিসংখ্যান যদি সে রকম বলে, তাহলে এর পেছনে কারণগুলো বুঝতে হবে। প্রথমত, আমাদের শিক্ষামন্ত্রী যেমন বলেছেন, সর্বজনগ্রাহ্য শিক্ষাবিদরা যদি উপাচার্য হতে আগ্রহী না হন, তাহলে সরকারকে উৎসাহীদের মধ্য থেকেই নিয়োগ দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে উপাচার্য হিসেবে এক দফা যিনি মোটামুটি উতরে গেছেন, তাকে আবার নিয়োগ দেওয়াই একটা সহজ সমাধান হয়ে দাঁড়ায়। তিনি যদি প্রথম মেয়াদে বড় কোনো বিতর্কের জন্ম না দেন, তাহলে তাকে বিবেচনায় রাখাটা কঠিন হয় না। দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেয়ে যদি কোনো উপাচার্য বড় কোনো বিতর্ক বাধিয়ে ফেলেন, বুঝতে হবে, তিনি কিছুটা বেপরোয়া হচ্ছেন। কারণ এটিই তার শেষ মেয়াদ। এ বিষয়টি সরকারের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তাকে মেয়াদের মাঝখানে বাদ দেওয়া আর নিজেদের ভুল স্বীকার করে নেওয়া একই কথা। ভুল স্বীকারের চর্চাটা আমাদের দেশে নেই।
সমকাল: স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও উপাচার্য নিয়োগে কেন আমরা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে পারিনি?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: স্বাধীনতার পরপর যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ৫-৬টি, সেগুলোর জন্য আইন তৈরি করাটা সহজ ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিকে মনোযোগও দেন। তিনি ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে একটি আইন পাস করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর যেসব সরকার ক্ষমতায় আসে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনে আগ্রহী ছিল না। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংখ্যাও তেমন বাড়েনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যখন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকল, স্বাত্তশাসনের দাবিও উঠতে থাকল। স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হলে সেগুলোর দাবি-দাওয়া অনেক বাড়বে- এ জন্য হয়তো তা বিবেচনায় আনা হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যেসব সভা ও সংঘ প্রয়োজন, যেমন সিনেট- সেসবও গড়ে ওঠেনি। উপাচার্য নিয়োগে এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো ভূমিকা নেই। সংকটের মূলটা সেখানেই।
সমকাল: দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে উপাচার্যরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেও তাদের বিচার না হওয়ার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: আমাদের দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি পুরোনো। কোনো সরকারের আমলেই ক্ষমতাসীন দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনার নজির নেই। উপাচার্যদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তা ছাড়া উপাচার্যরা সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। হয়তো সে কারণেও তাদের দুর্নীতির বিচার হয় না। এটি যে কাম্য নয়- সে তো বলাই বাহুল্য।
সমকাল: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে যেভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে; সেখানে উপাচার্যদের ভূমিকা কতখানি?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে থাকছে; এ কথা সত্যি। কিন্তু র্যাঙ্কিংয়ে যেসব সূচক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো আমাদের অনুকূলে আনতে সময় লাগবে। এসব সূচকের সঙ্গে উপাচার্যের প্রত্যক্ষ সংযোগ নেই। অর্থাৎ উপাচার্যের যোগ্যতা বা সুনাম র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলে না। যা ফেলে- যেমন শিক্ষা, গবেষণা, প্রকাশনার মান ইত্যাদি। সেগুলো উন্নত করায় উপাচার্যের ভূমিকা থাকে। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের উপাচার্যরা, যাকে 'একাডেমিক নেতৃত্ব' বলা হয়, যা যতখানি দেন, তার থেকে বেশি দেন প্রশাসনিক নেতৃত্ব। পশ্চিমের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের নাম শোনা যায় না। তারা ব্যস্ত থাকেন তহবিল সংগ্রহে, নানা ইনডাওমেন্ট ফান্ড বা বৃত্তি তহবিল প্রতিষ্ঠা এবং প্রকারান্তরে একাডেমিক উৎকর্ষ প্রতিষ্ঠায়। একাডেমিক নেতৃত্ব থাকে ডিনের হাতে।
উপাচার্যরা যতদিন প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডকে বিকেন্দ্রীকৃত করে, শিক্ষক নিয়োগ ডিনদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির হাতে ছেড়ে না দেবেন (ডিনরা আবার নির্বাচিত হবেন তাদের একাডেমির গুণে, রাজনৈতিক সংশ্নিষ্টতার জন্য নয়); ততদিন শিক্ষা ও গবেষণায় তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে না।
সমকাল: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলাতে উপাচার্য নিয়োগসংশ্নিষ্ট সংকট কিংবা ছাত্র রাজনীতির প্রভাব নেই বলেই কি তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ এগিয়ে যাচ্ছে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সমস্যা আছে। বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নির্ভর করতে হয় ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদনের ওপর। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা নেই। তাদের নিয়োগ ও কার্যকাল নির্ভর করে ট্রাস্টি বোর্ডের পছন্দ-অপছন্দের ওপর। ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ব্যক্তি; উপাচার্য নন।
ছাত্র রাজনীতি নেই- কথাটি বোধ হয় একটু ব্যাখ্যা দাবি করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রকম রাজনীতির চর্চা হয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটি না থাকাটা স্বস্তির বিষয় বটে, তবে আদর্শ ও বিবেকের রাজনীতির জায়গা না থাকাটা কোনো সুস্থ চর্চা হতে পারে না। একটা বিশ্ববিদ্যালয় যদি একজন শিক্ষার্থীকে জনমানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে না পারে অথবা নানা অধিকারের প্রশ্নে তাকে সক্রিয় করতে না পারে; তাহলে বুঝতে হবে, সেখানে শিক্ষাটা কাজে লাগছে শুধু তাকে বাজারের জন্য তৈরি করতে। সেটি নিশ্চয় আমাদের মতো সমাজে কাম্য হতে পারে না।
সমকাল: সার্চ কমিটির মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছেন অনেকেই। আপনি কী মনে করেন?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: সার্চ কমিটি বলতে যে একটা সরকার নির্ধারিত কাঠামো বোঝায়, যাতে সরকারের পছন্দের শিক্ষাবিদ ও অবসরপ্রাপ্তরা সদস্য হবেন; তার মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগে কোনো সুফল আসবে না। সার্চ কমিটির পরিবর্তে সংশ্নিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র কোনো ডিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেওয়া যেতে পারে, যাতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বগ্রহণযোগ্য অধ্যাপকদের এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সদস্য করা হবে। কমিটি কয়েকটি নাম বিবেচনায় এনে যাচাই-বাছাই করে একজনকে উপাচার্য হিসেবে বেছে নিতে পারে। তার সম্মতি নিয়ে তার নামটি আচার্যের মনোনয়নের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া যায়। আর যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট আছে, কমিটির নামগুলো সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে পাঠানো হবে। সিনেট সেখান থেকে এক বা দু'জনের নাম বেছে নিয়ে আচার্যের কাছে পাঠাবে।
সমকাল: বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধি ও সঠিক ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগে আপনার পরামর্শ কী?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: সঠিক উপাচার্য বেছে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও উপায় নিয়ে এতক্ষণ অনেক কিছুই বলেছি। উপাচার্যকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে তাকে দলীয় রাজনীতির বাইরে থেকে, দল-উপদলের কোন্দল এড়িয়ে, সহকর্মীদের আস্থা অর্জন করে চলতে হবে। সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ঐকমত্য প্রয়োজন। উপাচার্য যদি সততা, নৈতিকতা এবং চারিত্রিক অখণ্ডতা দেখাতে পারেন, তাহলে সংকট থাকার কোনো কারণ নেই।
শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নত করতে হবে; উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন ও উচ্চতর গবেষণার জন্য মালয়েশিয়া সরকার যত টাকা খরচ করে; তার শতাংশের একাংশও আমাদের সরকার করে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের কথাই ধরা যাক। এ বিভাগের যতজন শিক্ষক স্বাধীনতার পর থেকে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে গেছেন, তাদের মধ্যে মাত্র একজন গেছেন সরকারের পয়সায়। কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে গেছেন কয়েকজন। আমি নিজে গিয়েছি কানাডার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নিয়ে। অন্য প্রায় সবাই তাই করেছেন।
উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে একটা সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে এক কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিল, যাতে ছয়টি ক্ষেত্রে মান বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট অনেক প্রস্তাব করা হয়েছে। ১০ বছরের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে কাজগুলোকে সাজানো হয়েছে। এর অতি সামান্যই অবশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে। যদি দশ না হোক, ১২-১৫ বছরেও, অর্থাৎ ২০৩০-৩২ সালের মধ্যেও তা বাস্তবায়িত হতো, তাহলে উচ্চশিক্ষার মান অবশ্যই বাড়ত।
সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: ধন্যবাদ। সমকালের জন্য শুভকামনা।