Mahfuzur Rahman Manik
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনই খুলে দেওয়া সংগত হবে না-রাশেদা কে চৌধুরী
আগস্ট 24, 2020

সাক্ষাৎকার

রাশেদা কে চৌধুরী গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক। ২০০৮ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। রাশেদা কে চৌধুরীর জন্ম ১৯৫১ সালে সিলেটে। শিক্ষায় করোনা দুর্যোগের প্রভাব নিয়ে তিনি সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন

সমকাল :করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তোড়জোড় আমরা দেখছি। বাংলাদেশের জন্য এটি কি যথোপযুক্ত সময়?

রাশেদা কে চৌধুরী :করোনার কারণে পৃথিবীর অনেক দেশেই এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ১৬০ কোটি শিক্ষার্থীর ওপর এ মহামারির প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত আমাদের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী ১৮ মার্চ থেকে শ্রেণিকক্ষের বাইরে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে একধরনের উদ্বেগ আমরা দেখছি। এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনিকভাবে আলোচনা হচ্ছে। তারাও চিন্তাভাবনা করছেন খুলে দেওয়া যায় কিনা। স্কুুল খোলার পরিকল্পনার বিষয়টি গণমাধ্যমেও ক্রমাগত আসছে। তবে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সংগত হবে বলে আমি মনে করি না। করোনা পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এটা যথোপযুক্ত সময় নয়। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার এখনও বিশ শতাংশের মতো। ফলে শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই ঝুঁকির মুখে ফেলা ঠিক হবে না। করোনায় সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কথাই বলছেন। হ্যাঁ, খোলার সময় আসবে। আমরা যখন দেখব করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসছে, তখন খোলার চিন্তা করতে হবে।

সমকাল :শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পূর্বপ্রস্তুতি কতটা জরুরি?

রাশেদা কে চৌধুরী :করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পূর্বপ্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। উন্নত বিশ্বের কথা বাদ দিয়ে আমরা যদি উন্নয়নশীল দেশের কথা বলি; যেমন- ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড, তারা করোনা সংক্রমণ একটি লাগামের মধ্যে নিয়ে এসেছে বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে। আবার দক্ষিণ কোরিয়ার কথা বলি- তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিল; কিন্তু যথাযথ প্রস্তুতি না থাকায় সংক্রমণ বেড়ে যায়। ফলে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়। তাই এক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি খুব জরুরি।

সমকাল :কেমন প্রস্তুতির কথা আপনি বলছেন।

রাশেদা কে চৌধুরী :প্রস্তুতির জন্য প্রথমে প্রয়োজন একটি সুসমন্বিত পরিকল্পনা। আমরা জেনেছি, শিক্ষা-সংশ্নিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ই সে প্রস্তুতির খসড়া তৈরি করেছে। তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমি মনে করি করোনা দুর্যোগে চারটি দিকে লক্ষ্য রেখে সমন্বিত পরিকল্পনা করা প্রয়োজন, যেমন- অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, সামাজিক অবস্থা ও শিক্ষা। মন্ত্রণালয়গুলো সে পরিকল্পনা বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষা খাতের জন্য একটি 'রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্ল্যান' তথা 'সাড়া ও পুনরুদ্ধার প্রস্তুতি পরিকল্পনা' সম্পন্ন করেছে। শিক্ষায় আমাদের অনেক বড় বড় অর্জন রয়েছে। করোনার কারণে এসব অর্জন ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে দুটি অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো- ছাত্রছাত্রী সংখ্যায় সমতা। অন্যটি প্রাথমিকে প্রায় শতভাগ ভর্তির হার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ঝরে পড়ার হারও বাড়তে পারে। প্রস্তুতির জায়গা থেকে শতভাগ ভর্তি ও ছেলেমেয়ের সমতা ধরে রাখার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আরেকটি ঝুঁকি রয়েছে। করোনার সময়ে খাদ্য ও আয় নিরাপত্তাহীনতার কারণে অপুষ্টির হারও  বাড়বে। এমনিতেই নানা কারণে আমাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী অপুষ্টির শিকার। এ জন্য মিড-ডে মিল কর্মসূচিকে সর্বজনীন করার ব্যবস্থ্থা নেওয়া প্রয়োজন।

সমকাল :শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে  স্বাস্থ্য সুরক্ষা...

রাশেদা কে চৌধুরী :হ্যাঁ। করোনা সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করতে হবে সবার আগে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা-সংশ্নিষ্ট দুই মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা তৈরি করছে বলে গণমাধ্যমে এসেছে। বলাবাহুল্য, আমাদের কেবল চার কোটি শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করলেই হবে না, একইসঙ্গে তাদের বাবা-মা, অভিভাবক ও চার-পাঁচ লাখ শিক্ষকের কথাও ভাবতে হবে। আশা করছি তাদের সবার জন্য মাস্ক ও হাত ধোয়ার স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং শ্রেণিকক্ষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি বিষয় নিশ্চয়ই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায় থাকবে। কিন্তু এসব পরিকল্পনা করাই যথেষ্ট নয়, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সে জন্য নিয়মিত মনিটর করা জরুরি। তবে এই মনিটরিং রাজধানী কিংবা জেলা শহরে বসে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এ জন্য দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন স্থানীয় সরকার, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদকে। তারা যাতে বিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত বিষয় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় রিপোর্ট নিয়মিতভাবে সংশ্নিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়- তা ওই নির্দেশিকায় থাকা প্রয়োজন। করোনা সংক্রমণ রোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সতর্কতা মানার কোনো বিকল্প নেই।

সমকাল :করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এ সময়ে বিকল্প উপায়ে পাঠদান কার্যক্রম আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

রাশেদা কে চৌধুরী :আমরা দেখেছি সরকার টিভি, রেডিও, অনলাইন ও মোবাইল ফোন- এ চারটি মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। এটি নিশ্চয়ই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হলো এগুলোর মাধ্যমে আমরা সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছতে পারছি কিনা। টেলিভিশন ৫৫-৫৬ শতাংশের কাছে থাকলেও পাঠদান ঠিক কত শতাংশের কাছে পৌঁছাচ্ছে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। আবার অভিভাবকরাও অনেক সময় বলছেন, প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠদান অতটা আকর্ষণীয় নয়। এর প্রধান কারণ হলো, এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষাদানে আমাদের শিক্ষকদের একটি বড় অংশ এখনও তেমনভাবে অভ্যস্ত নন। এতদিন তারা শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি পাঠদান করতেন। কিন্তু টেলিভিশনের মাধ্যমে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে তাদের সামনে সরাসরি কোনো শিক্ষার্থী থাকছে না। ফলে কিছু না কিছু দুর্বলতা থেকেই যাচ্ছে। এ জন্য শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। রেডিওর কথা যদি বলি, এ মাধ্যমেও সবার কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

অনলাইনের মাধ্যমে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু এখানেও সমস্যার অন্ত নেই। দেশের সর্বত্র নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নেই, তদুপরি মহানগরগুলোর বাইরে ইন্টারনেটের গতিও অত্যন্ত ধীর হয়ে থাকে। তার চেয়েও বড় কথা ইন্টারনেট ক্রমাগত ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। দুঃখজনকভাবে এবারের বাজেটে আমরা দেখেছি, মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছে। তা প্রত্যাহারের জন্য অনেক বিশিষ্টজন, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক দাবি জানিয়েছিলাম। করোনার এ সময়ে যেখানে অনেকের জীবন-জীবিকা নিয়েই চিন্তার শেষ নেই, সেখানে একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে ১৩০০-১৪০০ টাকা দিয়ে মাসে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো কতটা সম্ভব? এর ফলে অনলাইন শিক্ষাক্ষেত্রে একধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এই ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিচ্ছে।

সমকাল :মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমে কী সম্ভাবনা দেখছেন?

রাশেদা কে চৌধুরী :বাংলাদেশে করোনাকালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার একটি ভালো সম্ভাবনা আমরা দেখছি। দেশে এখন প্রায় ৯৬ শতাংশ মানুষের কাছে মোবাইল রয়েছে, সবার কাছে হয়তো স্মার্টফোন নেই; কিন্তু অধিকাংশের কাছেই ফিচার ফোন আছে। আমরা দেখছি, ওই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে সহজেই উপবৃত্তি পৌঁছানো যাচ্ছে। সব ফোনেই এফএম রেডিও ডাউনলোড করা সম্ভব। প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা যদি শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবক অথবা নিজেদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফ্রি শিখতে পারে, সেটি অনেক কাজে লাগবে এবং বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এফএম রেডিও না হলেও নির্দিষ্ট নাম্বার বা হেল্প লাইনে কল করে তা করা যেতে পারে। তবে এর জন্য খরচ কে বহন করবে? আমার মনে হয় এক্ষেত্রে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ হিসেবে এগিয়ে আসতে পারে এবং এ কার্যক্রম বিটিআরসির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়গুলোর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতে পারে।

সমকাল :করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা আটকে আছে? পিইসি পরীক্ষা বাতিলের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। আপনার মতামত কী?

রাশেদা কে চৌধুরী :করোনার কারণে শ্রেণিকক্ষভিত্তিক নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বেশ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেবল চলতি বছরের পরীক্ষাটি না নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমি মনে করি, কেবল চলতি বছরের জন্যই নয় বরং এটি একেবারেই তুলে দেওয়া যেতে পারে। কারণ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার কথা বলা হয়নি। তদুপরি বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় এই পিইসিই পরীক্ষার কারণে প্রাথমিক পর্যায়েই কোচিং বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে এবং শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের ওপর বাড়তি মানসিক এবং আর্থিক চাপ পড়ছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জেএসসি পরীক্ষাও জাতীয়ভাবে না হয়ে উপজেলাভিত্তিক হতে পারে।

এইচএসসি পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে- পরীক্ষাকেন্দ্র বাড়িয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ১৫ দিন পর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করার কথা বলছে শিক্ষা বোর্ড। এক্ষেত্রে আমার একটি উদ্বেগের জায়গা, বিশেষ করে মেয়েদের নিয়ে, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী অনেকেই হোস্টেলে ছিল। করোনার কারণে তারা বাড়ি চলে গেছে। অনেকে হয়তো হোস্টেল বা মেস ছেড়েও দিয়েছে। গ্রাম থেকে এসে যারা শহরে পড়াশোনা করত, হঠাৎ পরীক্ষার নোটিশে তাদের হোস্টেল বা মেস ঠিক করা কতটা সম্ভব হবে? এ সময় আত্মীয়স্বজনের বাসায় করোনার কারণে অনেকে সমাদৃত নাও হতে পারে। আবার পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়েও ভাবার প্রয়োজন আছে। আমি আশা করি, যত শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে- সবাই যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে, ছেলেমেয়েরা যেন ড্রপআউট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।

সমকাল :করোনা দুর্যোগের মধ্যেই আরেক দুর্যোগ বন্যা আমরা দেখছি। বন্যায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়েও গেছে অনেকগুলো। সেখানকার শিক্ষার্থীদের কী হবে?

রাশেদা কে চৌধুরী :প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই আমাদের বসবাস। বন্যায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে, নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। আমরা জানি প্রতি বছর নদীভাঙনে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে যায়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত মেরামত করা জরুরি। করোনার কারণে এমনিতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, খুললে বন্যার কারণে যেন তা আরও দীর্ঘায়িত না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। নদীভাঙন ও বন্যাপ্রবণ এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে যথাযথ ম্যাপিং করা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করা জরুরি। আমরা জানি, সরকারের কাছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা রয়েছে। তার পরও অনেক ক্ষেত্রে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এখানে সুশাসন নিশ্চিত করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।

সমকাল :অভিযোগ উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান জোর করে টিউশন ফি আদায় করছে...

রাশেদা কে চৌধুরী :সংগত কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকারকে কেবল শিক্ষার্থীদের কথা ভাবলেই চলবে না শিক্ষকদের কথাও ভাবতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনার সময়ে, বিশেষ করে ব্যবসায়িকভাবে পরিচালিত অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিউশন ফি দাবি করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে দুর্যোগ সময়ের জন্য সাহায্য-সহায়তার ব্যাপারে সরকারের কোনো নীতিমালা নেই। থাকবেই বা কী করে, যেহেতু এর অধিকাংশই নিবন্ধিত নয়। আমি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনার জন্য নিবন্ধনের কথা বলছি। সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালার ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যদি চলতে পারে, তাহলে এগুলোরও নূ্যনতম নিবন্ধন দরকার। তাতে সরকারের কাছে তাদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত থাকত, সহায়তা দিতে পারত। এক্ষেত্রে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি বিপদে আছে, তাদের জন্য সরকার বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে। শিক্ষা শুধু একটি জাতির মেরুদণ্ডই নয়, এটি মৌলিক মানবাধিকার এবং মানব সক্ষমতা বিনির্মাণের প্রধান হাতিয়ার। করোনা মহামারির কারণে শিক্ষায় যে ক্ষতি হচ্ছে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি সর্বমহলের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।

সমকাল :সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

রাশেদা কে চৌধুরী :আপনাকেও ধন্যবাদ। সমকালের জন্য শুভকামনা।

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।