Mahfuzur Rahman Manik
মায়া
ফেব্রুয়ারী 7, 2020
মেয়েটি আমার যত বড় হচ্ছে মায়া মনে হচ্ছে ততই বাড়ছে

গতকাল আমার পিতৃত্বের এক বছর পূর্ণ হলো আলহামদুলিল্লাহ। ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে আসার পর থেকেই কেবল নয়, বরং তারও প্রায় নয় মাস আগ থেকে আমাদের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে মেয়েটি। সন্তান-মা-বাবাকে ঘিরে পৃথিবীর যে মায়ার জগৎ এতদিন তা কেবল সন্তান হিসেবেই দেখে আসছিলাম এখন সেটা বাবা হিসেবেও আবিষ্কারের চেষ্টা করছি।
প্রথম প্রথম মেয়েটিকে দেখতাম বিস্ময়ের সঙ্গে। নবজাতকের কান্না, হাসি, আড়মােড় ভাঙ্গার মধ্যে কতটা শিল্প, কতটা সৌন্দর্য রয়েছে মেয়ে না হলে তা দেখার সৌভাগ্য হয়তো হতো না। মেয়েটি যখন আরেকটু বড় হচ্ছে শিশুর কাজ দেখারও সুযোগ হচ্ছে, এক সেকেন্ডের জন্যও তার ফুরসত নেই; যতক্ষণ সজাগ থাকবে, ততক্ষণ ব্যস্ত। এই এটা ধরবে, ওটা ধরবে। এক হাতে না পারলে দুই হাতে, এক হাত ছাড়ালে আরেক হাতে। মেয়েটার কাজ দেখে আমরা হয়রান হই। মেয়েটি যখন কথা বলা শিখছে ওর মুখ থেকে ফুটছে- আম্মা, বাব্বা, দাদ্দা, নান্না। মুখ থেকে একটা কথা বেরুবে সেটাই বলতে থাকবে। এক নাগাড়ে, এ নিশ্বাসে, একই শব্দ সুন্দর করে, দরদ দিয়ে এভাবে কাউকে বলতে দেখিনি।
মেয়েটি যতই একটু করে বড় হচ্ছে ততই চিনছে বাবাকে। বাবা হিসেবে সেটা আমার জন্য যেমন আনন্দের তেমনি মধুর বিড়ম্বনারও। বাবাকে সবসময় সামনে থাকা চাই। মেয়েকে রেখে বাইরে বেরুবার অধিকার, অফিসে যাওযার সুযোগ নেই। আহা প্রতিদিন অফিসের জন্য বেরুতে মেয়েকে যেভাবে বাসায় রেখে আসতে হয় সেটা এক কষ্টের ব্যাপার। অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি কিন্তু মেয়েটি কোলে এসে বসে আছে। এমনভাবে বসবে যে, তাকে ছাড়া সহজ নয়। রাখতে গেলেই কান্না জুড়ে দিবে। জোর করে ওর মায়ের কোলে রেখে, হাসিমুখে নয়; মেয়ের কান্না দেখেই অফিসে যেতে হয়। এক মানসিক বেদনা নিয়ে অফিসে যাই। মেয়েটির মা তাকে থামায়। আমি তো তাও অফিসে যেতে পারি, মা কোথাও যেতে পারবে না। স্কুলের চাকরি ছেড়ে মেয়েটিকে রাখাই তার এখন চাকরি। মায়েরা বাচ্চাদের জন্য কতটা কষ্ট করেন, সেটা আমার স্ত্রীকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। এমনকি আমার মা-বাবাও আমার জন্য কতটা কষ্ট করেছেন সেটাও আমি সত্যিকার অর্থে‌ অনুধাবনের চেষ্টা করেছি আমার মেয়ের জন্মের পর থেকে।
পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মনে হয় মানবশিশু। একইসঙ্গে আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় অধিকার নিয়েই জন্মায় এ শিশু। মা-বাবাকে সবসময় তার দিকে মনোযোগ দিতেই হবে। সারাক্ষণ সঙ্গে রাখতে হবে, না হয় কাদবে। তার কাজে অন্যদেরও মনোযোগ দেওয়া চাই, কেউ শুনতে না চাইলেও জোর করে শুনাবে। রাতে তাকে রেখে ঘুমানো যাবে না; সেটা মধ্য রাত কিংবা দুইটা-তিনটা যতটাই বাজুক। অন্তত একজনকে তো জেগে থাকতেই হবে। সে কাজটি অধিকাংশ সময় মেয়ের মা-ই করেন।
মেয়েটি আমার যত বড় হচ্ছে মায়া মনে হচ্ছে ততই বাড়ছে। অফিস থেকে যখন বাসায় ফিরি, দরজায় মেয়েকে নিয়ে মা দাঁড়িয়ে থাকেন। আমাকে দেখেই জোরে হাসি দিয়ে বুকে ঝাপিয়ে পড়বে। হাত-মুখ ধুয়ে কোলে নিতে একটু দেরি হলেই জুড়ে দিবে কান্না। কান্না-ই শিশুর বড় ভাষা। সন্তানের কান্না কোনো মা-বাবা উপেক্ষা করতে পারে? শিশুর কান্না হৃদয়বানকে নাড়া দিবেই।
সন্তান নিয়ে নিশ্চয়ই সকল মা-বাবরই একই অনুভূতি। মহান আল্লাহর এ এক অশেষ নেয়ামত। মেয়ে আমার বড় হও। তোমার কান্না আমাদের আকুল করে; তোমার একটু অসুস্থতা আমাদের উদ্বিগ্ন করে; তোমার ডাক আমাদের ব্যাকুল করে; তোমার ভালোবাসায় আমাদের চোখে পানি আসে। ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে তুমি এক মায়া।

ফেসবুক, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।