পিচঢালা পথ কেমন? হয়তো সিসাঢালা প্রাচীরের মতো মজবুত নয়; কিন্তু অতটা শক্তও কি নয়? ইট-খোয়া বিটুমিনের তৈরি পিচ, এমন পিচের এক মাইল রাস্তা নির্মাণের জন্য নয় হাজার গ্যালন জ্বালানি খরচ করতে হয়; স্বাভাবিকভাবেই তা শক্ত ও মজবুত হওয়ার কথা। যে সড়কের ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারী যানবাহন যাতায়াত করলেও পিচের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকার কথা নয়; এমন মজবুত পিচ দিব্যি কয়েক মাস, এমনকি বছরও পার হয়ে যায়। অনেক সময় তাতে আঁচড়ও লাগে না। কিন্তু মাঝেমধ্যে এমন পিচের খবর সংবাদমাধ্যমে আসে, যে পিচঢালাইয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই উঠে যায়! এমনকি সে পিচ ওঠাতে তেমন কসরতও করতে হয় না, আঙুলের খোঁচাই যেন যথেষ্ট। ৩০ জুন সমকালে প্রকাশিত একটি সচিত্র প্রতিবেদন সে কথাই বলছে। 'নির্মাণ শেষ হতেই উঠে যাচ্ছে সড়কের পিচ' শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর একটি সড়কের চিত্র উঠে এসেছে। যেখানে কাজ শেষ হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের পিচ মানুষের হাতের খোঁচায় উঠে যাওয়ার দৃশ্য দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে উঠেছে। এ এক দুঃখজনক চিত্র।
এ চিত্র উপস্থাপনে খবর ও ছবি উভয় মিলে হয়তো পত্রিকার পাতায় অল্প জায়গাই যথেষ্ট; কিন্তু এর পেছনের ঘটনা অত ছোট নয়। স্বাভাবিকভাবেই কতগুলো বিষয় সামনে আসবে। প্রথমত, এক কোটি দুই লাখ টাকা বাজেটের সড়কটিতে সঠিকভাবে ঠিকাদার বাছাই করা হয়েছে কি-না; দ্বিতীয়ত, সড়কের কাজ সঠিকভাবে হয়েছে কি? তৃতীয়ত, পিচ তৈরিতে কেমন সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে! প্রতিবেদন বলছে, মাত্র ২১ জুন সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়। এর মধ্যে ক'দিন যেতে না যেতেই আঙুলের খোঁচায় পিচ উঠে যাচ্ছে! স্বাভাবিকভাবেই ওপরের প্রশ্নগুলো আসছে।
বস্তুত সড়ক নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়টি একেবারে ওপেন সিক্রেট। সড়ক-মহাসড়কের জন্য যত টাকা বরাদ্দ হয়, তার কত অংশ খরচ করা হয়- এ প্রশ্ন অনেকের। বিশেষত গ্রামগঞ্জের সড়কগুলোতে আমরা এমনটা বেশি দেখি। পিচঢালাই দেওয়া সড়ক অন্তত একটা মেয়াদ পর্যন্ত অক্ষত থাকার কথা। অথচ সেটি অনেক আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সেখানে শহরের মতো হয়তো তদারকি কড়াকড়ি নয়। অনেক সময় বিটুমিনের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় পোড়া মবিল- এমন খবরও গণমাধ্যমে এসেছে।
তবে হাজার কারণের মধ্যে বড় কারণটা আমাদের মানসিকতা। অনেকেই হয়তো মনে করেন, সরকারি কাজ মানেই নিজের পকেট ভারী করা। এ জন্য জোর করে প্রভাব খাটিয়ে কাজ বাগিয়ে আনার ঘটনা ঘটে। কম টাকায় নিম্নমানের সামগ্রী কেনা হয়। এভাবে যখন কাজ শুরু হয়, শেষটাও ভালো হয় না। ফলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন।
সংবাদপত্রে সব খবর আসে না। আবার খবরের অন্তরালেও খবর থাকে। কিন্তু সে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন কিংবা কমিটির প্রতিবেদন কিংবা অনিয়মে জড়িতদের শাস্তির খবর আমরা দেখিনি। বিষয়টাতে জোর দেওয়া প্রয়োজন। আমরা মনে করি, মানসিকতা পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই অনিয়ম কমে আসবে। নতুবা আঙুল দিয়ে পিচ ওঠানোর দুঃখজনক এমন খবর বাড়বে বৈ কমবে না।