Mahfuzur Rahman Manik
সোনার ডিমপাড়া হাঁস
জুলাই 27, 2019
হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান যে বিমানের ঘাড়ে, সে বিমানের কর্মীরা কীভাবে ফ্রি টিকিটে দেশে-বিদেশে আরামে ঘোরেন?

কেউ কেউ ফ্রি পেলে নাকি আলকাতরাও খান। আলকাতরার বিষয়টি হয়তো অতিরঞ্জন। কিন্তু ছাড়- একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি কিংবা সুযোগ পেলে মাগনা খাওয়া-নেওয়া ইত্যাদিতে যে আমরা অনেকেই সিদ্ধহস্ত, তা বলাই বাহুল্য। এ তো গেল বৈধ ফ্রির কথা। আবার অবৈধভাবে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিংবা কৌশলেও ফ্রি খাওয়া বা নেওয়ার অপপ্রবণতা রয়েছে অনেকেরই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট নিয়ে এমনটিই ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০১৯) সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম- 'এত ফ্রি টিকিট পান বিমান কর্মীরা!' কতটা পান? প্রতিবেদন বলছে, এক কর্মকর্তাই নিয়েছেন ৮৭টি টিকিট। আরেকজন ৬৮টি। পঞ্চাশের ঘরে আছেন অনেকেই। আরও নিচে তো আছেনই। তাদের অনেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে টিকিটগুলো পেয়েছেন। অনেকে নিজ নামের পাশাপাশি স্ত্রী-পরিজনের নামেও নিয়েছেন। ১০ বছরে প্রায় ৪৫ হাজার টিকিট নিয়ে তারা দেশ-বিদেশ ঘুরেছেন। এর মধ্যে কেউ শতভাগ কমিশনে পেয়েছেন, অন্যরা পেয়েছেন ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কমিশন। কী সৌভাগ্য বিমান কর্মীদের! অথচ আমাদের এ রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা কেবল গত অর্থবছরেই লোকসান গুনেছে ২০১ কোটি টাকা। পবিত্র হজের ২ মাস ছাড়া প্রায় সারা বছরই বিমানকে লোকসান গুনতে হয়। এ বছরের এপ্রিলে সমকালে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- তেলেই ২ হাজার কোটি টাকা বাকি বিমানের। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অনিয়ম আর হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান যে বিমানের ঘাড়ে, সে বিমানের কর্মীরা কীভাবে ফ্রি টিকিটে দেশে-বিদেশে আরামে ঘোরেন? তারা কি কোনো মর্মবেদনা অনুভব করেন না? তাদের কি একটুও বিবেকে লাগে না!

আসলে বিমানকে ডোবাতে দুর্নীতিবাজ ও সুযোগসন্ধানীরা দীর্ঘদিন ধরেই তৎপর। কয়েক মাস আগে সহযোগী সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদন থেকে আমরা জেনেছি- মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে, বিমানের এক কর্মকর্তা টিকিট বিক্রি করে ১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এক কর্মকর্তাই যদি এত টাকা আত্মসাৎ করতে পারেন, সে বিমান কীভাবে লাভের মুখ দেখবে? বিমান যেন তাদের কাছে সোনার ডিমপাড়া হাঁস।

বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সমকালকে বলেছেন, চাকরির প্রকারভেদে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমিশনে টিকিট পেয়ে থাকেন। মানলাম, তাদের কমিশনে টিকিটপ্রাপ্তির নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু একজন কয়টি টিকিট পাবেন? বিশেষ করে একটি প্রতিষ্ঠান যখন দিনের পর দিন লোকসান গুনে যাচ্ছে, ওই প্রতিষ্ঠানে এমন নীতিমালা কতটা যুক্তিগ্রাহ্য? বিমানের প্রয়োজনে কর্মকর্তারা যে সফর করবেন, তার টিকিট বিমান দিতে পারে। কিন্তু লাভজনক হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যে কোনো পরিমাণ কমিশনেই হোক, ফ্রি টিকিটপ্রাপ্তির সুযোগ বন্ধ করা দরকার। বিমান কর্মীরা আন্তরিক হলেই কেবল তা সম্ভব। ইতিমধ্যে যে টিকিট তারা পেয়েছেন, তা থেকেই বিমানের শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে!

রেল, ডাক, বিমান তথা রাষ্ট্রীয় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকেই আমরা লোকসানের মধ্যে দেখছি। এ ক্ষতি বহন করতে হচ্ছে আমাদেরই। এটি দুঃখজনক। সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল- এ যদি হয় আমাদের মানসিকতা, তাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়াবে কীভাবে? আমরা জানি, বিমানসহ সব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সর্বাগ্রে সরকারি কর্মীদেরই আন্তরিক হতে হবে। তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যে একেবারে কম, তাও তো নয়। নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রতি দরদই পারে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে, সামনে নিয়ে যেতে। বিমান কর্মীরা আপাতত নিজের ফ্রি টিকিট সুবিধা বিসর্জন দিয়ে এ দরদটাই দেখাবেন কি?

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।